প্রবাসিদের কষ্টের গল্প
প্রবাস জীবনের এক অসমাপ্ত গল্প শুনুন
প্রবাস জীবন মানেই কষ্টের । তারপরও কিছু কিছু কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা থাকেনা । এমনি এক অসহনীয় কষ্টের কাহিনি আপনাদের জন্যঃ
জীবনের আর্ধেকটা সময় প্রবাসে চলে গেল। আমার মা বাবা,ভাই বোন, বউ বাচ্চা সবাই বলে আমি নাকি সফল প্রবাসি, আমার পরিবার নাকি গর্ব করে আমাকে নিয়ে। আমার বাবা তো প্রায় বলে আমি নাকি তার সেরা সন্তান । আগে পরিবারের কথা শুনে খুব ভাল লাগত।
নিজেকেই সুখি মনে করতাম কিন্তু এখন কেন জানি আর এই সব কথা শুনতে ভাল লাগে না খুব বিরক্ত লাগে। আর বিরক্ত লাগার কারন হলো বয়সের ভার, যাই হোক এখন ভাবতাছি দেশে চলে যাবো, দেশে গিয়ে ব্যবসা করবো যে ২৫ লক্ষ টাকা আছে সে গুলো দিয়ে। বারি ঘর তো সবাই করলাম। এখন যে টাকা গুলো আছে সেগুলো দিয়ে কিছু একটা করে পরিবারের সাথে থেকে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেব।
হটাৎ একদিন বাবা বললো বাড়িতে বিল্ডিং তোলার জন্য। আমি বললাম বিল্ডিং তোলার টাকা কই পাবেন। তখন বাবা বললো কেন ব্যাংকে যে টাকাগুলো আছে । ব্যাংকের টাকা গুলো না হলে কয়েক লাখ টাকা ঋন করবো , তুই মাসে মাসে ঋন শোধ করবি। আমি বললাম না বাবা বিল্ডিং তোলার দরকার নাই। যদি বিল্ডিং তুলেন তাহলে যে আমার বাকি জীবনটাই প্রবাসে কাটাতে হবে। তখন বাবা বললো আমার অনেক দিনের ইচ্ছে বিল্ডিং ঘুমাবো ।
এদিকে বউ একই কথা বলছে। মা ও বলছে পাশের বাড়ি অনেকই বিল্ডিং তুলছে তুই কেন তুলবি না। আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বাড়ি সবাই বলছে বিল্ডিং তুলতে। বিল্ডিং তুললে নাকি সমাজে মানুষের কাছে দাম পাওয়া যায়। সমাজে বড় লোক হিসাবে পরিচিত হওয়া যায়। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলে না।
এদিকে আমার কষ্টটা কেউ বুঝলো না। আমি জানি বিল্ডিং তুলে আমার আরো ১০ বছর প্রবাসে থাকতে হবে। কারন যে টাকা গুলো আছে তা বিল্ডিং তুলতে খরচ হয়ে যাবে। ছেলেমেয়েদের ভবিষৎতের জন্য বাকি জীবনটা প্রবাসে কাটাতে হবে। কিন্তু এই প্রবাস জীবন টা আমার আর ভাল লাগে না। আজ আমি অনেক ক্লান্ত, বয়সের ভারে শরীলের শক্তিগুলো প্রতিনিয়তো ঝড়ে পরছে। এখন আর আগের মত কিছু ভাল লাগে না।
যখন বাড়িতে বললাম আমি দেশে চলে আসব। তখন আমার কথা শুনে সবাই অভাগ হয়ে গেল। হাজারটা প্রশ্ন কেন দেশে আসবো। দেশে এসে আমি কি করবো এমন হাজারটা প্রশ্ন। আমার বাবা তো বলে ফেললেন আমি নাকি দেশে এসে কিছু করতে পারবো না। দেশের অবস্তা নাকি ভাল না,আর আমার দ্বারা দেশে ব্যবসা করাটা অসম্ভব। আমার বউ বলে দেশে এসে কি করবেন বিদেশ আছেন ভাল আছেন।
এখন দেশের ব্যবসা – বানিজ্য ভাল না। নিজের সন্তানদের ভবিষৎতের কথা চিন্তা করে হলে ও বিদেশ থাকতে হবে। বাবা আর বউয়ের কথা শুনে অনেক কষ্ট পেলাম। যে আমি প্রবাসে কাটিয়ে দিলাম এতটা বছর। প্রবাসে প্রতিটি দিনই করতে হয়ে যুদ্ধ। আর সে আমি নাকি দেশে গিয়ে কিছু করতে পারবো না।
সবাইকে বললাম কেউ আমার কথা বুঝল না। সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেলাম মা র কথা শুনে মা বলে, বাবারে তোর মত সহজ সরল মানুষেরা দেশে এসে কিছু করতে পারবি না। এই দেশটা ভাল মানুষের জন্য নয়। যতদিন বিদেশে থাকতে পারিস ততদিন ভাল থাকবি। অথচ এই আমি অপরিচিত দেশে ভিন্ন ভাষা মানুষের সাথে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলাম। একজন সফল প্রবাসী বটে। অনেক টাকা পয়সা রোজগার করলাম।
এই আমি নাকি নিজ দেশে গিয়ে কিছু করতে পারবো না। খুব জানতে ইচ্ছে করে যারা দেশে আছে তারা কি বেঁচে থাকে না। তারা কি না খেয়ে থাকে। হয়তো তাদের সংসারে বিলাসিতা নেই দামি দামি খাওয়া, দামি পোশাক। তবু তো তারা বেঁচে থাকে। হয়তো দেশে থাকলে জীবন যুদ্ধটা একটু কঠিন। আমার সবকিছু ভুলে মেনে নিলাম পরিবারের সিদ্ধান্তকে।
কারন বাঙ্গালিরা পরিবারবিহীন থাকতে পারে না। কিন্তু কেন আপন মানুষগুলো এত স্বার্থপর হয়। আমিতো চেয়ে ছিলাম বাকি জীবনটা ছোট একটা ঘর তুলে বউ বাচ্চা, মা বাবাকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব। আমার চাওয়াগুলো কেন প্রিয় মানুষগুলো বুঝে না। আজ যে আমি অনেক ক্লান্ত । আমি যে পারছি না বয়সের ভারে জীবনটাকে চালিয়ে নিতে।
আমি জানি না আরও কত বয়স প্রবাসে কাটাতে হবে হয়তো মৃত্যু অব্দী, আর তা যদি হয় আফসোস নেই। আমি ও চাই যেন আমার মৃত্যুটা একজন সফল প্রবাসী হিসেবে এই প্রবাসেই হয়। আর তখন পরিবার, সমাজ, দেশ আমাকে একজন সফল প্রবাসী হিসাবে গর্ব করব। গল্পটা এখানে সমাপ্তি হলে ভালই হতো। কিন্তু প্রবাসীদের একটি গল্পের পর অরেকটি গল্প শুরু হয়। আর এই গল্পের সমাপ্তি করতে গিয়ে জীবন থেকে চলে যায় অনেক গুলো বছর। প্রবাসিদের শুধু টাকা উপার্জন কারী রোবট না ভেবে পরিবারের একজন ভাবি।
ব্যর্থ প্রবাস জীবনের গল্প
২০০৫ সালে ছিলাম বাবা মায়ের বেকার সন্তান। ৫ ভাইবোনের সংসার আমাদের। অভাবের সংসারে ক্ষনে ক্ষনে বুঝতে পারছিলাম বাবা মায়ের সংসারের বোঝা ছিলাম আমি। অনেক কষ্ট আর ঋন করে পারি দিলাম মরুদেশ কুয়েতে। দীর্ঘ ৭ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দিলাম সংসারের ঘানি টানতে টানতে। এক কথায় সংসারের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিলাম নির্লজ্জ অসহায় হয়ে প্রবাসের মাটিতে। নিজেকে অমানুষ মনে করে যেকোন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করি নাই কখনো। সংসারের সুখের পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে ৩৪ বসন্ত শেষ হলো বুঝতে পারিনি।
যৌবনে বাতাস এসে বার বার মনে করে দিত যৌবনের সুখে হারিয়ে যেতে। তাই দীর্ঘ ৭বছর পর যৌবনের ডাকে সারা দিতে দেশে গেলাম। বিয়ে সব কাজ ঠিকঠাক করে রাখলো বাবা মা। মেয়ে ও ঠিক করে রাখলো।
মেয়েকে আগে থেকে চিনি বলে আমার এ আপত্তি ছিল না। বিয়ে ৩দিন আগের রাতে পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে মিটিং এ বসল। প্রথমে বাবা বলল বিয়ের সব আয়োজন করতে ৬লক্ষ টাকা লাগবে। তখন বাবা বললো আমাকে টাকা দিতে।বাবার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। মনে হলে আকাশটা ভেঙে মাথার উপর পড়ল। বাবাকে বললাম আমার কাছে টাকা নাই।
যা টাকা বেতন পেতাম সবাইতো আপনাকে দিয়েছি মাসে মাসে। বাবা সহ কেউ আমার কথা বিশ্বাস করলো না। বাবা রেগে সরাসরি বললো টাকা দিলে বিয়ে হবে নয়তো সে কালকে বাড়ি থেকে চলে যাবে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । দুচোখে অন্দকার দেখতে লাগলাম। বাড়ি চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে গেল। আমি সবাইকে বার বার বলে কেউকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না আমার কাছে টাকা নাই। বিয়ে না হলে মান সম্মান বলতে কিছু থাকবে না,সেই চিন্তা সারা রাত অনিদ্রায় কাটিয়ে দিলাম।
সকালবেলায় না খেয়ে এক বন্দুর বাড়ি গিয়ে বন্দুকে সব খুলে বললাম। বলার পর ১লাখে বছরে ৩০হাজার টাকা সুদে ৪লাক্ষ টাকা ঋন নিলাম বাকি ২লক্ষ টাকা প্রবাসি বন্দুদের থেকে ধার নিয়ে বাবাকে দিলাম। তো বাবা টাকার কথা সব খুলে বললাম কিভাবে জোগার করলাম। বাবা আমার কথার কোন উত্তর দিল না। অবশেষে অনেক জামেলার পর বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিয়ে প্রথম ক’মাসে আল্লাহ রহমতে বাবা হব খবরটা পেলাম,তাই ছুটির ৩মাস বাকি থাকতে আবার চলে এলাম কুয়েতে। এসে শুরু করলাম দিনরাত কাজ।
নিজেকে বিলিয়ে দিলাম কাজের মধ্যে। ঋন যন্তনায় ঘুম আসতো না,কখন শেষ হবে ঋন। আর ক্ষনে ক্ষনে বুঝতে পারলাম ঋন থাকলে প্রবাস জীবনটা যে কত যন্তনার আর কষ্টের। মাসে মাসে যা বেতন পাই সবই ঋন দেই। আগের মত টাকা বাড়িতে দিতে পারি না বলে বাড়ি সবাই আমাকে সন্দেহ করতে লাগলো। আর বলতে শুরু করল আমি বেতনের সব টাকা শ্বশুর বাড়িতে দেই। এই নিয়ে শুরু হলো শ্বশুর বাড়ি লোকদের সাথে আমাদের বাড়ির ঝগড়া। ঝগড়ার কারনে আমার মেয়েকে আর বউকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আমি বাবাকে আগেই বলছি আমার ঋনের কথা কেউ আমাকে বিশ্বাস করেনি,কি ছিল আমার ভুল? কি ছিল আমার অপরাধ?
যে ভুলের কারনে আজ একা একা জ্বলছি দূরপ্রবাসে। আমি তো চেয়ে ছিলাম সবাইকে নিয়ে সুখে থাকতে। কি পেলাম নিজের আপনজনদের থেকে যন্তনা ছাড়া? যাদের জন্য জীবনের অনেকগুলো বছর যন্তনার প্রবাসে। যাদের সুখের জন্য জীবনে সকল চাওয়া পাওয়া গুলোকে কবর দিয়ে ছিলাম কুয়েতের মরুতে। আজ আমার মেয়েটি বলে আব্বো তুমি কবে আসবে বাড়ি? তোমার কি আমাকে দেখতে মন চায় না? যখন মেয়ের কথা গুলো শুনি তখন আর ধরে রাখতে পারি না চোখের পানি গুলোকে।
কি বলব আমার মেয়েটিকে? আমি জানি না তো কবে দেশে যাবো। এখনো যে ঋন শেষ করতে পারলাম না, একদিকে ঋন আবার সংসারের খরচ। মেয়েটিকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলি আগামী মাসে আসবো, কিন্তু আমার তো আগামি মাস আসে না!!
তখন রাত সাড়ে ১১ টা বাজে সিঙ্গাপুর .আমি বাড়িতে ফোন করতে ছিলাম এমন সময় দেখলামপাশে একজন লোক অনেক ক্ষন ধরে আকাশে তাকিয়ে আছে.মনে মনে ভাবলাম লোক টার কিহয়েছে যে এভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে.কিছুক্ষন পর আবার তাকালাম, লোকটাআগের মতই আছে.ফোনের লাইনটা কেটে লোকটার কাছে গেলাম।
আমি =জিজ্ঞাসা করলাম দেশী ভাই নাকি
লোকটি = বললেন হ্যা
আমি=ভাই অনেক ক্ষন ধরে দেখলাম আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন যে?
লোকটি =এইতো ভাই হিসাব করতেছিলাম এই প্রবাসে জীবনে কি পেলাম আর কি হারালাম আর২১ বছরের প্রবাস জীবনের দুঃখগুলো ভাবতে ছিলাম!
আমি ২১ বছরে কথা শুনে অভাগ.খুব কৌতুহলী হয়ে বললাম ভাই আমাকে বলবেন আপনারদুঃখ গুলো? আমার খুব শুনতে ইচ্ছে কর করছে.
লোকটি =ভাই ২১ বছরে দুঃখগুলো মাত্র কয়েক মিনিটে শুনে কি করবেন.
আমি =ভাই আমি হয়ত পারবোনা আপনার দুঃখগুলো তাড়িয়ে দিতে ,কিন্ত এমনতো হতে পারেযে, আপনার দুঃখগুলো শুনে আমি কিছু শিক্ষা নিতে পারবো, কারণ আমি ও তো একজন প্রবাসী.
লোকটি =তাহলে শুনেন, আমরা ছিলাম ৬ ভাইবোন আমি ছিলাম সবার বড়.বাবা ছিলেন কৃষকনিজেদের জমি চাষ করতাম, বাবার সাথে আমি কাজ করতাম.বাপ বেটা মিলে সংসারে অভাব দূরকরতে পারতাম না ..ছোট ভাইবোন‘রা পড়ালেখা করতো, ওদের কাউকে ক্ষেতে–খামারে নিতামনা, যদি পড়ালেখার ক্ষতি হয়।
এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করতে লাগলাম, কিন্তূ কষ্টের দিনশেষ হয় না,একদিন কিছু জায়গা বিক্রি করে পাড়ি দিলাম ইরাক, সেখানে চার বছর ছিলাম, তারপর বাড়িতে আসলাম,এর মাঝে সংসারে অভাব কিছুটা দূর হলো, ভাইবোনদের পড়ালেখাভালো চলছিল.কিছুদিন যাবার পর দেখালাম আবার ও পুরানো দুঃখগুলো বাড়ির চারপাশেঘুরতেছে, আবার পারি দিলাম সিঙ্গাপুর,
সিঙ্গাপুর এসে মাত্র কয়েক মাস থাকার পর পারমিট বাতিল করে দিল,দেশে গিয়ে পরলামমহাবিপদে যা টাকা ছিল সব শেষ! মা বাবা বললেন বিয়ে করতে ,আমি বিয়ে করিনি,
কারণ ভাইবোন গুলো পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাক আবার বোনদের বিয়ে দেওয়া হয় নাই! কয়েক বছর পর আবার আসলাম সিঙ্গাপুর…এর মাঝে কেটে গেল অনেক বছর,ছুটিতে বাড়িগেলাম বিয়ে করব বলে কিন্ত বিয়ে করতে গিয়ে পড়লাম অনেক জামেলায়, বয়স বেশি আরঅশিক্ষিত বলে ভাল বাড়িতে বিয়ে করতে পারলাম না.শেষে কোনো উপায় না পেয়ে গরিবের একমেয়েকে বিয়ে করলাম, তাও আবার আমার থেকে অর্ধেক বয়সের! জীবনে খুঁজে পেলাম সুখেরঠিকানা, ভালোই কাটছিলো ছুটির দিনগুলো মনে হইছিল পৃথিবীতে আমি একজন সুখী মানুষ।
ছুটি শেষ করে আবার চলে আসলাম সিঙ্গাপুর.সিঙ্গাপুর এসে কোনো কিছু ভালো লাগতো না! রাতে ঘুম আসেনা! কাজে মন বসে না! বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করতো! মনে মনেভাবলাম ভাইবোনদের বিয়ে হয়ছে ভালো চাকরি হয়েছে ভাইদের, এখন আমার দায়িত্ব শেষ এইভেবে একেবারে বাড়ি চলে গেলাম।
আর এটাই ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল! এখন সেই ভুলের মাসুল দিতেছি.কিছু দিনযাওয়ার পর দেখালাম চেনা মানুষ গুলো অচেনা হয়ে গেলো! যে মা বাবা ভাই বোনদের জন্য এতকষ্ট করলাম! তারা যেন আমাকে চিনে না! কারণ আমি কেন একেবারে. চলে এলাম দেশে.আরবুঝতে পারলাম এতদিন ওরা আমাকে ভালোবাসেনি, ভালবাসতো আমার টাকাকে! আর মা বাবাআমার কথা শুনতোনা! ভাইদের কথা শুনতো! কারণ ওরা মা বাবাকে বেশি যত্ন করতো বলে.মাআর আমার বৌয়ের সাথে প্রতিদিন লেগে থাকতো জগড়া!
মা বলতো আমি বৌয়ের কথা শুনি! আর বউ বলতো মায়ের কথা“
এদিকে বৌয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো না!
বৌয়ের যেটা ভালো লাগে আবার আমার সেটা ভালো লাগেনা.
বৌয়ের কোনো দোষ নাই,আসলে ভাই জীবনে যৌবনের তরীটা যে সময় ভাসানো দরকার ছিল, সেই সময় ভাসাইনি,অসময়ে ভাসাইছি ঠিকই কিন্ত যৌবনের তরীটা আজ বাইতে পারি না! মাঝেমাঝে এত কষ্ট লাগে যাদের জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তারা কত সুখে, আর আমি একাই কতকষ্টে আছি!
