শীতে চুলের যত্ন নিবেন যেভাবে
শীতে খুশকি হলে
শীতে আমাদের ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়ে যায়। তেমনি মাথার ত্বকেরও আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় আর এতে মাথার ত্বকে মৃত কোষের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এ সময় ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খুশকি সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। খুশকি সমস্যা বেড়ে গেলে অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার চুল পরিষ্কার করতে হবে। গোসল করার আগে মাথার ত্বকে লেবু ঘষে নিতে হবে। এরপর শ্যাম্পু করে নিলে খুশকি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
যখন অতিরিক্ত শীত পরবে
শীতে চুল পরা রোধে করনীয়
শীতে মাথার ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে চুল পড়ার মাত্রা বেড়ে যায়। সাধারণত প্রতিদিন একশটির মতো চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে শীতে এর পরিমাণ বেড়ে যায়। এই মৌসুমে ঘন ঘন চুল আঁচরানোর অভ্যাস পরিহার করুণ। আর উচ্চ তাপে ব্লো ড্রাই করাও উচিত নয় এতে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাদাম তেল কুসুম গরম করে তা চুলের গোড়ায় হালকা হাতে মালিশ করতে হবে। একটি গরম তোয়ালে দিয়ে পুরো চুল পেঁচিয়ে রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
শীতে কি ধরনের তেল ব্যবহার করা উচিৎ
শীতে অনেকের চুল পড়তে দেখা যায়। এই চুল পড়া রোধে তেল ও ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে হালকা গরম করে নিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তাতে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ভেঙে মিশিয়ে চুলে লাগান।
শীতে চুলের ম্যাসাজ
শীতের দিনগুলিতে সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে হট অয়েলের ম্যাসাজ। নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, বাদাম তেল বা যেকোনো চুলে লাগানোর তেল হালকা গরম করে নিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে করে লাগান। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
হারবাল সামগ্রী ব্যবহার
শীতের দিনে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মাথার ত্বক ময়েশ্চার হারায় ফলে কম বেশি সবাই এই সময়ে খুশকির সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আধা কাপ অলিভ অয়েল হালকা গরম করে এর সাথে এক ফালি লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। ৪৫ মিনিট রেখে হালকা কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার এভাবে চুলের যত্ন নিন।
শীতে চুল ধোয়ার নিয়ম
চুল ধোওয়ার সময় সাবধান শীতকালে গরম জলে চুল ধোবেন না, কারণ গরম জল চুলের ময়েশ্চার শুষে নেবে।
শীতে চুল রুক্ষ হলে
শীতে বেশীর ভাগ মানুষের চুল রুক্ষ আর শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই রুক্ষ এবং নিষ্প্রাণ চুলের জন্য আধা কাপ পালং শাক, ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল নিয়ে ব্লেন্ডারে ভালো মতো ব্লেন্ড করুন। এরপর এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুলে সিল্কি ভাব আসবে ও চুল হবে মসৃণ প্রাণবন্ত।
শীতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের নিয়ম
শীতের সময়ে গোসলের পর চুল শুকোতে অনেক সময় লেগে যায়, আবার ভেজা চুল নিয়ে বাইরে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই গোসলের পর তোয়ালেতে সব টুকু পানি মুছে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে মাঝে মাঝে চুল শুকাতে পারেন। হেয়ার ড্রায়ার সবসময় কম তাপমাত্রায় ব্যবহার করুন।
চুলের কন্ডিশনিং
শীতে চুলের সব চেয়ে জরুরী হলো কন্ডিশনিং। অনেকেই শ্যাম্পু করার পরে কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না। চুলের বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য কন্ডিশনার অতি জরুরী। শীতে এমনিতেই চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। কাজেই শ্যাম্পু করার পরে অবশ্যই ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
শীতের খাদ্যাভ্যাস
শীতের দিনে চুল রুক্ষ হয়ে ফেটে যাওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা। তাই চুলে কোন রকমের ফেটে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলেই দেরি না করে চুল ছেঁটে নিন।
