শীতে মেয়ে ও ছেলের ত্বকের যত্ন
যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত তারা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এক্ষেত্রে টমাটোর রস খুব কার্যকর। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুস পাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
শুষ্ক ত্বকের অধিকারি যারা
শুষ্ক ত্বকের প্রধান কাজ হল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখা। ভিটামিন-ই অয়েল ১/২ চামচ, ১/২ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ অলিভ অয়েল ও গোলাপজল মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ মি. রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
যাদের মিশ্র ত্বক
প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সিদ্ধ করা মিষ্টি কুমড়ো চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণ মতো মিশিয়ে ২০ মি. রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
শীতে ঠোঁট ফাটা রোধ ও জত্ন
ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট বারবার ফেটে যায়। কখনো এতটাই ফেটে যায় যে চামড়া উঠে আসে ও রক্ত বের হয়। কখনোই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়।
কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ঠোঁটে হালকা করে তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর ভেসলিন বা গ্লিসারিন পাতলা করে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটের জন্য ভালো কোনো প্রসাধনী ব্যাগে রাখুন এবং দিনে তিন-চারবার লাগাতে পারেন।
শীতের সময় চুলের জত্নে করনীয়
শীতের সময় চুলে খুশকির উপদ্রব বেড়ে যায়। খুশকিমুক্ত থাকতে নিয়মিত সপ্তাহে দুই দিন কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
হাতের তালুর খসখসে ভাব দূর করবেন যেভাবে
এ সময় ১০ ভাগ ইউরিয়া, ভেসলিন লাগালে হাতের তালু অনেকটা মসৃণ হয়ে আসে। শীতে অনেকের পায়ের তলা ফেটে যায়।
৫ ভাগ সেলিসাইলিক অ্যাসিড অয়েন্টমেন্ট অথবা ভেসলিন নিয়মিত মাখতে পারেন।
শীতের দিনে গোসলের নিয়ম
গোসলের সময় দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করবেন না কিংবা গরম পানি ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলো ত্বকের শুষ্কতা আরো বাড়িয়ে তোলে। গোসলের পরে ত্বকে ভেজা ভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। হাতে, পায়ে, মুখে এবং পুরো শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুমাতে যেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ত্বক একেবারে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ময়েশ্চারাইজার মাখলে কাজ হবে না। ত্বকে ভেজাভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে।
শীতে গোসলের সময় সাবান কম ব্যবহার করাই ভালো। কারণ সাবান ত্বকে শুষ্কতা সৃষ্টি করে। সুতরাং গোসলে কিংবা হাত-মুখ ধুতে সাবান যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করবেন। এ সময় সাধারণত গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করাই উত্তম।
শীতে কি ধরনের সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করবেন
রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ক্রিম মেখে বের হতে হবে। শীতের রোদ মিষ্টি আমেজ সৃষ্টি করলেও ত্বকের জন্য তা ক্ষতিকর। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের সমূহ ক্ষতি করে। ত্বকের ক্যান্সার ঘটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই ত্বককে রক্ষা করতে হলে সানপ্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর বা এসপিএফসমৃদ্ধ ক্রিম মেখে বের হওয়াই মঙ্গলজনক। বিভিন্ন মাত্রার এসপিএফসমৃদ্ধ ক্রিম বা লোশন রয়েছে। তবে গবেষকদের মতে এসপিএফ-১৫ সমৃদ্ধ ক্রিম ত্বকের জন্য নিরাপদ।