আজ ভ্যাগের কঠিন আঘাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে আমার দেহ মন! ভ্যাগের কঠিন নিয়মেপরাজিত হয়ে দিক–বিদিক হারিয়ে ফেলেছি! যে না পাওয়াটার জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তাপেয়ে হারালাম!!! কিছু নিজের স্বার্থপর আপনজন কারণে! “অভাবের দিন যে কত বড় তা শুধুঅভাবে যারা থাকে তারা বুঝে“
আবার টাকা ঋণ করে সিঙ্গাপুর আসলাম, ঋণের তাড়নায় কোনো কিছু ভালো লাগে না.একদিনভাইকে ফোন দিয়েছিলাম বললাম আমাকে এক লক্ষ টাকা ধার দে.সে যে কথা বলছে আমিকোনো দিন ভুলতে পারব না.আমাকে বলল,এক বেলা না খেয়ে থাকলে এক বেলা খাওয়ানো যায়,বা ১শ টাকা 1হাজার টাকা ধার দেওয়া যায় .কারো ঋণ শোধ করা যায়না!!!
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো মরে যাই! কিন্ত আমার একটি ছেলে আছে তার কি হবে? মা বাবা ভাইবোন সবাই সুখে আছে হয়তো বউও চলে যাবে! কিন্ত আমার ছেলে কি হবে?ভাইদের অনাদরঅবহেলায় বড় হবে .তাই আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করলাম শেষ বয়সে………!!!
কথাগুলো বলতে বলতে দেশী ভাইটি কাঁদছিল.আমি ও তার কথা শুনতে শুনতে কখন যে কাঁদতেছিলাম আমি নিজে বুঝতে পারিনি! দেশী ভাই কে কি বলে সান্তনা দেবো আমার সব ভাষা হারিয়েফেলছিলাম.শুধু বললাম, আমরা প্রবাসীরা হলাম এমন এক যুদ্ধের সৈনিক. যে যুদ্ধের জয়েরউল্লাস আমরা করতে পারি না! দিয়ে দিতে হয় অন্যদের …হয়তো অন্যদের মাঝ থেকে জয়েরউল্লাস কেউ পায় আবার কেউ পায় না.অথচ, এই যুদ্ধে আমাদের দিতে হয় পরিশ্রম নামেজীবনের স্বাদ ইচ্ছা ভালো লাগার মুহূর্তগুলোকে বিসর্জন!!!
দেখতে দেখতে হয়ে গেলো আমার প্রবাস জীবনের এক বছর গত ৩০ আগস্ট।কত কিছু বলবার আছে আমার,কত কিছু ! কত অভিজ্ঞতার গল্প, সংগ্রামের গল্প,সংগ্রাম দেখার গল্প,এই নিষ্ঠুর জীবনে মানুষের বেঁচে থাকার আশার গল্প,বেদনা আর আহত হবার গল্প কিংবা সুখ আর শান্তির গল্প .....খুব লিখতে ইচ্ছে করে।সে জন্য ল্যাপটপের সামনে প্রায়ই যাই।যতক্ষণ থাকা উচিত,ঠিক তার থেকে বেশী সময় ধরেই স্ক্রীনটার সামনে বসে থাকি। বসে থাকি,তো থাকিই,কিচ্ছু লেখা হয় না।আজ কিছুটা বলি আমার ভীনদেশে আসার গল্প ?
আমার প্রবাস-জীবন আর দশটা প্রবাস জীবনের থেকে খুব একটা কিছু আলাদা কিছু নয়। ডিসিশনটা একদমই হঠাৎ করে নেয়া ।হঠাৎ একদিন আমার এক মামা (আমার এক বন্ধু ) বললো যাবা নাকি লন্ডন,আমি বল্লাম ভাইয়াদের সাথে কখা বলে দেখি....
কিভাবে কিভাবে জানি সব ভাইয়াদের ম্যানেজ করে নিলাম ।তারপরে আমি দৌড়াই ঢাকার আর সিলেট ,সব কাগজ ম্যানেজ করে নিলাম ১০ দিনের মধ্যে,এইবার আমি ভিসার জন্য দৌড়াই ব্রীটিশ কাঊন্সিলে ...অবশেষে সব শেষ হয় ... সবুজ পাসপোর্টে একটা লাল চকচকে সীল নিয়ে সেই মামার আগেই আমি ঢাকা হতে বাড়ী আসি।শেষ কয়টা দিন কেমন জানি ঘোরের মাঝে কাটে গেল বাজার ,ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্টদের অফিসে দৌড়াদৌড়ি ... বাড়ীর ঝামেলা,বন্ধুদের টাইম দেয়া,আত্মীয়দের নিমন্ত্রণরক্ষা ।
গত বছর আগস্টের ৩০ তারিখ সকালে দেশ ছাড়লাম সেই মামা আর আমি তবে দুই বিমানে। বিদায় দিতে আসা একগাদা ফ্রেন্ড ,বাবা,ভাইরা সবাইকে রেখে ... বিশাল বিশাল লাগেজ আর একগাদা ঊপদেশ নিয়ে বিমানবন্দরের কাচের দরজাটা পার হয়ে গুডলাক বাংলাদেশ দিলাম ,আমি বিমানে বসে বসে চুপচাপ ভাবি কত কিছু করা হল না, ঢাকা টু দিল্লী... দিল্লী টু লন্ডন ....
দেশে থাকতে মনে করতাম প্রবাস জীবন কতো না সুখের। কিন্তু বিদেশের মাটিতে পা দেয়ার পরপরই শুরু হল অন্যরকম সংগ্রাম, প্রতিনিয়ত শরীর এবং মনের সাথে যুদ্ধ। কিন্তু সেই যুদ্ধে পিছিয়ে আসার উপায় নেই তাই এখনো করছি .......
যখন হিথ্রোর সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটা শুরু করলাম তখন নিজেকে প্রথমবার খুব একা মনে হল আমার পুরা বিমানযাত্রায় যে জিনিসটা নিয়ে খানিকটা টেনশনে ছিলাম সেটা হচ্ছে ইমিগ্রেশন অফিস আর স্টাডি পারমিট ,যদিও আমার সবুজ পাসপোর্টে চকচকা লাল একটা ভিসা আছে, তাও নাকি ইমিগ্রেশন আমার কাগজপত্র দেখে সন্তুষ্ট না হলে পারমিট না দিয়েই ভাগিয়ে দিতে পারে ... এবং এই টাইপ ঘটনা নাকি একেবারে রেয়ার না
,বাস্তব কিন্তু ভিন্ন ইমিগ্রেশনের মহিলা যথেষ্টর চেয়েও বেশি হেল্পফুল দুই এক কখা বলেই ঘ্যাচাঘ্যাচ সীল দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে “ওয়েলকাম টূ ইংল্যান্ড , গুড লাক উইথ ইওর স্টাডীজ”... আমি মুগ্ধ ...ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিশাল বিশাল লাগেজ নিয়ে প্রথম টের পেলাম যে আমি আর বাংলাদেশে নাই ,বের হওয়ার ঠিক সাথে সাথে দেখা হল ভাতীজার সাথে ,তার সাথে আগে থেকে ঠিক করে রাখা বাসাতে চল্লাম ট্রেনে করে..
তোমার হৃদয়ের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মনের বিস্তৃত আঙ্গিনা পেরিয়ে ভালবাসার স্রোতে বির্বতনের ধারায় বিবতির্ত হয়ে তরী ভিড়িয়েছিলাম তোমার কুলে। শূন্য তরী ভড়িয়ে দিয়েছিলে ভালবাসায় কানায় কানায়, কোন কিছু দাবী না করতেই উজাড় করে দিয়েছিলে দু’হাত ভরে। ঋনী হবার সুযোগ না দিয়ে চির জীবনের জন্য ঋনী করে রাখলে হৃদয়ের বন্ধনে মনোমন্দিরে। মোমের আলোয় আলোকিত করে রেখেছো এখনও আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষণ।
ভালবাসায় কাছে না থাকায় অবস্থান করছো অযতেœ অবহেলায়। যতটুকু প্রাপ্য আছে আমার কাছে তাও অপূরণ রাখছি দীর্ঘদিন। আবেগ ভরা কন্ঠে প্রায়ই বলো কি পেলাম জীবনে? আর কি পাবার বাকী আছে ? জীবনের কঠিন বাস্তবতায় হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর কোনদিন দেয়া হবে না, মনের আবেগ লুকিয়ে কয়েক ফোটা চোখের জল ফেলা ছাড়া। সুখী করার অঙ্গীকার নিয়ে সত্যিকার ভালবাসায় জীবন অঙ্গিনা ভরিয়ে দিতে, সুখ স্বপ্নের বাসরসাঁজাতে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে মাতৃভূমি ছেড়েছিলাম কয়েক বছর আগে। মা এবং মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছি প্রবাসে।
সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে প্রবাস হলো দেয়ালহীন কারাগারসম। স্বপ্নরা প্রতিনিয়ত বাসাবাঁধে কিন্তু পূরণ হবার অবসর পায় না। সমস্ত স্বপ্ন এলোমেলো হয়ে যায়। রাত গভীর হলে আস্তে আস্তে স্বপ্নরা ভীড় করে মনের জানালায়, কাটে নির্ঘুম রাত অসংখ্য স্মৃতির ভীড়ে। মানুষের মন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় রহস্যময় মনের রহস্য ভেদ করা বড়ই কঠিন। প্রবাস জীবনের সমস্ত আদর আর অফুরান্ত ভালবাসা এই রহস্যে প্রতিনিয়তই ঘুরপাক খায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় ভালবাসার বরফগলা নদীতে আজ বড়ই সঙ্গীহীন,ভালবাসাহীন একা। রাত গভীর হলে আস্তে আস্তে দূশ্চিতা বাড়ে। মনের মাঝে দেশের ছোট ছোট স্মৃতি এসে ভীড় করে। জীবনের সমস্ত আদর,অফুরন্ত ভালোবাসার টানে মন ছুটে যায়,সোনারগাঁওয়ের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত ভিটিপাড়া গ্রামের পদ্মা বিধৌত জল-জোছনার কৈশোর প্রেমের তীর্থস্থান।
আজও আমার মন প্রাণকে নাড়া দেয়, ভাবনায় স্বপ্নে আজও বিচরণ করি সরিষার ক্ষেতের পাশঘেষা মেঠো পথে আমার ছোট সন্তান সৌরভকে নিয়ে বিকাল বেলা ঘুরে বেড়ানো। মা, মাটির টানে গ্রাম্য মেঠো পথ ধরে সোনালী ধান ক্ষেতের পাশে। যেখানে শীষে খেলা করে ভোরের শিশির বিন্দু। সূর্য্যরে আলো পড়ে এক অরূপ দৃশ্য সৃষ্টি করে। যতক্ষন জম্মভূমির চিন্তুা মাথায় থাকে ততক্ষনই ভালবাসার সংস্পর্শে থাকা যায়। দেশের কথা ভাবলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। প্রতিটি প্রবাসীই জম্মভূমি ছেড়ে প্রবাসে থাকলেও মনের অজান্তেই দেশকে প্রতিমুহুর্ত অনুভব করে।
একজন প্রবাসী সীমাহীন কষ্ট আর না পাওয়ার অতৃপ্তি নিয়ে প্রবাসী হয়। ভালবাসার কষ্টের সব সময় চোখের কোনে অশ্র“ হয়ে জমাট বাধার আগেই লুকিয়ে ফেলতে হয় দেশে অপেক্ষ্যমান প্রিয়জনদের কথা ভেবে। তাই প্রবাসীর দুঃখের অশ্র“ কেউ দেখে না। রুমালে মোছার আগেই মরুর তপ্তরোদে শুকিয়ে যায়। প্রতিটি রাত্রি ভোর হয় সঙ্গীহীন, ভালোবাসাহীন, মমতাহীন, একা। জীবনের দীর্ঘযাত্রায় অতীতের উৎসবের স্মৃতি বাংলার মাটি ও মানুষের মতো আমার অস্তিত্বে গভীর নোঙর বেধেঁ আছে আজও। বিদায় যে বড় কঠিন, বড় নির্মম সেদিন তা অনুভব করেছিলাম হাড়ে হাড়ে। দেশ প্রেম কি আত্মার সম্পর্ক কি সেদিন মন অনুভব করেছিল একান্ত করে। ১৩ই জানুয়ারী ২০১৪ই যখন আমি কুয়েত চলে আসি আমাকে বিদায় দিতে ঢাকা এয়ারপোর্ট সেদিন অনেকেই বোবা কান্নায় কেদেঁছিল।
সবচেয়ে বড় একা হয়ে গিয়েছিল আমার সন্তান আমার দ্বিতীয় আত্মা। সে আমার কোলে গলা ধরে সবার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে মাঝে মাঝে আমার গলায় চুমু দিচ্ছিল। আর আমি যেন অনেকটা বোবা পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন বিদায়ের বাঁশির সকরুণ সুর আজও আমাকে নীরবে কাঁদায়। একজন মানুষের শৈশব, কৈশোর, যৌবন, কর্মজীবন, এবং থাকে অবসর জীবনের বৃদ্ধকাল,জীবনের এই সময় গুলি যেন কোন সুষ্টিশীল মানুষের প্রবাসে না কাটে, সময় গুলি কাটে যেন মায়ের কাছাকাছি, মাটির কাছাকাছি, জম্মভূমির কোলে। প্রবাসী হয়ে বুঝলাম জীবনটা একটা একশন থ্রিলার মুভি। প্রতিমূহুর্তে নতুন নতুন দৃশ্যে হাজির হচ্ছি। স্বাভাবিক জীবনযাপন স্বাভাবিক মৃত্যু ভাবাই যায় না। প্রতিমুহুর্তে বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন মানুষের কর্মকান্ড চোখের সামনে ভেসে উঠে। ভাবি কি ভাবে আমার সোনার দেশের সোনর মানুষ গুলি রাজনৈতিক কল্যানের কথা মুখে বলে কাজ করে সম্পূর্ন উল্টো।
অতি সহজেই দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলে? ভাবি কিভাবে বিবেকবান মানুষ গুলি মনুষত্ব, মূল্যবোধ, বিবেকবুদ্ধিহীন হয়ে যায় নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। একজন প্রবাসীর শ্রমে ঘামের অর্থে অনেক পরিবার চলে। এমন অনেক প্রবাসী আছে একমাস দেশে টাকা না পাঠালে সেই পরিবারে অনেক কিছুই বন্ধথাকে। আজ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল কিন্তু, দেশের মানুষ কখনোই প্রবাসীদের দুঃখ কষ্টের কথা ভাবে না। মাস শেষ অর্থেও অপেক্ষায় থাকে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যারা প্রবাসী হয় তারা এক সময় টাকা কামানোর মেশিনে পরিনত হয়, তাদের আবেগ,অনুভূতি ধীরে ধীরে লোভ পেতে থাকে, দুঃখ কষ্টকে আর দুঃখ কষ্ট বলে মনে হয় না। বিবেক দয়া মায়া আবেগ একসময় ফুরেিয় যায়। আমার মতো করে আরো অনেক প্রবাসী শ্রমিকের জীবন রো-শোক থাকে কিন্তু সময়ের অভাবে কাউকে বলতে পারে না।
তাই দুঃখ নিয়ে বিলাসিতা করার সুযোগ প্রবাসীদের নেই। দুঃখ নিবারন করার ইচ্ছো নিয়ে মা মাটি ছেড়ে অজানা অচেনা দেশের মাটিতে আমরা আশার ঘর বেঁধেছি, সত্যি কথা বলতে কি প্রবাসীর কষ্ট প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বুঝে না। অনুমান করে সব কষ্ট বুঝা যায় না। স্বপ্নের প্রবাস বাস্তবে বিশাল আকারের এক দানব। প্রতি মূহুর্তে এ দানব নামক প্রবাস প্রতিটি প্রবাসীকে কুরে কুরে খায় গুন পোকার মতো। পৃথিবীর ওজন থেকে আরো বেশী ওজনের কষ্ট বুকে নিয়ে আমার মতো আরো অধিকাংশ প্রবাসী রাত্রি ভোর করে। দু’হাত ভরে যতদিন দেবার সামর্থ থাকবে ঠিক ততদিন পরিবারের সবার কাছে প্রিয়। আমাদেরকে সুখের মাইল ফলক হিসাবে দেখা হয়।
একাকীত্বের বেদনায় আমাদের নয়নে যখন জল ঝরে কেউ আদর করে কাছে ডেকে এই জল মুছে দেয় না। নয়নের জল নয়নেই শুকায়। প্রবাসী যান্ত্রিক জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আমরা প্রাণে বেঁচে থাকি তবে এই বাঁচাকে বেঁচে থাকা বলা যায় না। আমাদের এই যান্ত্রিক জীবন এক একটি মূহুর্ত অসম্ভ বেদনাদায়ক। মানুষের জীবন বিচিত্রময় একঅধ্যায়। জীবন চলার পথে কখনো-কখনো কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হয়,ঝড়াতে হয় সহস্র অশ্র“। আপনজনদের ভয়ে বেড়াতে হয় কষ্টের রেখা। খনিকের এ ছোট্র জীবনে অমরা সৃষ্টির সৃষ্ঠ মানব জাতি হয়ে খনিকের দুনিয়ায় কত না কি করে যাচ্ছি। আমি যখন টকবগে একজন যুবক ছোট একটা সংসার আমাদের। মা আছে বাবা নেই, সেই ছোট কালে আমাদের এতিম করে চলে গেছেন পরপারে। বাবার কথা মনে হলে আজোও দুচোখের অশ্র“তে বুক ভিজে যায়। লেখা পড়া পুরা পুরি শেষ করতে না পারলেও জীবন চলার পথে যতটুকু প্রয়োজন তা হয়তো করেছি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন ভাবে চলাটা আজকাল বড়ই কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।
অর্থ সম্পদের অভাবে কখনো-কখনো মানুষকে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন যন্ত্রনার আগুন। আর সে যন্ত্রনার আগুন নিয়ে ও মানুষ সামনের দিকে পথ চলতে থাকে স্বাপ্নীল জীবনটাকে সুন্দর সরে সাজাতে। মানুষের আয়ের উৎস না থাকলে দুঃখ,কষ্টে অভাবে দিন কাটাতে হয়। আর আয় করতে হলে চাই ব্যবসা বাণিজ্য চাকুরি। একটি চাকরির জন্য কত জায়গায় ধর্না দিলাম। বর্তমানে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে চাকুরীর ক্ষেত্রে। যে খানে একজন নিয়োগ দেওয়া হবে সেখানে প্রার্থী এসে ভীড় করছে শত-শত। না এতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই,এটাই বাস্তব। অনেক শিক্ষিত হয়েও বৎসরের পর বৎসর ঘুরেও চাকরী পাচ্ছেনা অনেক যুবক। দেশের জনসংখ্যা বিরাট অংশ বেকার। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলো, আজো স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি,ক্ষুধা, মঙ্গা ও দারিদ্রতা আমাদের দেশ থেকে দূর হয়নি একটি দেশ স্বাবলম্বী হতে ৪৩ বছর কি যথেষ্ট নয়?
দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে আরও কত বছর লাগবে এ প্রশ্নটা রইলো দেশের বিবেকবানদের কাছে। এ ৪৩ বছর আমরা কি পেলাম। দেখলাম দেশের সমস্ত সম্পদ লুন্ঠিত যৎসামান্য বিকৃত চেহারার রাজনীতিবিদ নামধারীদের,আমলা কামলাদের দ্বারা। এরাই যুব সমাজকে বিপদে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তাদের চরিত্র হনন করছে। বিপদগ্রস্থ যুব সমাজ দিশাহারা হয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কর্ম নেই, মা বাবা ভাই-বোনদের মুখে অন্ন তুলে দেবার ক্ষমতা নেই, তুচ্ছ তাচ্ছিলতার আগ্রাসনে যুব সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করে ৭১-এ যুব সমাজের দেশ প্রেমের অংশ গ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যারার সময় তার, কি করবে ভাবতে প্রতিদিন সন্ধ্যা হয়। ভাবনা শেষ হয় না। হবারও না, মা বাবার বকুনী ঘরে বিবাহযোগ্য বোন অথবা স্কুল কলেজগামী ভাইবোনের লেখা পড়া কাপড় চোপড় না দেবার বদৌলতে ব্যাকঠু হোম। সিদ্ধান্ত আসে বন্ধু মহল থেকে অতি গোপনে।
এটি বড় কষ্টের। বিদেশ চলে যাও। এদেশে তোমার আমার কিছু হবে না। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা তোমার আমার ঠিকানা। যমুনা ভাঙ্গনে বাড়ী ঘর গাছ পালা তলিয়ে গেছে। তাই ঠিকানাও নেই। বিদেশ যেতে হলে দৌড়-ঝাপ। ছুটাছুটি সন্ধান পেলেও সিকিভাগ সফলতা। বাকীটা ভিটে মাটি বিত্রি“ করে আত্মহত্যা অথবা বৈরাগ্য জীবন যাপনের জন্য রামগড়ের রাস্তা পরিস্কার।
চোখের দেখা অনেক গোবর গনেশ গ্রামের পাতি নেতা আবুবক্কর ছিদ্দিক রবিন ওরফে বিল্লাল মুন্সির ছেলে-বোয়া ট্রাভেল এজেন্সী ওয়ালারা শত-শত কয়েক কুড়ি বেকার যুবককে যুদ্ধ বিগ্রহের আগুনে ঢেলে দিয়ে এসেছে মালশিয়া যাওয়ার জন্য নৌ চোরা পথে। অসহায় যুবকগুলোর কোন হদিস নেই। স্বজনদের আহজারি আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। কেউ বলছে অনেকে মারা গিয়েছে নদী পথে শ্রমিক প্রেরণ কালে। সারাদেশের এমন আবুবক্কর ছিদ্দিক রবিন নামের পাতি দালালদের কোমরে রশি বেঁধে তাদের বিরুদ্ধে “ ছি-ছি” আন্দোলন শুরু হলে দৃর্নীতির একটা মূল তাগিদ সমাজ থেকে উৎপাটিত হবে।
জানিনা এমন হবে কিনা। দেশের বড়-বড় নেতা আজ নিজেদের পকেট ভারি করছে যুব সমাজের জন্য কিছুই না। দুভাগ্যবশত এই সুন্দর সবার মধ্যে জাগে নাই। ভাগ-বাটোয়ারা করে তুমিও খাও,আমিও খাই। নিম্ন থেতলিয়ে যাচ্ছে একেবারে আমের ছোবরার ন্যায়। খেতে না পারলে যুব সমাজ করবেটা কি, না যেতে তখনই তাদের বদনাম হয়। অথচ ৭১র আগে তাদের সমাদর অনেক ছিল। এরা “আল্লা মেঘ দে পানি দে”ছায়া দের আল্লা ধ্বনিতে আল্লাহর কাছে খরা থেকে পরিত্রান পেতে পানি চেয়েছে। এরা ৭১র উত্তাল দিন গুলোতে কোটি স্মরণার্থীর সাহয্যে এগিয়ে আসছে।
তাদের দৃঢ় মনে বলের কারণেই সুসজ্জিত এবং এশিয়ার সবচেয়ে ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাক বাহিনীকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়েছে। যুব সমাজের একটা আশা ছিল, এরা দেশের জন্য কিছু একটা করবে, দেশ উপকৃত হবে। ৪৩ বছর তা হয়নি, যুব সমাজ সবার আগে অবহেলিত। চাকুরী নেই তাতে কি হয়েছে। যুব সমাজ উন্নয়ন তথা কর্মসংস্থানের মত বাংলাদেশে প্রচুর সম্ভাবনা বিরাজমান। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা। দেশের প্রধান সমস্যা বেকার কর্মসংস্থান গ্রাম ওয়ারী প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যুব সমাজকে বিদেশের পথে পা বাড়াতে হবে না, প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিতে ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুও কোলে ঢলে পড়তে হবে না। বেকারের অভিশাপে নিজের জীবন বিপন্ন করার প্রতিযোগিতা চলছে মহাসমারোহে।
মরণব্যাধি নেশা পান করে যুব সমাজ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এমনও দেখছি মেধাবী ছাত্র বিশ্ববিদ্যায়ের পাঠ চুকিয়ে বেকার। শেষ অবধি নেশায় বুদ হয়ে নিজেকে লুকাতে ব্যর্থ চেষ্টা। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার হাজারো কিসসা কাহিনী। তেমনটা হয়েছিলো আমার জীবনে। অবশেষে সকল বাধা ছিন্ন করে পাড়িজমাই দুর পরবাসে। ১৫বছর আগে যখন প্রবাসের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে রওনা দিচ্ছি তখন সবে মাত্র টক বগে যুবক। তার পর দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে গিয়ে বিয়ের সিঁড়িতে বসি। সময় গড়িয়ে মাস,মাস গড়িয়ে বছর তার পর হয়ে গেলাম বাবা। ছোট ছেলেটা আমার কোলে তাকে আদর করছি আর ভাবছি আদরের সন্তান ছেলেটিকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো।
সন্তানের মুখের দিকে থাকিয়ে দুচোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না আমি পরাজিত সৈনিকের ন্যায় দেশ থেকে চলে আসছি। দেশে রেখে আসছি আমার পরিবার পরিজনদেরকে। এক দেড় বছর পর দেশে যাই অতিথি হয়ে আর নিজ ভূমি হয়ে গেলো পরবাস। আবার চলে আসি সেই কর্মক্ষেত্রে। রয়ে যায় আপনজনরা। মাসের পর টাকা পাঠানো, চিঠি লিখা অথবা ফোনে ভালমন্দ জেনে নেয়া। এই চলছে ভানুমতির খেলা। দীর্ঘ সময়ে দেশের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে, পাকা রাস্তা গৎ হয়েছে, ছোটরা বড় হয়েছে আরো কত কি এখান থেকে দেশের অনেক আলোচিত অনালোচিত খবর হাবুডাবু খাই। শুনতে পাচ্ছি নানা খবর। ঘটনা ঘটার মূর্হুতে ইথারে ভেসে আসছে খবর। ভালো খবরে পুলকিত হই। দুঃসংবাদে খবরে দুঃচিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাই। শেষ পযর্ন্ত বুঝেই নিলাম আমাদের প্রাণ প্রিয় বাংলাদেশ থেকে ভালো খবরের যে সম্ভাবনা আর নেই। অহরহ লেগে আছে বন্যা, খরা নদী ভাঙ্গন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধাপ্পারাজ, বোমা হামলা, গুম খুন মানুষের সারি-সারি লাশ, নদ নদী আর রাস্তার পাশে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। সামনে আরো যে ভোগান্তি আছে জনগনের।
তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষমতার বা ক্ষমতার বাইরে যারাই আছেন বাংলার সাধারণ শান্তি প্রিয় জনগন আপনাদের দিকেই চেয়ে আছে। ইতিহাস বলে যুগে যুগে জাতির দুরযোগের মুর্হুতে রাজনৈতিকবিদরাই বুক পেতে দিয়েছে, নিজেকে কিপ্পন করে জাতিকে সংগঠিত করেছে, পরিত্রাণ দিয়েছে। আজো কি তেমন কেউ বেরিয়ে আসবে না? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কোন চেতনা চলছে কোনটা চলবে।
নেকড়ে থেকে চিতার আবির্ভাব কিনা তাও ইদানিং ভাবিয়ে তুলছে আমাকে,আমার মত অনেককে। প্রবাস নামের অট্রালিকায় থেকেও নয়ন ঝরে বিরহে কাদেঁ স্বজনের টানে মা মাটির টানে “পরবাসে দেশের জন্য মন কাদে”ঁ।
এখন আর আমাকে নিয়ে আফসোস করি না.এখন আর পাওয়া না পাওয়ার হিসাব করি না.এখন আর হারানো যৌবনের জন্য ভাবি না.এখন আর মধ্যরাত্রি দূস্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেল একা একা কাঁদি না.এখন আর ২৪ বছরে ব্যর্থ প্রবাস জীবনের জন্য কাউকে দোষ দেই না.এখন আর ৪৫ডিগ্রী রোদের কাজ করার সময় একটু ছায়া খুঁজি না.জীবনের সমস্ত কষ্টগুলোকে আরবের মরুভুমিতে কবর দিয়েছি .তাই এখন আর আমার জীবনের কোন সুখের বা বেঁচে থাকার তাগিদা নেই.যতদিন বাঁচবে প্রবাসে বাঁচবে,যদি মরণ হয়ে যেন প্রবাসে হয়.এই জীবনটাই যাদের জন্য বিলিয়ে দিলাম প্রবাসে আজ তাঁরাই আমার সবচেয়ে বড় শত্রু.যাদের সুখের জন্য প্রবাসে কাটিয়ে দিলাম ২যুগ তাঁরাই বলছে যোগ্যতার নেই বলে আমি আজ দুখি.আজ থেকে অনেকদিন আগে বাবার সাথে যখন জমিতে ধান বুনতে বুনতে বাবাকে বলেছিলাম আমাকে বিদেশে পাঠান.
আমি বিদেশ গিয়ে আপনের কষ্ট দূর করে দেব.আর অভাবে সাথে যুদ্ধ করতে হবে না.আমি ছিলাম বাবার প্রথম সন্তান তাই বাবার সাথে সব কাজ করতে হত আমাকে.আমারা ছিলাম ৩ভাই ৩বোন.যখন স্কুলের সময় সবাই স্কুলে যেত আর আমি যেতাম ক্ষেতে কাজ করতে.তবে এখন আর সেইদিন নেই ছোট ২ভাই দেশে ভাল চাকরি করে.বউ সন্তান নিয়ে নিজের ফ্লাট নিয়ে শহরে থাকে.ছোট ৩বোন চাকরি করে আর শ্বশুর বাড়িতে স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক সুখে আছে.ওদের আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে হয় না.আমার প্রবাস জীবনের প্রথম ১৫বছরের সব টাকা ওদের পড়ালেখা জন্য খরচ করছি.কখনো ওদের আমার কষ্টগুলো বুঝতে দেইনি.যখন যা চাইছে দিয়েছি.আর এখন মনে হয় এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল.এই ভুল প্রতিটি প্রবাসী করে.
আমি প্রথম ১০বছর পর বাড়ি গিয়ে বিয়ে করলাম.আমাদের বাড়িটা খুব ছোট ও একটা ঘরছিল আমাদের.এতগুলো মানুষ একটা ঘর.যদি ও বাবা বলতে ঘর তুলার জন্য.আমি বলতাম ওদের পড়ালেখা শেষ হোক তারপর ঘর তুলবো.তাই আমি বাড়ি গিয়ে ছোট্ট একটা ঘর তুললাম দুচালে.বিয়ে কয়েক মাস অনেক সুখে কাটালাম.বউয়ের আদর সোহাগ পেয়ে ভুলে গেলাম ১০প্রবাস জীবনের কষ্ট গুলোকে.আসলে পুরুষের জীবনের সতি্যকারের স্বাদটা বিয়ে পরে আসে.সুখের দিন গুলো কখন যে ফুরিয়ে দেল বুঝতে পারলাম.৬মাসের ছুটির শেষে বাবা হবো খবর পেয়ে ও সাথে করে ৩লক্ষ টাকা ঋন করে আবার চলে আসলাম সৌদিতে.প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো ছুটি শেষে আবার প্রবাসে আসা.এই কষ্টটা শুধু প্রবাসীরাই বুঝতে পারে.প্রবাস জীবনের না পাওয়া ও হিসাব মিলাতে মিলাতে কেটে গেল অনেকগুলো বছর.
এখন আমার ২৪বছর প্রবাস জীবনে আর আমার বয়স ৫৬.এখন আমার সংসারে অনেক বড় হয়ে গেছে ৩মেয়ে ও ১ছেলে.ছেলেটা সবার ছোট.অনেকদিন ধরে ভাবছি দেশে চলে যাবো.এখন আমার কাছে ১০লক্ষ টাকা আছে .মেয়েগুলো বিয়ে সময় হয়ে যাচ্ছে.এই টাকাগুলো মেয়েদের বিয়ে দিতে খরচ হয়ে যাবে.তাহলে ছেলেটার ভবিষৎ কি? এই নিয়ে প্রতিদিন বউয়ের সাথে ঝগরা.অনেক ভেবে দেখলাম বউয়ের কথাগুলোই সতি্য ,যে টাকা আছে ভাল পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিতে গেল সব টাকা শেষ তাহলে ছেলের ভবিষৎ.আর এদিকে আমি ও বয়সের ভারে কালান্ত.আমাদের বাড়িটা ছিল ১৫শতাংশ,ও বিলে কিছু জয়গা আছে.২ভাইয়ের ৪ছেলে ও আমার এক ছেলে ভবিষৎ ঘর তুলার জয়গা থাকবে না,আবার বোনের অংশ আছে.বউ প্রায় বলতে আপনে তো ভাইবোনের জন্য অনেক কিছু করলেন ও তারা বাড়িতে থাকে না.
বাবাকে বলেন আমাদের ছেলে জন্য ৩বোনের জয়গার অংশ লিখে দিতে.বউ বললো আপনের ২ভাই ঢাকা বাসায় নিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে তো অনেক সুখে আছে ও আপনের বোনেরা নিজ সংসার নিয়ে অনেক সুখে আছে ওদের তো কোন কিছু অভাব নেই.আপনের কাছে কিছু টাকা আছে আর বিলের একটু জয়গা বেঁচে সেই টাকাগুলো দিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে ও একটা সিএনজি কিনে চালাবেন এত আমরা সুখে থাকতে পারবো হয়তো আপনের ভাইবোনদের মত বিলাসীতা থাকবে না.ছেলেটার জন্য বাড়িটা তো আছে.বউয়ের কথাগুলো এক মাস ভাবে দেখলাম সতি্য বলছে.একদিন বাবাকে বললাম বউয়ের সেই কথাগুলো .কথাগুলো শুনে বাবা রেগে গেলেন অনেক গালাগালি করলেন.
আর বললেন ওনি বেঁচে থাকতে কাউকে জায়গা দিবে না.ও বিক্রি করতে দেবে না.আর হাজারটা প্রশ্ন আমার এত বছরের টাকা কি করলাম সব টাকা নাকি শ্বশুরবাড়িতে দিয়েছি.বাবা একটা কথা অনেক কষ্ট পাইছি আমার ভাইবোনেরা তাদের যুগ্যতায় আজকে নাকি সফল ও সুখে আছে.আমি নাকি গন্ড মূর্খ তাই আমার কপালে এত কষ্ট.আর ওনার ছেলে মেয়েদের এক সুতা অংশ আমাকে টাকা বাদে দিবে না যদি টাকা দেই তাহলে ভাইবোনেরা দিবে.এই নিয়ে আমার বউয়ের সাথে প্রতিদিনই অনেক ঝগরা হয়.আমি বাবাকে বলেছিলাম আজ আমার ভাই বোনের সফল হত না যদি আমি টাকা না দিতাম.ওদের ক্ষেতে চাষ করে খেতে হত.এর পর বাবা বললো আমি জানি তোর কষ্ট .আমি তোর ভাইবোনদের জিজ্ঞাসা করবো যদি দেয় তাহলে তোকে লিখে দেবো নয়তো পারবো না.কারন তুই আমার সন্তান ওরা আমার সন্তান .যত থাকুক ওদের সম্পদ.
কিছুদিন পর বাবা বললো ওরা টাকা ছাড়া জায়গা দেবে না.আমি আর বাবাকে কিছু বলি নাই.আমি বাবাকে দোষ দেই না কারন তার কাঁছে সবাই সমান.তবে পরে জানতে পারছি বাবা নাকি আমাকে জায়গা দিতে চেয়ে ছিলো.ভাইবোনদের প্ররোচনার কারনে দিতে পারে নাই.বাবাকে বলছে আমি বিদেশ থাকি যদি আমার বউ দেখেশুনা না করে তখন বাবার নাকি কষ্ট হবে.যাহাহোক আর আমি ও জায়গা চাইতাম না যদি ভাইয়েরা গ্রামের বাড়ি থাকতো.তবে মা চেয়েছিলো আমি যেন জায়গাটা পাই.এরপর গ্রামের বিচার সালিশে জয়গার দাম ধরা হলো ১২লক্ষ টাকা.কি করবো অনেক ভেবে চিন্তা করে রাজি হলাম.ভাইবোনদের জন্য তো ১০বছর প্রবাসে কাটালাম এখন যদি নিজের সন্তানদের জন্য কিছু না করি ওপারে গিয়ে কি জবাব দেবে.
জীবনের বাকিটা সময় ছেলের জন্য না হয় কাটিয়ে দিলাম.ভাইবোনদের কাছে আজ আমি বেইমান ও খারাপ মানুষ এখন যদি নিজের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু না করি তাহলে তো যতদিন বাঁচবো নিজের সন্তানদের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে.মা বাবা ভাইবোন ও সমাজের সবাই জেনে ও আজ প্রশ্ন করে এতবছরের টাকা কি করলাম.যখন আমার ছেলেটি না দেখে প্রশ্ন করে করবে কি এত বছরের টাকা কি করলাম তখন কি জবাব দেবো ছেলেটির কাছে.তারপর কিছু টাকা ঋন করে বাড়ি ও বিলের জায়গা কিনে নিলাম.এখন আমি ৪লক্ষ টাকা ঋন নিয়ে বেঁচে আছি.ঋনের বোঝা এত ভারি যে কাউকে বুঝাতে পারবো না.বার বার শুধু মনে পরছে কেন আমি আমার জন্য কিছু করলাম না.আজ বেইমান স্বার্থপর হয়ে গেলাম যদি আজ থেকে ১৫ বছরের আগে বেঈমান ও স্বার্থপর হতাম তাহলে আজকে এই বুড়া বয়সে কেদে কেদে প্রবাসে কাটাতে হত না.এখন তো ভাইবোন বাবা সবাই সুখে আছে.এখন আমার পরিবারের কেউ ডাকও দেয় না.