খাদ্যাভ্যাস একটা বড় ভূমিকা পালন করে চুলের সুরক্ষায়। তাই প্রচুর পানীয় গ্রহণ করা উচিত। বেশি করে পানি ও ফলের রস খান। পাকা পেঁপের রস চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।শীতকালীন ফল, সবজি ও পানির অংশ বেশি এমন খাবার যেমন লাউ, শশা বেশি করে খান।
শীতের ডায়েট
সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিজেকে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ফল খেতে হবে। ডায়েট এ রাখতে হবে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। তাহলে চুল থাকবে সুস্থ ও প্রানবন্ত।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভালো করে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে শোওয়া দরকার। এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ভালো হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়লে চুল পড়া কমবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে।
চুলে সূর্যের আলো লাগান
চুলে সূর্যের আলো লাগান। কেননা সূর্য থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি মাথায় রক্ত চলাচলেও উন্নতি ঘটায়। এছাড়া চুলের এই যত্নগুলোর পাশাপাশি খান সুষম খাদ্য ও পচুর পরিমাণে পানি।
চুলের যত্নে প্যাক
সপ্তাবে অন্তত ব্যাকদিন চুলে প্যাক লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যায়। রুক্ষ চুলের জন্য সবচেয়ে চিকন উপকারী বলো কলা ও মধুর তৈরি প্যাক। এই প্যাক চুলকে নরম ও মসৃণ করবে। তবে এই প্যাক কখনোই মাথার তালুতে লাগাবেন । তাবলে চুল ঝরে পড়ার বার বেড়ে যেতে পারেনা।
ভেজা চুল
ভেজা চুল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হবেন না। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় চুলের ক্ষতি হতে পারে।
চুলের পরিচ্ছন্নতায়
শীতকালে চুল নিয়মিত পরিষ্কার করতে শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে রাহিমা সুলতানা ভেষজ উপাদান বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন।রাতে রিঠার খোসা টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেটা ভালোভাবে চটকে ছেঁকে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল ঝরঝরে হয়ে উঠবে। মুলতানি মাটি ১০০ গ্রাম একটা পাত্রে নিয়ে দুই ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিজেই তৈরি করতে পারেন ঘরোয়া শ্যাম্পু। পানিতে ফুলে ওঠা মুলতানি মাটি ভালোভাবে পেস্ট করে ব্যবহার করুন শ্যাম্পু হিসেবে। শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে বেসনও ব্যবহার করতে পারেন। বেসন পানিতে গুলে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে মাথায় লাগান। ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। শিকাকাই ২৫ গ্রাম আধাভাঙা করে এর সঙ্গে ২৫ গ্রাম আমলকী মিশিয়ে ৫০০ মিলি পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ছেঁকে শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সরষের খৈল চুলের জন্য খুব ভালো শ্যাম্পু। খৈল রাতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ছেঁকে চুল ধুয়ে নিতে পারেন। শ্যাম্পুর পাশাপাশি কন্ডিশনার হিসেবেও ভেষজ উপাদান বেছে নিন। কন্ডিশনার হিসেবে চায়ের লিকার খুবই উপকারী। এ ছাড়া শ্যাম্পুর পর লেবুর পানি ও কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
নারিকেল তেলের সাথে এভোক্যাডো
২ টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সাথে এভোক্যাডো আর কলা মিশিয়ে নিন। সবচেয়ে ভালো হয় এগুলো ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিলে। এরপর চুলে দিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। ১ ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ভালো। এভোক্যাডো তে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ডি যা আপনার চুলের জন্য উপকারী। তাছাড়া চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতেও এটি অনেক সাহায্য করে। এভোক্যাডো আগোরা, নন্দন, মিনা বাজারে পেয়ে যাবেন।
সকালে বের হওয়ার আগে
সকালে বের হওয়ার আগে আপনি রুক্ষ চুল নিয়ে বের হতে চাচ্ছেন না আবার তেল দিয়ে চুল চিপচিপে করেও বের হতে চাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে খুব সহজ একটি সমাধান আছে। একটি স্প্রে বোতলে সমপরিমাণ পানি আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এরপর আপনার চুলের উপর ২ বার স্প্রে করে নিশ্চিন্তে বের হয়ে যেতে পারেন। এতে আপনার চুল খুব রুক্ষ হয়েও থাকবেনা আবার তেল চিপচিপে হয়েও থাকবেনা। চুলের ময়েশ্চারের মাত্রাও ঠিক থাকবে। ফলে চুল দুর্বল হবে না।
Comments
Post a Comment