শীতে ব্যবহারের উপযোগী ফেসপ্যাক সমুহ
গরমের দিনে যেসব অয়েল কন্ট্রলিং ফেসপ্যাক ব্যবহার করেছেন, শীতে সেগুলো ব্যবহার করা যাবেনা একদমই। তাহলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ফেটে যাবে। ত্বকে ব্যবহার করুন এমন ফেসপ্যাক যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও ত্বক নরম ও কোমল রাখতে সাহায্য করবে।
শীতে সব ধরনের ত্বকের উপযোগী কিছু ফেসপ্যাকঃ
পাকা কলার পেষ্ট+মধু+আমন্ড অয়েল
পাকা পেঁপে+মধু+টক দই
কোকো পাউডার+টক দই+মধু
শীতের দিনে ময়েশ্চাইরেশন ব্যবহারের নিয়ম
শীতে ত্বক সুরক্ষার প্রধান উপায় হলো ত্বকের পর্যাপ্ত ময়েশ্চাইরেশন। শীতের শুষ্কতা ত্বক থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়। ফলে ত্বক হয়ে পরে শুষ্ক ও রুক্ষ। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে গোসল /মুখ ধোয়ার পর ভেজা ভাব থাকতেই ত্বকে লাগান ক্রিম /লোশন। ওয়াটার বেসড ক্রিম /লোশনের বদলে বেছে নিন অয়েল বেসড ক্রিম/লোশন।
রাতে ত্বকের বাড়তি সুরক্ষায় করুন ডিপ কন্ডিশনিং। আপনার পছন্দের যেকোনো তেল যেমন আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েলের সাথে মেশান ভিটামিন ই অয়েল (ভিটামিন ই ক্যাপসূল আকারে ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়)। একসাথে মিলিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন। আমন্ড অয়েল /অলিভ অয়েল ও ভিটামিন ই ত্বক নরম রাখতে ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শীতে মেক-আপ এর নিয়মাবলি
শীত হলো মেক-আপ করার আদর্শ সময়। কারণ শীতে মেক-আপ গলে তেল চিটচিটে হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। এই শীতে গাঢ় আর কালারফুল মেক-আপে সাজিয়ে তুলুন নিজেকে। তবে মেক-আপ করার আগে ত্বকে পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না আর গরমে ব্যবহার করা ম্যাট ফাউন্ডেশনের বদলে ব্যবহার করুন অয়েল বেসড ফাউন্ডেশন। লিপস্টিকের বদলে লাগান লিপগ্লস।
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় যা যা করা যাবে
শীতের শুষ্ক আবহাওয়া শরীর থেকে পানি শুষে নেয়। তাই ভেতর থেকে শরীরকে আর্দ্র রাখা খুব জরুরী। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
খাদ্য তালিকায় যোগ করুন শীতের ফলমূল ও সবজি – টমেটো, গাজর, ফুলকপি, কমলা এগুলো ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
যা যা করা যাবেনা
ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলী /ভ্যাসলিন না লাগানোই ভালো। দীর্ঘদিন ব্যবহারে ঠোঁট কালো করে ফেলে।
যতই আরাম লাগুক অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল না করাই ভালো। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পরে। করতে চাইলে গরম পানিতে আপনার পছন্দের তেল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিন।
এই শীতেও থাকুন সজীব ও উজ্জ্বল। উপভোগ করুন শীতকে।
শীতে ছেলেদের ত্বকের জত্ন
চলছে শীতের আনাগোনা। এই সময়ে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের ত্বকও হয় ভীষণ রুক্ষ। বিশেষ করে গোসলের পর ত্বক হয় খসখসে। ফলে ত্বকে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। এমনকি এই সময়ে নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নিলে চোখের নিচে কালো দাগ, চামড়ায় ফাটলসহ নান চর্মরোগের সৃষ্টি হয়। আর এসব সমস্যা থেকে থেকে রক্ষা পেতে হলে সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয়। শেভ করার পর ত্বকে ক্রিম লাগানো যেতে পারে। এতে করে ত্বকে ফাটল ধরবে না।ছবি সংগৃহীত