তখন খুবই কষ্টে লাগে যখন শুনি ওদের ব্যবহারের কথা.যাহাহোক প্রবাস জীবনের গল্প কখনো শেষ হবে না কারন আমরা প্রবাসে কখনো কঠিন ও বেঈমান স্বার্থপর হতে পারবো না. যে সমস্ত প্রবাসী ভাইয়েরা গল্পটি পড়বেন তাদের কয়েকটা কথা বলি.নিজের জন্য কিছু টাকা জমাবেন.নয়তো প্রবাস জীবন কখনো শেষ হবে না.আমার হয়তো কপাল খারাপ ভাইবোনদের বুঝাতে পারিনি.এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয় স্বার্থ ছারা.আজ যদি আমার ভাইবোন আমাকে একটু সহয়তা করতে তাহলে এখন বাড়ি যে কোন রকম খেয়ে কাটিয়ে দিতাম.তবে সবার ভাগ্য এক নয়.আপনের ভাই হয়তো অনেক ভালো আপনের ভাল চাইবে কিন্তু ভাইয়ের বউ কখনো চাইবে না.তেমনি বোন চাইলে বোনের স্বামী চাইবে না.
এই পৃথিবীতে নিজের সন্তান চেয়ে কেউ আপন হয় না.আমি যেমন বাবার কাছে আপন ,তেমনি আবার ভাইয়ের কাছে ভাইয়ের সন্তান.আবার আমার কাছে আমার সন্তান.এখন ভাইয়েরা আমার চেয়ে নিজের সন্তানকে নিয়ে ভাববে ও সন্তানের ভবিষৎ চিন্তা করবে এটা আমাদের সমাজের নিয়ম.
পড়ুন এক টাকার মেশিনের গল্প , জিনি আত্মহত্যার আগে লিখে গেলেন নিজের জীবনের কাহিনী , যাদের সন্তান বা স্বামী বিদেশে থাকেন তারা অবশ্যই দেখবেন কত কষ্ট করে আপনাদের জন্য মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান কে একটু ভাল ভাবে রাখার জন্য, ফ্যামিলি মানুষ গুলোর একটু সুখের জন্য সব মায়া ত্যাগ করে প্রবাসে আসছিল। জানিনাহ, এবার কার সুখের আসায় দুনিয়ার মায়াও ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে গেছেন।
বাড়ি ছিলো রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে।উনার সম্পর্কে যতোটুকু জেনেছি, মানুষ টা অনেক সহজ-সরল টাইপের ছিলেন,সবসময়ই সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করতেন,নিজের মনের কথাটা ঠিকমতো প্রকাশ করতেও পারতেন না, সিগারেট কিংবা কোন বাজে অভ্যাসও ছিলোনা। নয় মাস আগেই ছুটিতে দেশে গিয়ে বিয়ে করে এসেছিলেন। বাড়িতে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী নিয়ে ই উনার যৌথ ফ্যামিলি ছিলো।
উনার রুমমেট দের কাছ থেকে জানলাম, কিছুদিন থেকেই নাকি উনি বেশ উদাস আর মন খারাপ করে থাকত।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করত না, রাতে সবাই ঘুমাইত ওনি বেডে শুয়ে কেঁদে বালিশ ভিজাইতো।
সুইসাইড করার কারণ টা আর শেষ ইচ্ছে টা মরার আগে চিরকুটে লিখে গেছিলেন.. “মাস দুয়েক আগে উনার ভিসা নিয়ে একটু প্রবলেম হয়েছিল, দুইমাস ধরে বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারেনি; সেলারীর সব টাকাই ভিসার ঝামেলা মিটাইতে শেষ হয়ে গেছিলো।
ফ্যামিলির সবাই ভাবছিল, ওনি টাকা টা বৌয়ের পারসোনাল একাউন্টে পাঠাচ্ছে, বাড়িতে ফোন দিলে সবাই উনার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলত, কল কেঁটে ফোন বন্ধ করে রাখত, শেষ পনেরদিন মা উনার সাথে কথা বলেনি। বৌ ভাবছে টাকা বাজে পথে খরচ করতেছে, বৌও এসব নিয়ে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে গেছিলো। উনার সমস্যা টা কাউকে বুঝাতে পারেনি, কিংবা কষ্ট টা কেউ বুঝেনি, ঘরের বৌ এমন কি গর্ভধারিনী মা ও না।। ফ্যামিলির কাছ থেকে পাওয়া আঘাত টা সহ্য করতে না পেরেই পৃথিবীর মায়াও ত্যাগ করে নিজ রুমে ফাঁসি দিছিলেন।
চিরকুটে লেখা শেষ ইচ্ছে টা ছিলো, “লাশ টা যাতে দেশে না পাঠানো হয়, এখানেই দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হয়।” …শেষ ইচ্ছে টা হয়ত পূরণ করা সম্ভব হবেনা,কোম্পানি থেকে লাশ টা দেশে পাঠিয়ে দিবে। তবে কি পরিমাণ আঘাত আর কতোটুকু কষ্ট পাইলে একটা মানুষ মরার আগে এরকম আবদার করতে পারে??
ভাই সিরিয়াসলি একটা কথা বলি, প্রবাসী রা ভোগ- বিলাসিতা কিংবা নিজেদের সুখের জন্য বিদেশ আসেনি, ফ্যামিলির কথা চিন্তা করেই এসেছে।
দেশে যারা আছে তারা মনে করে প্রবাসী রা অনেক সুখে আছি, টাকার পাহাড়ে কিংবা টাকার গাছ নিয়ে বসে আছে, ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুধু টাকা পাঠাবো। কিন্তু আমরাতো বুঝি মাস শেষে টাকা পাঠানোর জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয়।
আপনার ভাই, ছেলে, স্বামী, বাবার প্রবাস লাইফের একদিনের কষ্ট যদি কখনো দেখতেন, সাথে সাথে বলতেন বাড়ি তে চলে আসতে প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব, তবুও প্রবাসে থাকতে হবেনা।
প্রবাসীদের কষ্ট বুঝতে বেশি কিছু করতে হবেনা, “ভোররাত চার টায় ঘুম থেকে উঠে 45° সেলসিয়াস তাপমাত্রার সারাদিন রৌদে পুঁড়ে 15/16 ঘন্টা ডিউটি করে রাত নয় টায় রুমে গিয়ে কিচেনে গরম পাতিলের ছ্যাঁকা খেয়ে রান্না করার কষ্ট টা একটু আন্দাজ করুন।
অবশ্যই, দেশে থেকে আপনারা কি করে বুঝবেন/ দেখবেন আর বলবেন। আপনারা তো প্রবাসীদের রক্তশুষে ভালোই মৌজে আছেন। আমরা যারাই প্রবাসে আছি, আমরা তো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী, হাজারো কষ্ট বুকে নিয়েও বলি অনেক ভাল আছি। কোন দিন বুঝতে দেইনি আপনার সুখের জন্য আমাদের জীবনের মূল্যবান দিন গুলোকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছি।
দেশের মানুষ গুলোর কাছে একটাই অনুরোধ, বিদেশে আপনার ফ্যামিলির যেই থাকুন বাবা, ভাই, স্বামী, বন্ধু, অন্যকোন সম্পর্কের আত্মীয় হোক তাদের সাথে একটু ভাল ব্যবহার করেন, তাদেরকে একটু ফোনে সময় দেন, একটু ভালো ভাবে কথৃ বলুন; তারা আপনাদের কাছে এরচেয়ে বেশি কিছু আশাও করেনা।কোনরকম মেন্টালি পেইন দিবেন না, কাছের মানুষের ছোট একটা কথাও ধনুকের তীরের মতো বুকে বিঁধে।সেসব ব্যথায় মেন্টালি সার্পোট কিংবা সান্ত্বনা দেওয়ার মতো এখানে ওনাদের কেউ নাই, সবরকম পেইন একাই নিতে হয়।
প্রবাসী ভাই-বন্ধু, দেশ থেকে যে যাই বলুক না কেন, মনে কিছু নিবেন না। সামর্থ্য যতটুকু আছে ফ্যামিলির জন্য ততটুকুই করবেন।কোনরকম আঘাতে ভেঙ্গে পড়বেন না,আর কোন রেমিটেন্স যোদ্ধ/ সহযোদ্ধা কে এভাবে হারাতে চাই না।
ভাসুর ও জাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করেছিলেন। সে দায়েই এখন কারাগারে বন্দি আছেন কানাডা প্রবাসী সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী। তবে চাঁদাবাজি নয় মুনতাহা চৌধুরী এখন আলোচনায় তার উদ্দাম ও বেপরোয়া জীবনাচারের কারণে। পুলিশের খাঁচায় বন্দি হওয়ার পর একে একে বেরিয়ে আসছে তার অন্ধকার জীবনের ‘ফুল স্টোরি’। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গল্পের বাইরেও আরও অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।
সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী। ডাক নাম ফুলি। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কাদিমল্লিক গ্রামের মইজ উদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে। পড়ালেখা করেছেন সিলেটের ব্লু বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার আগেই ২০০৭ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পরিবারের পছন্দে মায়ের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে কানাডাপ্রবাসী মাহবুব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মাহবুব চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কানাডায় চলে যান ফুলি। প্রথম প্রথম ভালই চলছিল। প্রবাসের রঙিন জীবন রঙ ধরায় ফুলির মনেও। একটু একটু করে আলো-আঁধারির ছায়া পড়ে তার মাঝে। ফুলি বেপরোয়া হতে থাকেন পোশাকে-আশাকে, চলনে-বলনে। খরচ বেড়ে যায় তার। স্বামীর কাছে আবদার কেবল বাড়তে থাকে। হিসাব মেলাতে হিমশিম খান কানাডার ‘মণিমহল’ রেস্টুরেন্টে কর্মরত মাহবুব চৌধুরী।
কিছুই বুঝতে চান না ফুলি। বিলাসী জীবনের খরচ মেটাতে তার শুধু টাকা চাই। টাকার জন্য বেপরোয়া ফুলি জালিয়াতির আশ্রয় নেন। স্বামীর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৮০ হাজার ডলার আত্মসাৎ করেন। তার স্বামী যে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন সেই মণিমহলের মালিক দেওয়ান শাহীনেরও ৬০০০ ডলার কবজায় নেন চেক জালিয়াতি করে। স্ত্রীকে নিয়ে যেন আর পারছিলেন না মাহবুব চৌধুরী। একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে সিলেট নগরীর উপশহরস্থ ফ্ল্যাট বিক্রির ‘দায়িত্ব’ দিয়ে দেশে পাঠান স্ত্রীকে। তবে মাহবুব চৌধুরী ভাবতে পারেননি দেশে এসে আরও ভয়াবহ ‘কীর্তিগাথা’র জন্ম দেবেন ফুলি।
৫ বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ফুলি দেশে আসেন গত ১৫ই মার্চ। সেদিন ছিল মাহবুব চৌধুরীর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। দেশে ফিরে ফুলি ওঠেন নগরীর ফাজিল চিশতে তার পিতার বাসায়। কানাডা থেকে মনে যে রঙ লাগিয়ে এসেছিলেন তার প্রলেপ থেকে যায় দেশে আসার পরও। দেশে ফিরেও বেপরোয়া চালেই চলতে থাকেন। বাইরে বাইরেই সময় কাটতো বেশি। কেউ কৈফিয়ৎ চাইলে বলতেন ‘ফ্ল্যাট বিক্রি’র চেষ্টার জন্যই বাইরে থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিনই বাসা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বের হতেন। হাতের টাকা শেষ করে তবেই ফিরতেন বাসায়।
ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া, আনন্দফুর্তি ফুলির জীবন যেন এমনই। কেনাকাটার সূত্রে পরিচয় হয় অলঙ্কার প্রতিষ্ঠান জেমস গ্যালারির নয়া সড়ক শাখায় কর্মরত দিলদার হোসেন ওরফে নাজমুলের সঙ্গে। বিনিময় হয় দু’জনের মোবাইল ফোন নাম্বার। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রেহানউল্লার ছেলে নাজমুলের কাছে ফুলি পরিচিত হন ‘খুশি’ নামে। পরিচয়ের পরদিনই মেন্দিবাগের একটি হোটেলে লাঞ্চ করেন তারা। ফুলি প্রথম দিকে নিজের বিবাহিত পরিচয়টি আড়াল করেন নাজমুলের কাছে। তবে এক সময় নাজমুল জানতে পারেন বিষয়টি। ফুলি বিষয়টি স্বীকার করেন, তবে আংশিক। বলেন, এক বছর আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে ‘আগের স্বামী’র সঙ্গে। আগের বৃত্তান্ত জানাজানির পরও সম্পর্কে ভাটা পড়েনি এতটুকু। বরং আরও গভীর হতে থাকে সে সম্পর্ক। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
ডিভোর্সের কাগজ ছাড়া কাজী বিয়ে পড়াতে রাজি না হলে ২৫শে জুন মৌলভী ডেকে একে অপরকে ‘কবুল’ করেন তারা। ফুলির বেপরোয়া জীবন আরও গতি পায়। পার্টি, মদ, ড্যান্স সব কিছুরই স্বাদ নিতে থাকেন তারা। নাজমুলের মাধ্যমে ফুলির পরিচয় হয় জুবায়ের, লিজা, উজ্জ্বল, কুটি, রিপন আলীর সঙ্গে। এদের সবার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন ফুলি। ফুলির নেতৃত্বে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এ বাহিনী। এমনকি ফুলিকে কেন্দ্র করে সাগরদীঘির পারের জনৈক ফাহাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে নাজমুল বাহিনী। এই ফাহাদের বাসাতেই ভাড়া থাকতেন ফুলি-নাজমুল।
ফুলির বিলাসী জীবন টানতে কেবলই টাকার প্রয়োজন। তাই নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে তারা। ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে নগরীর সুবিদবাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। চাঁদা চেয়ে ফোন করে সুবিদবাজারেরই আরও এক ব্যবসায়ীর কাছে। এতেও মন ভরছিল না ফুলির। মোটা একটা ‘দান’ মারতে নাজমুলের হাতে নিজের ভাসুর বেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও জা মাহবুবা নোমান চৌধুরীর ফোন নাম্বার তুলে দেন। তবে সাহস করতে পারছিলেন না নাজমুল। নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেন ফুলিকে। কিন্তু কিছুতেই তাকে বোঝানো যাচ্ছিল না। উল্টো আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে ফুলিই চাপে ফেলেন নাজমুলকে।
২৮শে আগস্ট ২০১৪। সেদিন ছিল দিলদার হোসেন নাজমুলের জন্মদিন। ফুলি নাজমুলের বন্ধুদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে নগরীর নয়া সড়কস্থ সিলভার প্যালেস রেস্টুরেন্টে একটি পার্টির আয়োজন করেন। পার্টি শেষে সন্ধ্যায় সবাই মিলে রোজভিউ হোটেলে নেশার আসরে যোগ দেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাজমুল উল্লেখ করেন, নেশার ফাঁকে বারবার ফুলি তার ভাসুর বেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও জা মাহবুবা নোমান চৌধুরীর কাছে চাঁদা চেয়ে ফোন দিতে চাপ দেন। দু’জনের মাঝে এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে চাঁদা চেয়ে ফোন দেন নাজমুল। মাহবুবা নোমানের কাছে ফোন করে দাবি করেন ১০ লাখ টাকা। হুমকি দেন টাকা না দিলে অপহরণ করে হত্যা করা হবে তাকে ও তার ছেলেকে। ফোনে টাকা দাবি না করলে হয়তো জানা হতো না ফুলির পেছনের গল্পগুলো।
ফোন পেয়ে আতঙ্ক ভর করে মাহবুবা নোমানের মনে। নিজের চেয়ে ছেলের জন্য বেশি ভয় তার। হুমকি অব্যাহত থাকায় বন্ধ করে দেন ছেলের স্কুল যাওয়া। শুধু মাহবুবা নোমানের কাছে নয়, ফোন যায় কানাডায় তার স্বামী বেলাল চৌধুরীর কাছেও। হুমকি দেয়া হয় দেশে এলে তাকেও হত্যা করা হবে। চাঁদা দাবি করা হয় একই অঙ্ক ১০ লাখ টাকা। আতঙ্কিত মাহবুবা নোমান চৌধুরী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কোতোয়ালি থানায় দু’টো সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রথমটি ২৮শে আগস্ট (নং ১৬৯১)। এক মাস অপেক্ষা করে ফল না পেয়ে দ্বিতীয় সাধারণ ডায়েরিটি করেন ২৬শে সেপ্টেম্বর (নং ২১০৩)। প্রতিকার মেলেনি এর পরও। ফোনে হুমকি অব্যাহতই থাকে। নিরুপায় হয়ে শরণাপন্ন হন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের। ইতিমধ্যে বিষয়টি জানান কানাডা দূতাবাসে, উদ্বিগ্ন হয় দূতাবাসও।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে কনসুলার অফিসার ডুরেন রহমান নিরাপত্তা চেয়ে যোগাযোগ করেন পুলিশের সঙ্গে। এক পর্যায়ে তদন্তে নামেন গোয়েন্দারা। খুঁজে বের করেন পেছনের হোতাদের। বেরিয়ে আসে এমন গল্প যা কারও ধারণাতেই ছিল না। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ফুলি শুধু নাজমুলের সঙ্গেই নয় সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন আরও অনেকের সঙ্গে।
নাজমুলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই নাজমুলের বন্ধু রিপনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন ফুলি। এ নিয়ে নাজমুলের সঙ্গে তার টানাপড়েনও তৈরি হয়। ফুলির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় নাজমুলের। রিপন আরও কাছে আসেন ফুলির। গত ১৩ই নভেম্বর মালাবদল করেন ফুলি ও রিপন। সে বৃত্তান্তও সবার কাছে অজানা থাকে। হঠাৎ একদিন মেয়ের ব্যাগ খুললে এ বিয়ের কাবিন দেখতে পান ফুলির মা রতœা খানম চৌধুরী। চমকে ওঠেন, মেয়ে যে বখে যাচ্ছে তা টের পেয়েছিলেন। তবে এতটা যে ঘটে গেছে কল্পনাতেও ছিল না। ফোন দেন রিপনের কাছে। রিপন দৃঢ় কণ্ঠে স্বীকার করেন ফুলি তার স্ত্রী। আদালতে নাজমুল যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে জানা যায়, ২০১৩ সালে আরিফ নামে ঢাকার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গেও বিয়ে হয়েছে ফুলির।
বল্গাহীন জীবনাচারের কুশীলবরা এখন পুলিশের খাঁচায়। লাল দালানে বন্দি রঙিন জীবনের নায়ক-নায়িকারা। সিলেট মেট্রো পুলিশের গোয়েন্দা জালেই শেষমেষ ধরা পড়ে তারা।
শিক্ষা জীবনের শুরুতে বিভিন্ন স্তরে সীমিত মেধাতালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করালেও, আমি মেধাবী কিংবা পাঠনিবেশী কখনোই ছিলাম না। আমার কাছে নিউটন কিংবা প্যাসকেল দের কঠিন কঠিন কথার চেয়ে – খেলোয়াড় শেন ওয়ার্ন এর গুগলি কিংবা অভিনেত্রী জুডি ফস্টারের অভিনয়শৈলী অথবা তারকাশঙ্করের নিতাই কবিয়াল আর বসন-এর প্রেম অনেক বেশী ভালো লাগতো। এগুলোর পাশাপাশি পড়াশুনা , সেটা কি আর এমন কঠিন?? ভুল ছিলাম – এস এস সি, এইচ এস সি পত্রিকায় ছবি, কিন্তু হোঁচট টা খেঁয়ে বাস্তবতার হাঁটু রক্তাক্ত হলো বুয়েটে এসে ।হ্যা, এখানে অনেক নিয়ম, পি এল এর আগে পড়তে হয়, পূর্ব পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে হয়, কোথাকার জল কোথায় গড়ায় জানতে হয়।কিন্তু, আমি কি নিয়মের বেড়াজালের প্রভুত্ব কে স্বীকার করি?? ফলাফল সাদা কাগজে সি জি পি এ এর ঘড়ির হৃদয় ৩ এর নীচের ঘরগুলোকে বড় ভালোবেসে ফেললো। মুখে দাঁড়ি চলে এলো, আশে পাশে এত ভালো ভালো ফলাফল- সবসময় শুনতাম ঘাড়ের কাছে কারো ফিসফাস ধ্বনি ‘তোকে দিয়ে হবে না’।
বন্ধুরা বললো এত উদাস কেনো ?? লজ্জায় কিছু বলতাম না। শিক্ষক ক্লাশরুমে বলেই দিলো তোমাদের মধ্যে কিছু ছেলেই ইঞ্জিনিয়ার হবে- বাকীরা তো!! হ্যা আমি ধ্বংস হচ্ছিলাম , চাইনি- কিন্তু হচ্ছিলাম- কারন আমি দৌড়ুতে ভুল করছিলাম, ভয় পাচ্ছিলাম নিয়মটাই জানি না বলে- বার বার । কোনো শিক্ষক , কোনো বন্ধু , কোনো অগ্রজ আসেনি সেদিন একটি কথা বলতে –‘ আমি তোমাকে সাহায্য করবো, এভাবে করলেই তুমি ভালো করবে’। অনেক বন্ধুরা তো হাসাহাসি –ই শুরু করলো- যখন উদাস হয়ে মাঝে মাঝে চুপ থাকতাম, আমার নাম দিয়ে দিয়েছিলো ‘জি পি এ ধীমান’ ।একবার এক বন্ধু এগিয়ে এলো , বললো, ধুত! জি পি এ নিয়ে চিন্তা করিস না। চাকরী পেতে জি পি এ লাগে না। পাশ করে বের হবার পর দেখলাম ভালো সি জি পি এ এর বন্ধুরা সবাই ভালো চাকুরী পেলো, সেই বন্ধুর কাছে গেলাম – বললো চাকুরী পাওয়া কি এতো সহজ? একটু সি জি পি এ টা তিন এর উপর রাখতি!!!
চাকুরী অবশেষে পেয়েছিলাম –বেতন টা ছিলো আমাদের বাড়ির ড্রাইভারের সমান আর কাজের সময় ছিলো সকাল ৮ থেকে রাত ৮ টা। আমার বাবা ছেলের প্রথম চাকুরি উপলক্ষ্যে নতুন ২ টা শার্ট আর মাপ দিয়ে প্যান্ট কিনে আনলো –সাথে একটা টাই। বাসা থেকে টাই টা পরেই বের হতাম , কিন্তু অফিসে গিয়ে খুলে ফেলতাম। কাজ ছিল মাঠে ঘাটে পাইলিং আর ফাউন্ডেশনের । বড় বড় রিগ যখন মাটি ফুঁড়ে নামতো তখন ভাবতাম সেই বিজ্ঞাপনের কথা –চাকুরীপ্রাপ্ত সুদর্শন ছেলে তার সদ্য বিবাহিত বধূকে বলছে ‘স্বপ্ন টা এবার সত্যি হবে – দক্ষিণের জানালা-‘ সেই বন্ধুর সাথে দেখা ,টেলি কমুনিকেশনে টাওয়ারের রক্ষনাবেক্ষন প্রকৌশলী – বেতন আমার সাড়ে তিন গুন। আমার কথা শুনেই বললো –লেগে থাক । বেতন বেড়ে যাবে । আমি লেগে থাকলাম। বন্ধুর কথা সত্যিও হলো , বেতন বেড়ে গেলো – দেড় বছরে ১ হাজার টাকা। তাতেও তিনটা শুন্য এর আগে ২ তা অঙ্ক যুক্ত হলো না। প্রমাদ গুনলাম, হিসেব করে দেখলাম এভাবে বাড়লে ২০ বছর পরে হয়ত দুইবেলা ভালোভাবে থাকার আর খাবার টাকা হবে। ২০ বছর একটা লম্বা সময়।
বন্ধুকে বললাম , দোস্ত বাড়লো তো না , আমাকে কি একটা চাকুরীর রেফেরাল দিবি তোর কোম্পানিতে? তুই তো বেশ ভালোই আছিস। কয়েকদিন পর তার ই-মেইল জবাব বন্ধ হলো , তার ফোনে ক্রমাগত রিং এর ধ্বনি তে আমি প্রতিউত্তরে কোনো কিছুই শুনতে পেলাম না। আমি আমার বুয়েটের এডভাইজারের সাথে দেখা করলাম- তিনি বললেন, বি সি এস দাও।
বললাম এই তো সামনেই দেব। বি সি এস দিলাম , প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের যখন অপেক্ষা করছি তখন বাবা একদিন বললেন তুমি বিদেশে কেন শিক্ষা নিচ্ছ না-আমার এই আশা টা কি পূরণ হবে না? অস্ট্রেলিয়া আসলাম মাস্টার্স করতে , প্রথম সেমিস্টারের টাকা বাবার কাছ থেকে নিয়ে আসলাম ৫০০০ ডলার । এই আমার বাবার কাছ থেকে শেষ টাকা নেওয়া । বাকী ১৫০০০ ডলার , থাকা খাওয়া খরচ সব নিজে উপার্জন করলাম । সি জি পি এ কম , মেধাহীন কেউ নিশ্চয় স্কলারশিপ ফান্ড পাবে না কিংবা টিচার্স এসিস্ট্যান্ট হবে না। এই উপার্জনের জন্য অস্ট্রেলিয়ান এক রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করলাম।
রেস্টুরেন্টে কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম, আমি কতটা শারীরিক পরিশ্রম করতে সক্ষম। ৪০ পাউন্ড মাসেল এর ভারী ড্রাম গুলো নিমিষেই নামিয়ে ফেলতাম। গরম জলে কাজ করতে করতে এত অভ্যস্ত হয়েছিলাম যেঝে ফুটন্ত পানিতে হাত ডুবালে ও টের পেতাম না মাঝে মাঝে। একদিন ১৪ ঘন্টা কাজ করে বের হয়ে দেখি ঐ দিনের শেষ রাতের নির্ধারিত বাস আসবে না। পরের বাস ভোরবেলা ।দূরত্ব ৭ মাইলের মত । অপেক্ষা করব, কিন্তু পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা । ট্যাক্সি নেব, ২০ ডলার চলে যাবে। ২০ ডলার অনেক টাকা। তাই হাঁটা ধরলাম। ৭ মেইল হেঁটে যখন বাসায় পৌছালাম রাত ৩ টা । আমার ফ্ল্যাট-মেট ভুলে হয়ত ভাত অবশিষ্ট রাখেনি। ভাত বসালাম সাথে আলু সিদ্ধ । ৪ টা বাজে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে মনে পরলো পরের দিন ১১ টায় একটা এসাইন্টমেন্ট জমা দিতে হবে। এলার্মটা ৭ টায় দিলাম । পরেরদিন এসাইন্টমেন্ট জমা দেবার সময় শিক্ষিকা কে সাথে বোনাস একটা হাসি উপহার দিলাম।
না এইরকম কষ্ট কখনো করব- ভাবিনি । আমি কখনো জল ও খেতে চাইলে মা দৌড়ে এসে রান্নাঘর থেকে জল নিয়ে আসতো। মা বাবার বড় আদর করা বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার টার হাত এখন প্রায়ই পুড়ে যায় , পিঠে-কাঁধে ব্যাথা করে। এর মাঝে একদিন শুনলাম আমি বি সি এ স লিখিত পরীক্ষায় ও উত্তীর্ণ। মৌখিক পরীক্ষার চিঠি পাঠানো হয়েছে ঢাকা বাসায়। বাবা আমাকে বললেন –আসিস না, তুই পারবি না এদের সাথে মিশতে, পারবি না অসৎ হতে । আমি গেলাম না।
আমি বাবার কাছ থেকে পুরো টাকাটাই নিতে পারতাম। কিন্তু নেই নি। আমি নিজের ইচ্ছেতেই সংগ্রামটা কে বেছে নিয়েছিলাম। যেদিন ৩ তা ডিস্টিঙ্কশন নিয়ে পাশ করা মাস্টর্স এর রেজাল্ট টা আমার রেস্টুরেন্ট এর মালিক কে দেখাই , বার টুলে বসে থাকা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে উঠে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো। এখানেই সুন্দর ইতি হতে পারতো কিন্তু হয়নি- অস্ট্রেলিয়ায় সেই সাদা কলারের চাকুরী আর পাওয়া হলো না। এক পর্যায়ে আমেরিকান নাগরিক বউ এর হাত ধরে আমেরিকা। আমেরিকায় কখনো কেরাণী কখনো দপ্তরী কখনো সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ এবং অবশেষে রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার।
আমার আর্জেন্টিয়ান বস ইন্টারভিউ তে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
তোমার ব্যাক গ্রাউন্ডে ইঞ্জিনিয়ারীং কাজ খুব কম। আমেরিকায় তো একেবারেই নেই –ই। কেন তোমায় নেব?
বলেছিলাম, জীবনের ৬ বছর ব্যাচেলার , ২ বছর মাস্টার্স যা পড়তে ব্যয় করলাম –তার উপর ভিত্তি করে প্রথম কাজ করার সুয়োগ পাওয়া হচ্ছে জীবন বাজী রাখা। তুমি অনেক অভিজ্ঞ মানুষ রাখতে পারো , কিন্তু জীবন বাজী রেখে আমার মত কাজ করবে না। কিন্তু আমি করব কারণ এটি আমার এত এত বছর পর প্রথম সুযোগ।
আমাকে ৩৪ জন ইঞ্জিনিয়ার এর মাঝ থেকে আমাকে নেয়। বলা বাহুল্য , আমি ছিলাম সর্ব কনিষ্ঠ।
জীবনে জয় –পরাজয় নিয়ে কখনো ভাবিনি। জীবন টা ছিল- রোদ এলে মাঠ, বৃষ্টি এলে ভিজে যাওয়া। কিছু সময় জয় পেয়েছি, বেশীরভাগ –ই পরাজয়ের কাহিনী। তবে নক্ষত্র বীথির নব্য হতে যাওয়া তারকার মাঝে যেই অত্যন্ত অল্প সংখ্যক এর সাথে আমার জীবন কিছুটা মিলবে তাদের জন্য বলবো ‘ হেরে যাও যদি- নক্ষত্রবীথি চ্যুত হও যদি- তারা ভরা আকাশটা দেখো আর ভেবো তুমি অসীমের সাথে মিতালী পেতেছো- আধার আলোকের উর্ধে সেই তুমি’
আর যাদের এমনটা ভাবার অবকাশ নেই, সেই সকল শিক্ষক, বন্ধু কে বলছি…বাসার উঠোনে উর্বর মাটিতে খুড়োখুড়ি করে সাজানো ফুলের বাগান তো সবাই ই পারেন হয়ত, একটি বার মরুর ধূসর উষর বুকে একটা গোলাপ এ ফুটিয়ে দেখার চেষ্টা করুন না! সি জি পি এ ৩ এর নীচে হওয়ায় সেশেন্যাল ভাইবা না নিতে চাওয়া বুয়েটের সেই স্যার কে জানাতে চাই- মাত্র কিছু বছরেই আমার ২ টা ড্রয়িং নিউইয়র্ক শহরের সরকারী ডিজাইনের তালিকায়।
'মানুষ আমাকে মনে করে আমি খুব শক্ত মেয়ে৷ কিন্তু মানুষ জানে না ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছি৷ আমি গোপনে অশ্রু ফেলি, কিন্তু কাউকে আমি আমার কান্না দেখাতে চাই না'৷ কথাগুলো বললেন সুনারশি৷ ইন্দোনেশিয়ার এক নারী৷
এটা অবশ্য তার আসল নাম নয়৷
১৫ বছর আগে৷ সুনারশির বয়স তখন ১৭৷ খুব গরিব ঘরের মেয়ে৷ স্কুলের ফি দেয়ার মত কোন টাকা না থাকায় এক সময় স্কুলের গন্ডি আর পেরুতে পারলেন না৷ সেই সময় তার চিন্তা এলো বিদেশে যাবার৷ অভিবাসী শ্রমিকদের নানা সাফল্যের কথা শুনে তিনিও সিদ্ধান্ত নিলেন এই কাজ করবেন৷ চলে গেলেন একটি প্রশিক্ষণ কোম্পানিতে৷ সেখানে গিয়ে গৃহকর্মের প্রশিক্ষণ নিলেন৷ সংগ্রহ করলেন পাসপোর্ট৷
একদিন ঐ কোম্পানি জানালো এক আরব তার বাসার কাজের জন্য এমন একজনকে খুঁজছেন যে হবে একজন কুমারী, বাদামী বর্ণের গায়ের রং, লম্বা৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুনারশি বললেন: ‘আমি অন্য আরও অনেকের সঙ্গে এই চাকুরির জন্য তালিকাভুক্ত হলাম৷ তারপর আমাদের নেয়া হলো ইন্টারভ্যু৷ একশ মেয়ের মধ্যে আমাকে পছন্দ করা হলো৷ আমার বন্ধুরা আমার নির্বাচিত হওয়ায় ঈর্ষান্বিত হল! নির্বাচিত হবার দুই সপ্তাহ পর আমাকে এক আরব নিয়ে গেলেন, তার বাড়িতে, সৌদি আরবে৷
এখান থেকেই শুরু হলো দু:স্বপ্নের৷ আমাকে যে ব্যক্তি তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন, সে আমার আসল নিয়োগকর্তা নয়৷ আসল নিয়োগকর্তা তার পক্ষাঘাতগ্রন্থ বাবা৷ তার শরীরের নিম্নাংশ অবশ৷ সেই বৃদ্ধ আমাকে বললো ভাইব্রেটরের সাহায্যে তার পুরুষাঙ্গে মালিশ করতে৷ আমি বললাম, না৷ আমি পারবো না৷' ক্ষেপে গেলো ঐ ব্যক্তি৷ নানা ভয়ভীতি দেখালো৷ তাকে ঐ বাড়িতেই বন্দি করে রাখা হলো৷
কেবল ঐ ব্যক্তিই নয়, তার নয় পুত্রও পালাক্রমে তাকে দিয়ে মালিশ করাতো৷ করতো নানা যৌন অত্যাচার৷ এর পাশাপাশি তাকে রান্নাও করতে হতো৷ একদিন সুযোগ পাওয়া গেলো সেই বাড়ি থেকে পালানোর৷ ঘরের দরজার তালা লাগানো ছিল না৷ বাড়ির পিছনে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই ধরা পড়ে গেলো সে৷ আসলে এটা ছিল একটি ফাঁদ৷ তাকে এবার বিক্রি করে দেয়া হলো ১৩০০ ডলারে৷
‘আমি এবার কুমিরের মুখ থেকে পড়ে গেলাম সিংহের মুখের সামনে৷ নতুন এই ব্যক্তি আসলে একজন দালাল৷ যখন কোন খদ্দেরের মেয়ে প্রয়োজন হতো আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হতো৷ আমি হলাম এক যৌনদাসী৷ এক বছরেরও বেশি সময় আমার উপর যৌন অত্যাচার চালানো হয়৷ আমার সঙ্গে পশুপাখির মতো ব্যবহার করা হতো৷ কিন্তু আমার জন্য প্রচুর অর্থ নিতো সেই দালাল,'' বলেন সুনারশি৷
এক সময় সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে৷ ছয় মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান সুনারশি৷ তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নিজ দেশে৷ এখন সেই সুনারশির বয়স চল্লিশ৷ তিনি জানেন না তাঁর ভবিষ্যৎ! ইউনিসেফের হিসাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাচার হওয়া ১ লাখ নারী শিশু এখন যৌনদাসীর জীবন কাটাচ্ছে৷
আমরা যারা প্রবাসী তাদের কেউ টাকার জন্য, কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য। উদ্দেশ্য যেটাই হোক কথা একটাই সেটা আমরা প্রবাসী। নিজের দেশ, নিজের জন্মভূমী, নিজের দেশের মাটি আর প্রবাস জীবনের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। প্রবাস জীবনে যদি কেউ রাস্তায় হাটেন বা কোথাও বেড়াতে যান কিংবা অফিসে কাজ করেন সব জায়গাতে আপনি যে প্রবাসী তা অন্য সবাই প্রমান করে দেবে। না হয় বেশি খাতির করে, না হয় নাক উচিয়ে বলে দেবে আপনি প্রবাসী, আপনি অন্য জাতি, আপনি অন্য মানুষ। হা কথাটা সত্য কিন্তু আমরাও চাই স্বাভাবিক হতে, সবার সাথে এক সাথে চলতে, কথা বলতে। এর মধ্যে কয়েকটি জিনিস বাধা হয়ে দাড়ায়।
এর মধ্যে সবার আগে বাধা দেয় কথা। আর কথার জন্য চাই ঐ ভাষায় পূর্ণ দক্ষতা যা অর্জন করা একজন পূর্ণ বয়ষ্কের জন্য খুবই কষ্টকর। একজন ততটুকু শিক্ষতে পারে যতটুকু তার নিজের চলার জন্য প্রয়োজন। এজন্য ভাষাগত একটা বড় ব্যবধান থেকে যায়। এর পাশাপাশি আরেকটি সমস্যা খাবার। আমরা বাঙ্গালীরা ভাত, ডাল, মাছ আর মায়ের হাতের মমতা দিয়ে রান্না কারা বাংলার টাটকা স্বতেজ সব্জি, ভাজি খেতে অভ্যস্ত। এর বদলে যেকনো দেশের যত ভাল খাবারই হোক না কেন কিছু দিন পর তা বিদ্রহ করে। বিদেশে ঐ দেশের প্রচলিত খাবারের সাথে মানিয়ে নিতে প্রত্যেকে রীতিমত মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।
চলাফেরা বা বন্ধু বান্ধব সে তো আর এক অবস্থা। বন্ধু বলতে আমরা বাঙ্গালীরা যা বুঝি, যা জানি, যে ছবি মনের মাঝে ভাসে, সেটা থেকে আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য সব দেশের বন্ধুর সংঙ্গা ভিন্ন। আমরা বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাব, আড্ডা মারবো, ঘুরবো, সন্ধায় কোন এক চায়ের দোকান অথবা খেলার মাঠে অথবা বাজারে অথবা পছন্দের কোন জায়গায় বাসা, হাসি তামাসা করা, গল্প (যার কোন লাইন থাকে না) করতে করতে বাসায় ফেরার সময় পার হয়ে যাবে। কারন সময়ের কথা কারও মনে থাকে না।
এত কিছুর পরও প্রবাসীরা হাসিমুখে সব মেনে নেয় কারন প্রবাসী সবাই একটা স্বপ্ন নিয়ে প্রবাস জীবন বেছে নেয়। এরপর পরিবারের মানুষও যখন কথা বলে বা চিঠি লেখে তখন কেমন আছিস, কোন চিন্তা করিস না, আমরা ভালো আছি, বাড়ির কোন সমস্যা অথবা সমস্যার সমাধান, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত হচ্ছে কিনা এই বিষয়গুলই বলে। কেউ কেউ অনেক সময় ঝগড়া করে, তর্ক করে, নালিস করে।
আমার মনে হয় কোন প্রবাসীকে দেশ থেকে (অন্তত যাদের প্রবাস জীবনের অভিঙ্গতা নাই) একজন প্রবাসীর মনের অবস্থা, তার একাকিত্ত্ব, তার আবেগ, তার কষ্ট, তার উদাসীনতা, তার নিরব কান্না এগুলো বুঝতে পারে না। এটা সত্য যে এই অনুভূতী গুলো অনুভব করাও তাদের পক্ষে সম্ভব না। প্রবাসী জীবনে প্রবাসীরাই এই গুলো বেশি অনুভব করেন।
প্রবাস জীবনে কেউ দুঃখ পায় না, কারন দুঃখ পেতে আপনজন প্রয়জন হয়। আপনজন ব্যতীত অন্য কেউ দুঃখ দিতে পারে না। প্রবাস জীবন এমনই যে এই জীবনে দুঃখ পাওয়া যায় না। তবে প্রবাস জীবনের সঙ্গী হয় কষ্ট এবং এমন ভাবে লেগে থাকে যে পিছুই ছাড়তে চাই না। দুঃখ এবং কষ্টের মাঝে যে বিশাল ব্যবধান তা প্রবাসীদের মতো অন্য কেউ অনুভব করতে পারে না। প্রবাসে প্রবাসীরা যা অর্জন করেন সেটা অর্থ কিংবা শিক্ষা যায় হোক না কেন সেটা তার অতুলনীয় কষ্টের ফসল ছাড়া কিছুই না।
আপনাদের কাছে অনুরোধ, যারা দেশে আছেন আর বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-সজন অথবা পুত্র-কন্যা কিংবা স্বামী-স্ত্রী যেই প্রবাসী হোক না কেন সব কিছুর মধ্য দিয়ে প্রবাসীদের সেই কষ্ট, অনভূতি, বেদনা, নিরব কান্না একটু বোঝার চেষ্টা করবেন। তাদেরকে যতখানি সম্ভব একাকিত্ত থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করবেন, তাদেরকে যত খানি সম্ভব নিজেদের কাছে রাখার চেষ্টা করবেন। অপনি কল্পনাও করতে পারবেন না আপনার বিশেষ এই অনুভূতি একজন প্রবাসীর জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলবে। তার প্রবাস জীবন কতখানি আনন্দময় হয়ে উঠবে।
ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ। এই কথা সবাই মানলেও প্রবাসীদের জীবনে এই কথার বাস্তবতা খুজে পাওয়া মুশকিল। প্রবাসীদের ঈদটা একটু অন্য রকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটা অত্যান্ত কষ্টের। মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ।
এই ঈদকে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন আশা আকাংখা আর প্রস্তুতির কমতি থাকেনা। ঈদ আসে ঈদ যায় কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্ট এতটুকুও কমেনা। ফজরের আযানের পর দল বেধে ছুটা-ছুটি,দলবেধে পুকুরে ঘোসল শেষ করে সামান্য মিষ্টি মুখ করে নতুন জামা কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ঢাক দিয়ে বলেনা সেমাই খেয়ে যাও।