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বাজারে ছেলেদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ও লোশন রয়েছে। তবে যাচাই-বাছাই করে ত্বকের জন্য সঠিক ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। কারণ, প্রসাধনীর মান ভালো না হলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। ছেলেদের ত্বকের যত্নে তাদের পরামর্শ হল-
১. গোসলের পানি: খুব বেশি গরম জল ব্যবহার করা যাবে না। অল্প সময় নিয়ে কুসুম গরম জলে গোসল করতে হবে।
২. ক্রিম, লোশন, সাবান: সব ধরনের প্রসাধনীই বাড়তি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হতে হবে। শেভ করার পর ত্বকে ক্রিম লাগানো যেতে পারে। এতে করে ত্বকে ফাটল ধরবে না।
৩. রোদ: যারা রোদে বেশি থাকেন, তারা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
৪. গোসলের পর করণীয়: গোসলের পর লোশন লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। সেটি যেন ত্বকে ভালোভাবে মিশে যায়। তারপর বাইরে বেরোতে হবে।
৫. ব্রণ এড়াতে: তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি ওঠে। এছাড়া ধূলাবালির কারণে ছেলেদের ত্বক বারবার পরিষ্কার করতে হয়। ছেলেদের অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ (ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে রাখে এমন) ব্যবহার করা উচিত। তাহলে ত্বক ভালো থাকবে।
৬. ক্রিম ব্যবহারে করণীয়: বাজারে ছেলেদের জন্য নানা ব্র্যান্ডের ক্রিম পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। তা নাহলে ক্রিম কাজ করবে না। এছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে ম্যাসাজ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বক ঠান্ডা থাকে এবং ব্রণ ওঠে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
৭. ত্বকের যত্নে ভেষজ: অবসর পেলে ভেষজ কোনো প্যাক লাগানো যেতে পারে। যারা প্যাক লাগাতে চান না, তারা কমলালেবু কিংবা পাকা টমেটো মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক পরিষ্কার হবে।
৮. পানি: ত্বকের যত্নের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
৯. তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে: যতটা সম্ভব কম রাত জাগা উচিত।এতে ত্বক ভালো থাকে।
১০. শাকসবজি: খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে প্রতি বেলাতেই শাকসবজি রাখতে হবে।
১১. ফল : দিনে একটি হলেও ফল খেতে হবে এবং শুকনো খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে।
১২. ফেসিয়াল: ত্বকের যত্নের জন্য মাসে অন্তত দু’বার ফেসিয়াল করা যেতে পারে।
শীতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিবেন যেভাবে
সময়টা শীতকাল। মাথায় আছে নিশ্চয়ই। অবশ্য না থেকে উপায়ই বা কী? রুক্ষ চুল, শুষ্ক ত্বক আর ফেটে যাওয়া ঠোঁটের দিকে তাকালে কি আর শীতকালটাকে ভুলে থাকার উপায় আছে? যদিও সারা দিনে আবহাওয়া কোনো লুকোচুরি খেলে না, তার পরও শীতের শুষ্কতা আর ধুলোবালির উপদ্রবে ত্বকের দফারফা। দরকার তাই বাড়তি খেয়াল আর আলদা ভালোবাসা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত যত্নের বিস্তারিত জানিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল। ফারজানা শাকিলের মতে, এ সময়ে সারা দিনের কিছুটা সময় আলাদা করে রাখা উচিত নিজের জন্য। সেটুকু সময়ের পুরোটা জুড়ে থাকবে ত্বকের যত্ন। যত্নের বেলায় খেয়াল রাখতে হবে, মাথার ত্বক, চুল, হাত-পায়ের ত্বক আমাদের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গ। নিজেদের প্রতি আমরা সব সময় যত্নবান না হওয়ার ফলে এগুলোর দিকেও বিশেষ খেয়াল করা হয় না, যা একদম ঠিক নয়।
চুল তার কবেকার...