এখন আর নতুন জামা পরে সালাম করলে কেউ নতুন টাকার নোটগুলো হাতে উঠিয়ে দেয়না। এসবের একটাই কারন আর তা হলো আমি এখন বাংলাদেশ থেকে অনেক অনেক দুরে। সৌদি আরবের মরু প্রান্তরে। এখানে ঈদ মানে শুন্যতা, ঈদ মানে না পাওয়ার কষ্ট। পবিবার পরিজন ছাড়া ঈদ যে কত কষ্ট তা একমাত্র প্রবাসীরাই বুঝে। সকাল হলেই ঈদ এখনো আছি ডিউটিতে।
শেষ রাতে ঘোসল সেরে সন্ধ্যা রাতের বাশী বাত এর বাশি তরকারী খেয়ে ঈদের নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি। পুর্বাকাশে সুর্য মামার দেখা পাওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় ঈদের নামাজ । এর মাঝে আসতে শুরু করবে দেশ থেকে আপনজনদের মিসকল আর খুদে বার্তা।
ঈদের প্রস্তুতি জানার জন্য ফোন করেছিলাম শারমিন কে। ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতেই পাশ থেকে আমার দুই বছরের ছোট মেয়েটি কি যেন বলতে চাইছে । তার মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সে বুঝাতে চেয়েছে গতকাল বাজার থেকে আমার জন্য লাল টকটকে জামা আর বাঁশিওয়ালা জুতা এনেদিয়েছে। আর সেটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। ছোট্র মেয়েটার অস্পষ্ট কথাগুলো শুনে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো ।
মা-মেয়ে দুজনের কথা শুনছিলাম আর চোখের পানি মুছতেছিলাম টিস্যু দিয়ে ।সবকিছু খুলামেলা না বললেও এতুকুটু বুঝতে পেরেছি ঈদে খরচ করার জন্য যে টাকা পাঠিয়েছি তা বর্তমান সময়ের জন্য যথেষ্ট নয়। বললাম আজকালের মধ্যেই আরো কিছু টাকা পাঠিয়ে দিবো টেশন করবেন না। জানলাম সবার জন্য কেনাকাটা শেষ। এখন শুধু অপেক্ষা ঈদের দিনটীর জন্য।
এতূকু জেনে ভালো লাগলো আমাদেরর কষ্টের উপার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের পরিবার সুখে -শান্তিতে ঈদ করতে পারছে। এটুকুই প্রবাসীদের স্বার্থকতা। ঈদের নামাজ আর দেশে ফোন করার পর কষ্টের তীর্বতাটাকে আরো ভারী করে ঘুমানোর প্রস্তুতি। বুকফাটা কষ্ট আর যন্ত্রনাটাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা যেন কষ্টের ভারটা একটু কমে।
আর তাতেই দুপুর ঘনিয়ে পুর্বের সুর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে সামান্য কিছু মুখে দিয়ে দু'এক জন বন্ধুকে সাথে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের কষ্টের দিনটি।
মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের সুখের জন্য, সব মায়া ত্যাগ করে প্রবাসে এসেছিলো। জানিনা এবার কার সুখের আসায় দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে গেলো। বাড়ি ছিলো রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে। উনার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, মানুষ টা অনেক সহজ-সরল টাইপের ছিলেন, সবসময়ই সোজা সাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করতেন। নিজের মনের কথাটা ঠিকমতো প্রকাশ করতেও পারতেন না, সিগারেট কিংবা কোন বাজে অভ্যাসও ছিলোনা। নয় মাস আগেই ছুটিতে দেশে গিয়ে বিয়ে করে এসেছিলেন। বাড়িতে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী নিয়ে ই উনার যৌথ ফ্যামিলি ছিলো।
উনার রুমমেটদের মাধ্যমে জানা গেছে, কিছুদিন থেকেই নাকি উনি বেশ উদাস আর মন খারাপ করে থাকত। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করত না, রাতে সবাই ঘুমাইত ওনি বেডে শুয়ে কেঁদে বালিশ ভিজাইতো। সুইসাইড করার কারণ টা আর শেষ ইচ্ছে টা মরার আগে চিরকুটে লিখে গেছিলেন.. “মাস দুয়েক আগে উনার ভিসা নিয়ে একটু প্রবলেম হয়েছিল, দুইমাস ধরে বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারেনি। সেলারীর সব টাকাই ভিসার ঝামেলা মিটাইতে শেষ হয়ে গেছিলো। ফ্যামিলির সবাই ভাবছিল, ওনি টাকা টা বৌয়ের পারসোনাল একাউন্টে পাঠাচ্ছে, বাড়িতে ফোন দিলে সবাই উনার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলত, কল কেঁটে ফোন বন্ধ করে রাখত। শেষ পনেরদিন মা উনার সাথে কথা বলেনি। বৌ ভাবছে টাকা বাজে পথে খরচ করতেছে, বৌও এসব নিয়ে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে গেছিলো। উনার সমস্যা টা কাউকে বুঝাতে পারেনি, কিংবা কষ্ট টা কেউ বুঝেনি, ঘরের বৌ এমন কি গর্ভধারিনী মা ও না।। ফ্যামিলির কাছ থেকে পাওয়া আঘাত টা সহ্য করতে না পেরেই পৃথিবীর মায়াও ত্যাগ করে নিজ রুমে ফাঁসি দিয়েছেন।
চিরকুটে লেখা শেষ ইচ্ছে টা ছিলো, “লাশ টা যাতে দেশে না পাঠানো হয়, এখানেই দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হয়।” …শেষ ইচ্ছে টা হয়ত পূরণ করা সম্ভব হবেনা কারণ কোম্পানি থেকে লাশ টা দেশে পাঠিয়ে দিবে। তবে কি পরিমাণ আঘাত আর কতোটুকু কষ্ট পাইলে একটা মানুষ মরার আগে এরকম আবদার করতে পারে ??? ভাই সিরিয়াসলি একটা কথা বলি, প্রবাসীরা ভোগ- বিলাসিতা কিংবা নিজেদের সুখের জন্য বিদেশ আসেনি, ফ্যামিলির কথা চিন্তা করেই এসেছে।
দেশে যারা আছে তারা মনে করে প্রবাসী রা অনেক সুখে আছি, টাকার পাহাড়ে কিংবা টাকার গাছ নিয়ে বসে আছে, ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুধু টাকা পাঠাবো। কিন্তু আমরাতো বুঝি মাস শেষে টাকা পাঠানোর জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয়। আপনার ভাই, ছেলে, স্বামী, বাবার প্রবাস লাইফের একদিনের কষ্ট যদি কখনো দেখতেন, সাথে সাথে বলতেন বাড়িতে চলে আসতে প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব তবুও প্রবাসে থাকতে হবেনা।
প্রবাসীদের কষ্ট বুঝতে বেশি কিছু করতে হবেনা, “ভোররাত চার টায় ঘুম থেকে উঠে 45° সেলসিয়াস তাপমাত্রার সারাদিন রৌদে পুঁড়ে 15/16 ঘন্টা ডিউটি করে রাত নয় টায় রুমে গিয়ে কিচেনে গরম পাতিলের ছ্যাঁকা খেয়ে রান্না করার কষ্ট টা একটু আন্দাজ করুন। অবশ্যই, দেশে থেকে আপনারা কি করে বুঝবেন/ দেখবেন আর বলবেন। আপনারা তো প্রবাসীদের রক্তশুষে ভালোই মৌজে আছেন। আমরা যারাই প্রবাসে আছি, আমরা তো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী, হাজারো কষ্ট বুকে নিয়েও বলি অনেক ভাল আছি। কোন দিন বুঝতে দেইনি আপনার সুখের জন্য আমাদের জীবনের মূল্যবান দিন গুলোকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছি।
দেশের মানুষ গুলোর কাছে একটাই অনুরোধ, বিদেশে আপনার ফ্যামিলির যেই থাকুক বাবা, ভাই, স্বামী, বন্ধু, অন্যকোন সম্পর্কের আত্মীয় হোক তাদের সাথে একটু ভাল ব্যবহার করেন, তাদেরকে একটু ফোনে সময় দেন, একটু ভালো ভাবে কথা বলুন। তারা আপনাদের কাছে এরচেয়ে বেশি কিছু আশাও করেনা।কোনরকম মেন্টালি পেইন দিবেন না, কাছের মানুষের ছোট একটা কথাও ধনুকের তীরের মতো বুকে বিঁধে। সেসব ব্যথায় মেন্টালি সার্পোট কিংবা সান্ত্বনা দেওয়ার মতো এখানে ওনাদের কেউ নাই, সবরকম পেইন একাই নিতে হয়। প্রবাসী ভাই-বন্ধু, দেশ থেকে যে যাই বলুক না কেন, মনে কিছু নিবেন না। সামর্থ্য যতটুকু আছে ফ্যামিলির জন্য ততটুকুই করবেন।কোন রকম আঘাতে ভেঙ্গে পড়বেন না। আর কোন রেমিটেন্স যোদ্ধা / সহযোদ্ধা কে এভাবে আমরা হারাতে চাই না।
একজন প্রবাসী আরো একজন প্রবাসীর সাথে যেভাবে জীবনের দুঃখ যন্ত্রনাভাগাভাগি করে আপন পরিবার পরিজনের সাথে
এই ভাবে প্রান খোলে কথা বলতে পারেনা। কারন মাত্র একটা “পিছনে রেখে আসা মানুষ গুলো সুখে থাকুক আমাদের কষ্টযেন ওদেরকে স্পর্শ করতে না পারে”
দেশের মানুষ শুধুই আমাদের সুন্দর সাস্থ্যআর হাসি মাখা মুখটাই দেখে, তাই আসল সত্যটা হাসি আর চোখে দেখা সুখের আবরনে ঢাকাপড়ে যায়।
আর এক ধরনের ভূ্ল ধারনা বদ্ধমূ্ল হয়। প্রবাসের বাস্তব চিত্র আমিযেভাবে দেখেছি তার সাথে দেশের মানুষের অনেক দ্বিমত থাকতে পারে, তবে যাদেখেছি তা কাগজ কলমের
সাহায্যে আপনাদের কাছে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো।তির্থের কাকের মত আশায় চেয়ে থাকা প্রবাসী জীবনের এক একটি দিন যা কাউকে সহজেবুঝাতে পারি না।
প্রবাসে টাকা আছে তবে সুখ যে নেই তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সবার ধারনা প্রবাসমানেই হলো সুখ আর সুখ। বাস্তব সত্য হলো আমরা নামে মাত্র শুধু
বেঁচে থাকিতবে বেঁচে থাকার স্বাদ আমাদের ভাগ্যে নেই। ভালোবাসাহীন জীবন নিয়ে বুক ভরাকষ্টের পাহাড় নিয়ে সুখের আশে পাশেও যাবার ভাগ্য হয় না আমাদের।
মাঝে মাঝেমনে হয় আমরা বেঁচে নেই যাকে বলে জিন্দা লাশ। আমরা প্রবাসীরাও এক একটাজিন্দা লাশ। যে সুখের আশায় রক্ত বাঁধনের মানুষ গুলোকে
পিছনে রেখে একদূর পথপাড়ী দিলাম কিন্তু সুখের মুখ দেখা হলো না।
বুক ভরা শুন্যতার শুন্যস্থান সঠিক ভাবে পুর্ণ হলোনা। কষ্ট আর হাহাকারবুকে নিয়ে সুখের আশায় বৃথা এই দৌড় ঝাঁপ দিতে দিতেই আমাদের জীবনে প্রদীপনিভে যায়।
(প্রবাসে কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের মত অসুখী নয়, তাদের টাকাপয়সা সবই আছে তবে ওরা সংখ্যায় খুবই কম ওদের কথা আলাদা।
আবার এই সুখীমানুষের অসুখের কাহিনীরও শেষ নেই) টাকা পয়সা সব সময় অসুখীর মূল বষ্য নয়।জীবনে টাকার প্রয়োজন তা আমি অস্বীকার করবো না
জীবনে টাকার প্রয়োজন আছে, জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজাতে হলে টাকা অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। টাকা যেআবার সব সমস্যার সমাধান তাও স্বীকার করবো না।
যেখানে মানুষের প্রয়োজনসেখানে টাকা একেবারে অর্থহীন হয়ে যায়। জীবনে সুখী হবার জন্য হিসাবের কিছুবিষয় আছে আমাদের জ়ীবনে প্রতিফলিত না হলে আমরা সুখের মুখ দেখতে পাই না।প্রবাসীরা কোন সময় পরিপূর্ন সুখী হবার স্বপ্ন দেখে না।
আমাদের চাহিদা একেবারে সিমীত, পরিবার পরিজন নিয়ে এক চিলতে হাসি ভাগাভাগিকরে একই ছাদের নিচে হাতে হাত ধরে বসবাস করা।
সুখে দুঃখে ভালোবাসার মানুষেরবুকে মাথা রেখে আগামীদিনের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসআজ আমরা প্রবাসী, হিসাবের সুখটুকু আমাদের ভাগে আর পড়ে না।
কাংগালের মতমানুষের সুখ দেখে দেখেই বেঁচে থাকতে হয়, চোখের জলে বুক ভাসাতে হয় দিনের পরদিন রাতের পর রাত।
অনিশ্চয়্তার মাঝে কেটে যায় আমাদের জীবনের এক একটি দিন রাত বড়ো অবহেলায়বড় অনাদরে। বুকের মাঝে সমাহীত কষ্ট গুলো বুকের মাঝেই কেঁদে কেঁদে মরে।
আমাদের চারপাশে শান্তনা দেবার কেউ নেই, আমাদের মা নেই ভাই বোন কেউ নেই যারসাথে এক দুঃখ কষ্টের কথা বলবো। সারাদিন কাজ শেষে বাসায়
ফিরে যখন শুন্য চারদেয়ালের মধ্যে রাত পোহাতে হয় তখন শুরু হয় কাংখীত জীবনের চুলছেড়া হিসাবকিতাব।
যোগ বিয়োগের হিসাব আর মিলে না, বড় ধরনের গড়মিল দেখা দেয়, হাহাকারভরা অশান্ত মন হু হু করে কেঁদে উঠে গন্ড বেয়ে যন্ত্রনার বিষাক্ত জল ঝরতেথাকে।
যন্ত্রনা ভূ্লে থাকার এই সহজ উপায় প্রতিটি প্রবাসী ভাই বোন বেশ ভালোকরে রপ্ত করেছেন যা অনেকেই জানে না ।
ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রেখে হাসির মুখোস পড়ে বলতে হয় ভালো আছি মা, তোমরাও ভালো থেকো।
মেয়ের বয়স ২০ বছর হলেও তাকে কখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি মাহতাব মিয়ার (ছদ্মনাম)। উভয়পক্ষে শুধু ছবি দেখেই বাবা-মেয়ের পরিচয়-সম্পর্ক।একদিন মুখে দিগন্ত ছড়ানো হাসি নিয়ে সেই মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা পাঠাতে ব্যাংকে আসেন মাহতাব।আমি তখন মালয়েশিয়ার অগ্রণী রেমিটেন্স হাউজে পার্ট টাইম চাকরি করি পড়াশোনার ফাঁকে। প্রতিদিন বাংলাদেশি শ্রমিক, চাকরিজীবীদের টাকা পাঠাই দেশে আত্মীয়দের কাছে।অনেক গল্প, অনেক কষ্ট, অনেক আনন্দের কথা টাকাগুলোর সঙ্গে আসে-যায়। এর মধ্যে এমন দুই-একটা গল্প যেন গেঁথে যায় আমাদের মনে।
মাহতাব মিয়া ২০ বছর আগে মালয়েশিয়া এসেছিলেন অবৈধ পথে। দেশ ছাড়ার সময় সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে আসেন তিনি।
এরপর মেয়ে জন্মেছে, বড় হয়েছে, স্কুলে পড়াশোনাও করেছে। একসময় ভাল একটা সম্বন্ধ এসে বিয়েও ঠিক হয়েছে।
যে বাবার প্রবাসের রোজগারে এই সব সম্ভব হচ্ছে সেই বাবাকে মেয়ে কোনও দিন সামনাসামনি দেখেনি।
টাকা দিতে এসে মাহতাব বলেন, মেয়ের বিয়ের খবরে তিনি যে আনন্দ অনুভব করছেন তাতে নিজের এতদিনের কষ্ট যেন ভুলে গেছেন।
এই ঘটনার প্রায় বছরখানেক পর বৈধ কাগজ হাতে পেয়ে দেশে ফেরেন মাহতাব, যখন তার মেয়ে ছিলেন সন্তানসম্ভবা।
ঠাণ্ডু মিয়ার বয়স চল্লিশের কোঠায়। ১৮ বছর আগে এসেছিলেন মালয়েশিয়ায় অবৈধপথে। পরের আঠারোটা বছর মুখ বুজে কাজ করে গিয়েছেন।
জেলে যাওয়ার ভয় আর কষ্টের কাজ মাথায় নিয়ে মাসে মাসে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন।
নিজের জীবনের স্বর্ণ সময় পার হয়ে যাওয়ার পর একদিন বৈধ কাগজ হাতে আসে। কাছের বন্ধুরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে ঠাণ্ডুকে দেশে পাঠান বিয়ে করাতে।
এর কিছু দিন পর আবার তার বন্ধুরা ব্যাংকে আসেন। ঠাণ্ডু বিয়ে করছে; সবাই মিলে টাকা তুলে পাঠান বিয়ের উপহার হিসাবে।
দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা। মালয়েশিয়াতে কর্মরত প্রবাসীরাও তার অংশীদার।
বৈধপথে এখানে কাজ করতে আসার নিয়ম ও সুযোগ- সুবিধার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা না
থাকায় অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমান বিদেশে, যার পরিণতিতে অমানবিক জীবনযাপন করতে হয় অনেককে।
যারা নিজ দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমায় তাদের প্রত্যেকের পিছনে থাকে একটা গল্প, অবশ্যই সব যে দুঃখের গল্প তা নয়।
প্রবাসীদের নিয়ে আছে অনেক কল্পনা/জল্পনা। বাংলাদেশে যখন ছিলাম, বলাই বাহুল্য নিজেরও সীমাহীন ভুল ধারণা ছিল উন্নত বিশ্বে থাকা প্রবাসীদের নিয়ে (অন্তত টাকা-পয়সা নিয়ে)।
নিজে এই বিভুঁইয়ে নেমে বিভিন্ন সময় প্রচণ্ড বৈরী সময়ের মুখোমুখি হয়েছি, ধীরে ধীরে জেনেছি জীবনের আরো অনেক কঠিনতম সত্য।
জেনেছি মধ্যবিত্ত সংসারের টানাপোড়েনে থাকা যে ছেলেটিকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত মা-বাবা আগলে রেখেছে পারিবারিক আবহে, মা-বড় বোন আদর করে
হয়তো কোনদিন এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে দেয়নি, ঘুমুতে যাওয়ার আগে টানাতে হয়নি কোনদিন মশারীটাও..
সেই ছেলেটিকে কাজ করে পড়ালেখা করতে হয়, নিজের খাবার নিজেকেই জোগাড় করতে হয়।
যে ছেলেটি অল্প কিছু টাকা নিয়ে চলে আসে এই পরবাসে সেই ছেলেটির অনেক সময় কাজের অভাবে হয়তো না খেয়েও থাকতে হয় দুই/এক বেলা।
কারো কারো হয়তো সময় মত একটা কাজও জোগাড় করা হয়ে উঠে না, সে যে এই কথা স্বদেশে নিজের পরিবারকে জানাবে তারও উপায় থাকে না অনেক সময়।
যে মেয়েটিকে পরিবার তেমন কোন কাজই শেখায়নি, সেই মেয়ে বাইরে এসে শুধু কাজের প্রয়োজনে যখন কোন ক্লিনিং জব করে স্বাভাবিকভাবেই তার
উপর যে মানসিক চাপ যায় শুধু একটা বাংলাদেশী মেয়ে হিসেবে, সেটা হয়তো তার পরিবারের কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব হবে না বা সেই মেয়েটির পক্ষে প্রকাশ করাও হয়ে উঠে না কোনদিন।
এটা একটা কাজ, এই উপলব্ধি হতে কারো কারো লেগে যায় অর্ধ যুগ।
এখানে ভালো লাগা বলতে কঠোর পরিশ্রমের দিন শেষে ”রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা স্বস্তিময় আরাম আয়েশ” ”’জীবন থেকে কোনো সময় অযথাই নষ্ট না হয়ে যাওয়া
” ”সপ্তাহান্তে প্রবাসী বন্ধুদের সাথে খাওয়া-দাওয়া-আড্ডা-ধুম” ”জোর করে আনন্দ, অনেকটা ফুল ছাড়াই বসন্ত এমন করে ভাবার চেষ্টা”!!!
তবে ব্যক্তি বিশেষে প্রবাসীদের না বলা কষ্টের তালিকাটা একটু বেশীই লম্বা, অনেক বেশী পরিশ্রম, সময়ের সাথে ছুটে চলতে চলতে ক্লান্তি
দেশে থাকা পরিবারের কাছে প্রতি বছর যেতে না পারা, সময় মত টাকা না পাঠাতে পারা, গাড়ি হলে বাড়ির চিন্তা
বাড়ি হলে ঘুরাঘুরির চিন্তা, একের পর এক লোন পরিশোধের চাপ, খুব কষ্টের কোন মুহূর্তেও কাছের কোন প্রিয় মুখ কাছে না থাকা, দেশে সময় মতো ফোন করতে না পারা,
কখনও খুব কাছের মানুষ হারানোর খবর পেয়েও কিছু করতে না পারা, চারপাশে থাকা অনেকেই পছন্দ না হলেও চেপে যাওয়া
সময়ে খুব কোমল অনুভুতিগুলোই ভোঁতা হয়ে যাওয়া বা এর মাঝেই হয়তো হঠাৎ আবিষ্কার করা কাছের মানুষেরা ভুল বুঝে বসে আছে দেশে!
ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করতে চাই খুব প্রিয় আর কাছের মানুষেরা যোগাযোগ নিয়মিত না হলেও ভুল বুঝবে না হয়তো
ঠিক বুঝে নেবে আপনার আমার সীমাবদ্ধতাগুলো। তবে বাংলাদেশে যাদের জীবন অনেকটাই কাঙ্খিত, যেসব ছেলেরা মা-বাবাকে এক
সংসারে রাখার মত অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছেন, তারা যদি সবটুকু আবেগ মায়া-মমতা আর যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তাদের বয়স্ক মা-বাবাদের জীবনকে একটু স্বস্তি বা সুখ দিতে
পারেন, সেটাই হয়ত দূরে থাকা অন্য দুর্ভাগা ভাই-বোনের জন্যে এক টুকরো সুখের সংজ্ঞা হতে পারে।
বাংলাদেশের মেয়েদের তো বাস্তবতা মা-বাবাকে ছেড়ে অন্য অপরিচিত কিছু মানুষকে ঘিরেই নুতন ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তোলা।
সেই মেয়েরা যদি নতুন সংসারের নতুন মা-বাবা’র প্রতি সবটুকু সদয় থাকার ব্যাপারে সবটুকু আন্তরিক হয়ে থাকার চেষ্টা করে
তাহলেও হয়তো জীবনের শেষ সময়ে থাকা বাংলাদেশের সব মা-বাবা’রা ভালো থাকতো, আর জীবনের প্রয়োজনে দেশের বাইরে থাকা জীবনের ঘূর্ণিপাকে পর্যুদস্ত কিছু
মানুষ একটু ভরসা নিয়ে একটু ভালো থাকতে পারতো; আরো একটু বেশি উৎসাহ নিয়ে আরো একটু বেশী কষ্ট করে হলেও দেশে
থাকা পরিবারের জন্যে অন্তত আর্থিক সচ্ছলতার জন্যে কাজ করতে পারে নির্ভার হয়ে।
বাংলাদেশে থাকা সবাইকে অনুরোধ, কাছে থাকা মা-বাবা’কে যেভাবেই হোক কিভাবে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়
সজীব আর সুন্দর করে ভাবতে হয়, জীবনকে শুধু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দেখতে হয় এবং ভিতর থেকে সব পরিস্থিতিতে শক্ত থেকে নিজের
পায়ে চলতে পারার মত জীবনের আশির্বাদ’টা ধরে রাখা উচিত, সেটা একটু ধৈর্য্যের সাথে বুঝিয়ে দিন তাঁদেরকে, এটাই তাঁদের জন্যে অনেক বড় একটা পাওয়া হবে।
(দূরে থাকা মা-বাবা’র জন্যে ভীষণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে আজ হৃদয়ে, কিচ্ছু করতে পারলাম না তাদের জন্যে, কিচ্ছু না.. সেই রক্ত দিয়েই এই লেখা)!!!
দেশে বেকারত্বের কারনে ৭৮ লাখের ও বেশী বাংলাদেশী আজ প্রবাসে কাজ করছে। তাদের বেশীর ভাগ অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছে।
তাদেরকে অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমরা প্রবাস জীবন সংগ্রামে কঠিন পরিণতির শিকার হয়ে জীবিকার প্রয়োজনে
একটুকরো সোনালী স্বপ্নের প্রত্যাশায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মাতৃভূমি সোনার বাংলা থেকে প্রবাসে পাড়ি
জমায়,আত্ম-প্রত্যয়ের দৃঢ়তায় সুস্থ ও সুন্দর জীবন গড়ার সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
এভাবেই সোনালী স্বপ্নের ঘোড়ায় সোয়ার হয়ে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী আজ মা, বাবা, ভাই, বোন স্ত্রী, কন্যা, পুত্র, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলকে ছেড়ে প্রবাসী জীবন বেছে নিয়েছে।
বহির্বিশ্বের যে যে এলাকায় বাংলাদেশীরা পাড়ি জমাচ্ছে, তন্মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কবে কখন বাংলাদেশীরা লুহিত
সাগর ডিঙ্গিয়ে এ ধুসর মরুদ্যানে পাড়ি দিয়েছিল তার সঠিক তথ্য যদিও আমার নিকট নেই, তবু এতটুকু বলা চলে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের ভীড় দিন দিন কমতে শুরু করছে।
প্রবাসীরাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, শরিরের রক্ত পানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অবদান রাখছে।
কিন্তু এ অবদান রাখার বিনিময়ে প্রবাসীরা না পরিবার পরিজন থেকে আস্থা অর্জন করতে পারছে, না সরকার থেকে উল্লেখ করার মত কোন সহযোহিতা-সহানুভূতি পাচ্ছে, না প্রবাসে ইজ্জত মান
সম্ভ্রম নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার অর্জন করতে পেরেছে। এসব কিছুর বিনিময়ে খুজে আনতে চায় শান্তি ও
স্বচ্ছলতা নামক সোনার হরিণকে। বছরের পর বছর অনায়াসে কাটিয়ে দেন প্রবাসী হিসেবে।
বাংলাদেশিরা অপরাদ করার কারন হচ্ছে। অধিক রিক্রোটমেন্ট চার্জকে আমি অন্যতম কারন বলে মনে করি...যেখানে ভারত থেকে একজন
শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য আসতে মাত্র ৩৫,০০০ থেকে সবোর্চ্চ ৫৫,০০০ রুপি লাগে সেখানে বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক আসতে বর্তমান প্রায় ৫-৭ লক্ষ টাকা লাগতেছে...এখন একজন
শ্রমিক ধার দেনা করে কিংবা ভিটা-মাটি বিক্রি করে এখানে এসে যখন কাঙ্খিত মাত্রায় উপার্জন করতে না
পারে তখন অপরাধ করতে অনুপ্রানিত হয় । যেটা নিন্দনীয় মনে হচ্ছে।অনেকেই এরকম আছেন যারা মনে করে –
এত টাকা খরচ করে বিদেশে এসেছি, টাকা রোজগার করার জন্য। সুতরাং যে কোন উপায়ে টাকা নিজের পকেটে আসলেই হলো। তা কার টাকা, কিভাবে কোথ্থেকে আসল
বৈধ না অবৈধ, এটার জন্য কোন জবাদিহি করা লাগবে কি না – এসব যেন কোন দেখার’ই বিষয় না।
অবশ্য এটা আমাদের একটি প্রধানতম জাতীয় ব্যাধিও বটে, যা সংক্রমনের মাধ্যমে কম বেশী সবার মধ্যেই দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার নাম দুর্নীতি। দেশে জাতীয় পর্যায়ে যেমন লুটেপুটে খাওয়ার একটা মহোৎসব চলে আসছে
প্রবাসে এসেও তাদের বংশবদরা যেন সেই এক’ই ধারা বজায় রাখার মহড়ায় নেমেছে। এধরণের দুর্নীতি থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তবে প্রত্যেক বাংলাদেশী যে যেখানেই থাকুক না কেন, তাদেরকে সে দেশের নিয়ম নীতি, আইন শৃঙ্খলা এবং আদব কায়দা সম্পর্কে প্রথমে
ভাল ভাবে জেনে নিতে হবে এবং অতি গুরুত্বের সহিত সব বিষয়গুলি পালন করতে হবে। হযরত আলী (রাঃ) নিজ পুত্র হুসাইন (রাঃ) কে নসীহত করতে গিয়ে বলেছেনঃ " হুসাইন!