কার না ইচ্ছা হয় পিঠজোড়া দীঘল চুলের। অনেকের তা আছে, অনেকের নেই। যাদের আছে তারা ভাগ্যবান বটে। তবে নেই যাদের তারাও পারেন যত্নে যত্নে চুলকে সুন্দর করে তুলতে। শীতকালে যত্ন বেশি দরকার এ কথা বুঝে নিলে চাপটা আপনাতেই কমে আসে। শীত বলে অনেকেই প্রতিদিন গোসলটা এড়িয়ে চলেন। এটা ঠিক নয়; বরং বৈরী আবহাওয়ায় এ সময় প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা চায় ত্বক। প্রতিদিন গোসল না করার ফলে চুল হয়ে পড়ে অনুজ্জ্বল ও ময়লা। তাই নিতান্তই অসুবিধা না হলে প্রতিদিন চুল পরিষ্কার করা একান্ত জরুরি।
চুলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তেল লাগাতে হবে। মাথার ত্বকে ঘষে ঘষে তেল লাগানো ভালো। তেল মূলত চুলের গোড়ার ময়লা নরম করে তুলে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের রক্ত চলাচল তেল লাগানোর ফলে স্বাভাবিক থাকে। তেল লাগানোর আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা পর আগে চুল একবার ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিয়ে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগাতে হবে।
তৈলাক্ত চুলে তেলহীন শ্যাম্পু ও শুষ্ক চুলে প্রোটিনযুক্ত শ্যাম্পু লাগাতে হবে। কন্ডিশনার লাগাতে হবে চুলের উপরিভাগে। গোড়ায় লাগানো ঠিক নয়। এতে খুশকির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চুল ধোয়ার সময় প্রচুর পানি ব্যবহার করা উচিত। চুলের যত্নে বাড়িতে লাগানো যেতে পারে হাতে তৈরি প্যাক।
পাকা কলার সঙ্গে টকদই, মধু, আমলা গুঁড়ো, শিকাকাই গুঁড়ো, মেথি গুঁড়ো, খানিকটা মেহেদি গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে মাথার পুরো চুলে লাগাতে হবে। এখানে মনে রাখা জরুরি, গোড়ায় প্যাক লাগানো ঠিক না। পুরো মাথায় প্যাক লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। মুখ তার শ্রাবন্তীর কারুকার্য... মুখে নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে এমনিতেই মুখের ত্বকের আলাদা যত্ন প্রাপ্য। তবু শীতে মুখের সঙ্গে সঙ্গে হাত ও পায়ের ত্বকের প্রতিও বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। শীতে ত্বকের উপরি ভাগে খড়খড়ে একটা ভাব চলে আসে। কারও বা ছোপ ছোপ কালো দাগ পড়ে। সাদা ফুসকুড়িও দেখা যায় এ সময়। নিয়মিত তাই ত্বক পরিষ্কার রাখতে হয়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। যতবার পারা যায়, পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। যাদের মুখের ত্বক স্বাভাবিক তারা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। তবে যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা বেসন বা মসুর ডাল বাটা দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে এবং অবশ্যই টোনার লাগাতে হবে। বাইরে বেরোনোর আধঘন্টা আগে সানগার্ড বা সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে। এ সময় মুখে শুকনো মেকআপ সামগ্রীর বদলে তরল সামগ্রী ব্যবহার করা ভালো। মেকাআপের আগে ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত। শীতকালে প্রচুর সবজি পাওয়া যায়। যকন যেটা হাতের কাছে থাকে, তা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা ত্বকে দিলে ত্বক আরাদা যত্ন পায়। পাকা পেঁপে চটকে বা আপেল-কমলার রস খানিকটা ত্বকে মাখা যায়। মসুর ডাল বাটার সঙ্গে কমলার খোসা বাটা, আমন্ড বাটা, একটু কাঁচা হলুদ বাটা এবং মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে। ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। হাত ও পায়ের ত্বকের যত্নে ম্যানিকিওর এবং প্যাডিকিওর সুরক্ষার কাজ করে। হাতের ত্বকে ব্যবহৃত হয় ম্যানিকিওর পদ্ধতি। বাড়িতে বসে ম্যানিকিওর করতে চাইলে প্রথমে নখে নেইলপলিশ থাকলে তুলে নিতে হবে। এরপর নেইলকাটার দিয়ে নখ কেটে ফাইলার দিয়ে ইচ্ছেমতো নখের আকৃতি করে নিন। একটি বড় বাটিতে কুসুম গরম পানিতে হালকা শ্যাম্পু গুলে হাত ভিজিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। হাত তুলে নখের ওপর ভ্যাসলিন বা গ্লিসারিন দিয়ে চেঁছে ময়লা তুলে নখকে উজ্জ্বল করে তুলুন। এরপর হাত পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। পায়ের ত্বকের যত্নে একই পদ্ধতি কার্যকর।
তবে পায়ের গোড়ালি ঝামা দিয়ে ঘষে মরা কোষ তুলে নিতে হবে। প্রতিদিন ঘুমানোর সময় দুই ভাগ গ্লিসারিনের সঙ্গে এক ভাগ গোলাপ জল মিলিয়ে পুরো ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। সম্ভব হলে পায়ে মোজা পরা ভালো। পিঠের ত্বকে অ্যাপ্রিকট সাল (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়), যা কিনা দানাদার, গুঁড়ো করে ময়দা, তেল ও বেসনের সঙ্গে পেক্ট করে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঘষে তুলে ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া পুরো শরীরের ত্বকে লাগাতে হলে চিনি, লবণ ও ময়দার মিশ্রণ লেবুর রসে পেস্ট করে লাগালে একই রকমভাবে স্ক্রাবিংয়ের কাজ করবে। ঠোঁটের ব্যাপারে হতে হবে বেশি যত্নশীল। পেট্রোলিয়াম জেলি (ভ্যাসলিন) বা গ্লিসারিন লাগিয়ে ঘুমুতে যাওয়া ভালো। শুষ্ক লিপস্টিক এড়িয়ে চলা উচিত।
জেনে নিন কোন ত্বকের কি ধরনের জত্ন
কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাস ইতোমধ্যেই জানান দিয়েছে শীতের আগমনী বার্তা। ঋতু পরিবর্তনে তাই শুরু হয়েছে ত্বকের নানা সমস্যা। এ সময় ত্বক রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল হয়ে যাওয়ায় দরকার একটু বাড়তি যত্নের। নিয়মিত যত্নে শীতেও ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
জেনে নিন শীতে কোন ধরনের ত্বকে কেমন যত্ন নিবেন:
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত তারা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এক্ষেত্রে টমাটোর রস খুব কার্যকর। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুস পাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন
শুষ্ক ত্বকের প্রধান কাজ হল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখা। ভিটামিন-ই অয়েল ১/২ চামচ, ১/২ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ অলিভ অয়েল ও গোলাপজল মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ মি. রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
মিশ্র ত্বকের যত্ন
প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সিদ্ধ করা মিষ্টি কুমড়ো চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণ মতো মিশিয়ে ২০ মি. রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
এছাড়া ত্বকের যত্নে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারেন:
নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করুন
শীতে ত্বকের যত্নের শুরুতে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। বাজার থেকে বাদাম তেল বা এভাকাডো সম্বৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার কিনুন। এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন অন্তত দুবার অথবা যতবার ত্বক শুষ্ক মনে হবে ততবার ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। আর্দ্রতা বজায় রাখুন শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মাঝে মাঝে মুখে পানির ঝাপটা দিন। তাহলে সহজে ত্বক শুষ্ক হবে না। অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হয়। গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোটা জোজোবা বা বাদাম তেল দিয়ে নিলে তা ত্বককে আর্দ্র এবং মসৃণ করতে সহায়তা করে। ভেজা ত্বকে পরিচর্যা করুন গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ঠোঁটের পরিচর্যা কখনোই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিৎ নয়। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট কখনোই ফেটে যাবে না। চুলের যত্ন শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে মাথার ত্বকেও এর প্রভাব পড়ে। এজন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে হবে। আমলকীগুঁড়া, হরীতকীগুঁড়া, বহেরাগুঁড়া, মেথিগুঁড়া, ব্রাহ্মিগুঁড়া, হেনাগুঁড়া, ডিমের সাদা অংশ, টক দই, পানি একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে আধা ঘণ্টা মেখে পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং খুশকি দূর হবে। হ্যাট পরুন চুল এবং মাথার তালুর আর্দ্রতা ধরে রাখতে হ্যাট পরুন। তবে হ্যাটটি যাতে বেশি টাইট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন। হাত ও পায়ের যত্ন হাত এবং পায়ের আর্দ্রতা ধরে রাখতে যতবার প্রয়োজন ততবার লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। রূপচর্চার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত খাবারের প্রতিও। সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়া শরীরের ভেতরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রচুর পানি পান করুন।
Comments
Post a Comment