যদি তুমি কোন অপরিচিত শহরে যাও, তাহলে সেই শহরবাসীর আদব কায়দা সম্পর্কে সতর্ক থাকবে।
" এভাবেই যদি সবাই চলে তাহলে প্রবাসীদের দ্বারা দেশের মান ক্ষুন্ন হওয়ার কোন কারন থাকবেনা।
সরকারকে বলব আমাদের সব প্রবাসী শ্রমজীবি ভাইদের কষ্ট জড়ানো ঘামের মূল্যায়ন যাতে কষ্টের আড়ালে হারিয়ে না যায় সেজন্য সময় থাকতেই সবাইকে সচেতন হতে হবে।
পদক্ষেপ নিতে হবে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের ভূমিকা সঠিক ভাবে তুলে ধরতে হবে।
• জীবন এত ক্ষণস্থায়ী বলেই মাঝে মাঝে সবকিছু এমন সুন্দর মনে হয়।
• বেশি দিন ভালবাসতে পারে না বলেই ভালবাসার জন্য মানুষের এত হাহাকার।
• তুমি যদি কাউকে হাসাতে পার, সে তোমাকে বিশ্বাস করবে। সে তোমাকে পছন্দও করতে শুরু করবে।
• হৃদয়ের গভীরে যার বসবাস, তাকে সবকিছু বলতে হয় না। অল্প বললেই সে বুঝে নেয়।
• মানবহৃদয় আয়নার মত। সে আয়নায় ভালবাসার আলো পড়লে তা ফিরে আসবেই।
• কাগজে-কলমে কোন সৌন্দর্যের যথার্থতা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সৌন্দর্যের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াতে হয়।
• সুখী হওয়ার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে মানুষের। এ জগতে সবচেয়ে সুখী হচ্ছে সে, যে কিছুই জানে না। জগতের প্যাঁচ বেশি বুঝলেই জীবন জটিল হয়ে যায়।
• সব শখ মিটে গেলে বেঁচে থাকার প্রেরণা নষ্ট হয়ে যায়। যেসব মানুষের শখ মিটে গেছে তারা অসুখী।
• যার কাছে ঘুম আনন্দময় সে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। অতি সামান্য জিনিসও মানুষকে অভিভূত করে ফেলতে পারে।
• খুব বেশি সুন্দর কোন কিছু দীর্ঘস্থায়ী হয় না। খুব ভাল মানুষরাও বেশি দিন বাঁচে না। স্বল্পায়ু নিয়ে তারা পৃথিবীতে প্রবেশ করে।
• যখন কেউ কারো প্রতি মমতা বোধ করে, তখনই সে লজিক থেকে সরে আসতে শুরু করে। মায়া-মমতা-ভালবাসা এসব যুক্তির বাইরের ব্যাপার।
• বেশি নৈকট্য দূরত্বের সৃষ্টি করে। প্রিয়জনদের থেকে তাই দূরে থাকাই ভাল। সম্পর্ক স্থির নয়, পরিবর্তনশীল।
• অতি দ্রুত যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, উষ্ণতা কমে যেতেও তার সময় লাগে না।
• স্মৃতি সুখ বা দুঃখের যাই হোক, সবসময়ই কষ্টের। দুঃখ-কষ্ট-বেদনা ছড়াতে হয় না।
ছড়িয়ে দিতে হয় আনন্দ। দুঃখ ভুলে যাওয়া কঠিন। তবে সুখস্মৃতি মনে রাখা তার চেয়েও একটু বেশি কঠিন।
• মোহের কাছে পরাজিত হওয়া ঠিক নয়। কিন্তু খুব কম মানুষই মোহযুদ্ধে অপরাজিত থাকে।
• সুন্দর স্বপ্ন আফসোসেরও কারণ। বাস্তবতা যতই মধুরই হোক, স্বপ্নের মত হয় না।
স্বপ্ন পূরণ হতেই হবে সেটা কিন্তু সত্যি নয়। স্বপ্ন দেখতে হয় আর সেটার জন্য কাজ করতে হয় - এটা হচ্ছে সত্যি।
• প্রতিজ্ঞা করার আগে তাই একটু হলেও ভাবা উচিত। মিথ্যা দিয়ে হাসানোর চেয়ে সত্য বলে কাঁদানোই শ্রেয়।
• চোখের জলের মত পবিত্র কিছু নেই। এই জলের স্পর্শে সব গ্লানি-মালিন্য কেটে যায়।
• কিছু কথা শুধু নিজের ভেতর রাখো। দ্বিতীয় কেউ জানবে না। কোনভাবেই না। দুই জন জানলে বিষয়টা গোপন থাকে।
তিনজন জানলে নাও থাকতে পারে। আর চারজন জানা মানে সবাই এক সময় জেনে যাবে।
• রহস্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। কৌতূহলেরও জন্ম দেয়।
• বলার আগে শুনে নাও, প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে চিন্তা কর, সমালোচনার আগে ধৈর্য্য ধর, প্রার্থনার আগে ক্ষমা চাও, ছেড়ে দেয়ার আগে চেষ্টা কর।
• না চাইতেই যা পাওয়া যায়, তা সবসময় মূল্যহীন।
• পায়ের আলতা খুব সুন্দর জিনিস। কিন্তু আলতাকে সবসময় গোড়ালীর নিচে পড়ে থাকতে হয়, এর উপরে সে উঠতে পারেনা।
• অতিরিক্ত যেকোন কিছু পতন নিয়ে আসে। সবকিছু তাই নির্দিষ্ট সীমায় রাখাই শ্রেয়।
• চুপ থাকা খুব সহজ একটা কাজ। পারস্পরিক বহু সমস্যার সমাধান শুধু চুপ থাকলেই হয়ে যায়।
কিন্তু মানুষের সবচেয়ে বড় অযোগ্যাতা হচ্ছে সে মুখ বন্ধই রাখতে পারে না, অপ্রয়োজনে অনর্গল বকে যায়।
• দুর্নামকারীরা সাধারণত আড়ালপ্রিয়। সামনে ভাল মানুষ সেজে বসে থাকে।
• বুদ্ধিহীনরা তর্কবাজ হয়। নিজের বুদ্ধির অভাব তর্ক দিয়ে ঢাকতে চায়।
• বিচার যখন থাকে না, সমস্যার সমাধানও হয় না। সব সমস্যা বরং পুঞ্জীভূত হয় আরও। আমাদেরও তাই হচ্ছে।
• পরিস্থিতিই মানুষকে তৈরি করে। পরিস্থিতি যখন বদলে যায়, মানুষও তখন পাল্টে যায়। মানুষ আসলে জলের মত। পাত্রের সঙ্গে সঙ্গে সে তার আকার বদলায়।
• এই পৃথিবীর প্রতিটি দিনই সম্ভাবনার। সম্ভাবনাময়ী এখানে আসলে আমাদের প্রতিটি মুহুর্তই।
• মানবজাতি ধীরে ধীরে সব সুযোগকেই উপলদ্ধি করবে। অবশ্যই সব সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিবে।
• উপকার করার পর 'করেছি' বলার চেয়ে সাহায্য না করাই শ্রেয়।
• জীবনের জটিল ও মূল বিষয়গুলো মানবজাতির কাছে রহস্যাবৃত হয়ে থাকে। এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে?
• চলতে শুরু না করলে পথ হারাবার ভয় থাকে না। কিন্তু তাতে গন্তব্যে পৌছানোর আশাও ফুরিয়ে যায়। মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ কারও কাছ থেকে বিদায় নেয় না।
মায়া নামক ভ্রান্তি তাকে ত্যাগ করে। গ্রাস করে তখন ভয় নামক অনুভূতি। মৃত্যু ভয়াবহ নয়, কুৎসিতও নয়। এর সৌন্দর্য জন্মের চেয়ে আসলে কোন অংশে কম নয়। এই অংশের সাথে পরিচিত নই বলেই আমরা একে এত ভয় পাই।
• ভয়াবহ বিপদ কিংবা দুর্যোগের সামনে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। একে অন্যের কাছে আশ্রয় খোজেঁ, আশ্রয় খোঁজে প্রকৃতির কাছে। সবাই দাঁড়িয়ে যায় একই কাতারে।
বৈষম্য ও অনাচার বেষ্টিত এই আবাসভূমি হয়ে যায় সাম্যবাদের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। বড় ধরণের বিপদ-আপদের প্রয়োজন তাই পৃথিবীতে এখনও আছে।প্রতিটি বিপদের দুটি অংশ থাকে। বিপরীত অংশটি হল জীবন।
• নগদ টাকা আলাদীনের চেরাগের মত। হাতে থাকলে পৃথিবী নিজের হয়ে যায়।
• পথ কখনও শেষ হয় না। দীর্ঘ ভ্রমণের পর গন্তব্যে পৌছেও কেউ স্থির থাকে না। ছুটতে শুরু করে অন্য কাজে, অন্য পথে, অন্য আরেক লক্ষ্যস্থলে।
• এক একটি দিন শেষ করে আমরা এগুতে থাকি চুড়ান্ত যাত্রার পথে। মানবমৃত্যুই পথের সমাপ্তি। নিরন্তর ছুটে চলা মানুষের শেষ গন্তব্য। সবাই মারা যায়। কিন্তু সবাই চলে যায় না।
• নিঃস্বার্থ কর্মী মানুষরা মৃত্যুর পরও থেকে যায়, কর্মপূণ্যে থেকে যায় মানুষের মনে - যুগের পর যুগ ধরে।
• সৎ থাকো। অবশ্যই সুখী হবে।
মানুষ আমাকে মনে করে আমি খুব শক্ত মেয়ে৷ কিন্তু মানুষ জানে না ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছি৷
আমি গোপনে অশ্রু ফেলি, কিন্তু কাউকে আমি আমার কান্না দেখাতে চাই না'৷ কথাগুলো বললেন সুনারশি৷ ইন্দোনেশিয়ার এক নারী৷
এটা অবশ্য তার আসল নাম নয়৷
১৫ বছর আগে৷ সুনারশির বয়স তখন ১৭৷ খুব গরিব ঘরের মেয়ে৷ স্কুলের ফি দেয়ার মত কোন টাকা না থাকায় এক সময় স্কুলের গন্ডি আর পেরুতে পারলেন না৷ সেই সময় তার চিন্তা এলো বিদেশে যাবার৷
অভিবাসী শ্রমিকদের নানা সাফল্যের কথা শুনে তিনিও সিদ্ধান্ত নিলেন এই কাজ করবেন৷ চলে গেলেন একটি প্রশিক্ষণ কোম্পানিতে৷ সেখানে গিয়ে গৃহকর্মের প্রশিক্ষণ নিলেন৷ সংগ্রহ করলেন পাসপোর্ট৷
একদিন ঐ কোম্পানি জানালো এক আরব তার বাসার কাজের জন্য এমন একজনকে খুঁজছেন যে হবে একজন কুমারী, বাদামী বর্ণের গায়ের রং, লম্বা৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুনারশি বললেন:
‘আমি অন্য আরও অনেকের সঙ্গে এই চাকুরির জন্য তালিকাভুক্ত হলাম৷ তারপর আমাদের নেয়া হলো ইন্টারভ্যু৷
একশ মেয়ের মধ্যে আমাকে পছন্দ করা হলো৷ আমার বন্ধুরা আমার নির্বাচিত হওয়ায় ঈর্ষান্বিত হল!
নির্বাচিত হবার দুই সপ্তাহ পর আমাকে এক আরব নিয়ে গেলেন, তার বাড়িতে, সৌদি আরবে৷
এখান থেকেই শুরু হলো দু:স্বপ্নের৷ আমাকে যে ব্যক্তি তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন, সে আমার আসল নিয়োগকর্তা নয়৷ আসল নিয়োগকর্তা তার পক্ষাঘাতগ্রন্থ বাবা৷
তার শরীরের নিম্নাংশ অবশ৷ সেই বৃদ্ধ আমাকে বললো ভাইব্রেটরের সাহায্যে তার পুরুষাঙ্গে মালিশ করতে৷ আমি বললাম, না৷ আমি পারবো না৷'
ক্ষেপে গেলো ঐ ব্যক্তি৷ নানা ভয়ভীতি দেখালো৷ তাকে ঐ বাড়িতেই বন্দি করে রাখা হলো৷
কেবল ঐ ব্যক্তিই নয়, তার নয় পুত্রও পালাক্রমে তাকে দিয়ে মালিশ করাতো৷ করতো নানা যৌন অত্যাচার৷ এর পাশাপাশি তাকে রান্নাও করতে হতো৷
একদিন সুযোগ পাওয়া গেলো সেই বাড়ি থেকে পালানোর৷ ঘরের দরজার তালা লাগানো ছিল না৷ বাড়ির পিছনে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই ধরা পড়ে গেলো সে৷
আসলে এটা ছিল একটি ফাঁদ৷ তাকে এবার বিক্রি করে দেয়া হলো ১৩০০ ডলারে৷
‘আমি এবার কুমিরের মুখ থেকে পড়ে গেলাম সিংহের মুখের সামনে৷ নতুন এই ব্যক্তি আসলে একজন দালাল৷ যখন কোন খদ্দেরের মেয়ে প্রয়োজন হতো আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হতো৷
আমি হলাম এক যৌনদাসী৷ এক বছরেরও বেশি সময় আমার উপর যৌন অত্যাচার চালানো হয়৷ আমার সঙ্গে পশুপাখির মতো ব্যবহার করা হতো৷ কিন্তু আমার জন্য প্রচুর অর্থ নিতো সেই দালাল,'' বলেন সুনারশি৷
এক সময় সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে৷ ছয় মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান সুনারশি৷ তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নিজ দেশে৷ এখন সেই সুনারশির বয়স চল্লিশ৷ তিনি জানেন না তাঁর ভবিষ্যৎ!
ইউনিসেফের হিসাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাচার হওয়া ১ লাখ নারী শিশু এখন যৌনদাসীর জীবন কাটাচ্ছে৷
যৌবনে বাতাস এসে বার বার মনে করে দিত যৌবনের সুখে হারিয়ে যেতে। তাই দীর্ঘ ৭বছর পর যৌবনের ডাকে সারা দিতে দেশে গেলাম। বিয়ে সব কাজ ঠিকঠাক করে রাখলো বাবা মা। মেয়ে ও ঠিক করে রাখলো।
মেয়েকে আগে থেকে চিনি বলে আমার এ আপত্তি ছিল না। বিয়ে ৩দিন আগের রাতে পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে মিটিং এ বসল। প্রথমে বাবা বলল বিয়ের সব আয়োজন করতে ৬লক্ষ টাকা লাগবে। তখন বাবা বললো আমাকে টাকা দিতে।বাবার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। মনে হলে আকাশটা ভেঙে মাথার উপর পড়ল। বাবাকে বললাম আমার কাছে টাকা নাই।
যা টাকা বেতন পেতাম সবাইতো আপনাকে দিয়েছি মাসে মাসে। বাবা সহ কেউ আমার কথা বিশ্বাস করলো না। বাবা রেগে সরাসরি বললো টাকা দিলে বিয়ে হবে নয়তো সে কালকে বাড়ি থেকে চলে যাবে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । দুচোখে অন্দকার দেখতে লাগলাম। বাড়ি চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে গেল। আমি সবাইকে বার বার বলে কেউকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না আমার কাছে টাকা নাই। বিয়ে না হলে মান সম্মান বলতে কিছু থাকবে না,সেই চিন্তা সারা রাত অনিদ্রায় কাটিয়ে দিলাম।
সকালবেলায় না খেয়ে এক বন্দুর বাড়ি গিয়ে বন্দুকে সব খুলে বললাম। বলার পর ১লাখে বছরে ৩০হাজার টাকা সুদে ৪লাক্ষ টাকা ঋন নিলাম বাকি ২লক্ষ টাকা প্রবাসি বন্দুদের থেকে ধার নিয়ে বাবাকে দিলাম। তো বাবা টাকার কথা সব খুলে বললাম কিভাবে জোগার করলাম। বাবা আমার কথার কোন উত্তর দিল না। অবশেষে অনেক জামেলার পর বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিয়ে প্রথম ক’মাসে আল্লাহ রহমতে বাবা হব খবরটা পেলাম,তাই ছুটির ৩মাস বাকি থাকতে আবার চলে এলাম কুয়েতে। এসে শুরু করলাম দিনরাত কাজ।
নিজেকে বিলিয়ে দিলাম কাজের মধ্যে। ঋন যন্তনায় ঘুম আসতো না,কখন শেষ হবে ঋন। আর ক্ষনে ক্ষনে বুঝতে পারলাম ঋন থাকলে প্রবাস জীবনটা যে কত যন্তনার আর কষ্টের। মাসে মাসে যা বেতন পাই সবই ঋন দেই। আগের মত টাকা বাড়িতে দিতে পারি না বলে বাড়ি সবাই আমাকে সন্দেহ করতে লাগলো। আর বলতে শুরু করল আমি বেতনের সব টাকা শ্বশুর বাড়িতে দেই। এই নিয়ে শুরু হলো শ্বশুর বাড়ি লোকদের সাথে আমাদের বাড়ির ঝগড়া। ঝগড়ার কারনে আমার মেয়েকে আর বউকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আমি বাবাকে আগেই বলছি আমার ঋনের কথা কেউ আমাকে বিশ্বাস করেনি,কি ছিল আমার ভুল? কি ছিল আমার অপরাধ?
যে ভুলের কারনে আজ একা একা জ্বলছি দূরপ্রবাসে। আমি তো চেয়ে ছিলাম সবাইকে নিয়ে সুখে থাকতে। কি পেলাম নিজের আপনজনদের থেকে যন্তনা ছাড়া? যাদের জন্য জীবনের অনেকগুলো বছর যন্তনার প্রবাসে। যাদের সুখের জন্য জীবনে সকল চাওয়া পাওয়া গুলোকে কবর দিয়ে ছিলাম কুয়েতের মরুতে। আজ আমার মেয়েটি বলে আব্বো তুমি কবে আসবে বাড়ি? তোমার কি আমাকে দেখতে মন চায় না? যখন মেয়ের কথা গুলো শুনি তখন আর ধরে রাখতে পারি না চোখের পানি গুলোকে।
কি বলব আমার মেয়েটিকে? আমি জানি না তো কবে দেশে যাবো। এখনো যে ঋন শেষ করতে পারলাম না, একদিকে ঋন আবার সংসারের খরচ। মেয়েটিকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলি আগামী মাসে আসবো, কিন্তু আমার তো আগামি মাস আসে না!!
প্রবাস জীবনের অন্নরকম গল্প
তখন রাত সাড়ে ১১ টা বাজে সিঙ্গাপুর .আমি বাড়িতে ফোন করতে ছিলাম এমন সময় দেখলামপাশে একজন লোক অনেক ক্ষন ধরে আকাশে তাকিয়ে আছে.মনে মনে ভাবলাম লোক টার কিহয়েছে যে এভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে.কিছুক্ষন পর আবার তাকালাম, লোকটাআগের মতই আছে.ফোনের লাইনটা কেটে লোকটার কাছে গেলাম।
আমি =জিজ্ঞাসা করলাম দেশী ভাই নাকি
লোকটি = বললেন হ্যা
আমি=ভাই অনেক ক্ষন ধরে দেখলাম আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন যে?
লোকটি =এইতো ভাই হিসাব করতেছিলাম এই প্রবাসে জীবনে কি পেলাম আর কি হারালাম আর২১ বছরের প্রবাস জীবনের দুঃখগুলো ভাবতে ছিলাম!
আমি ২১ বছরে কথা শুনে অভাগ.খুব কৌতুহলী হয়ে বললাম ভাই আমাকে বলবেন আপনারদুঃখ গুলো? আমার খুব শুনতে ইচ্ছে কর করছে.
লোকটি =ভাই ২১ বছরে দুঃখগুলো মাত্র কয়েক মিনিটে শুনে কি করবেন.
আমি =ভাই আমি হয়ত পারবোনা আপনার দুঃখগুলো তাড়িয়ে দিতে ,কিন্ত এমনতো হতে পারেযে, আপনার দুঃখগুলো শুনে আমি কিছু শিক্ষা নিতে পারবো, কারণ আমি ও তো একজন প্রবাসী.
লোকটি =তাহলে শুনেন, আমরা ছিলাম ৬ ভাইবোন আমি ছিলাম সবার বড়.বাবা ছিলেন কৃষকনিজেদের জমি চাষ করতাম, বাবার সাথে আমি কাজ করতাম.বাপ বেটা মিলে সংসারে অভাব দূরকরতে পারতাম না ..ছোট ভাইবোন‘রা পড়ালেখা করতো, ওদের কাউকে ক্ষেতে–খামারে নিতামনা, যদি পড়ালেখার ক্ষতি হয়।
এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করতে লাগলাম, কিন্তূ কষ্টের দিনশেষ হয় না,একদিন কিছু জায়গা বিক্রি করে পাড়ি দিলাম ইরাক, সেখানে চার বছর ছিলাম, তারপর বাড়িতে আসলাম,এর মাঝে সংসারে অভাব কিছুটা দূর হলো, ভাইবোনদের পড়ালেখাভালো চলছিল.কিছুদিন যাবার পর দেখালাম আবার ও পুরানো দুঃখগুলো বাড়ির চারপাশেঘুরতেছে, আবার পারি দিলাম সিঙ্গাপুর,
সিঙ্গাপুর এসে মাত্র কয়েক মাস থাকার পর পারমিট বাতিল করে দিল,দেশে গিয়ে পরলামমহাবিপদে যা টাকা ছিল সব শেষ! মা বাবা বললেন বিয়ে করতে ,আমি বিয়ে করিনি,
কারণ ভাইবোন গুলো পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাক আবার বোনদের বিয়ে দেওয়া হয় নাই! কয়েক বছর পর আবার আসলাম সিঙ্গাপুর…এর মাঝে কেটে গেল অনেক বছর,ছুটিতে বাড়িগেলাম বিয়ে করব বলে কিন্ত বিয়ে করতে গিয়ে পড়লাম অনেক জামেলায়, বয়স বেশি আরঅশিক্ষিত বলে ভাল বাড়িতে বিয়ে করতে পারলাম না.শেষে কোনো উপায় না পেয়ে গরিবের একমেয়েকে বিয়ে করলাম, তাও আবার আমার থেকে অর্ধেক বয়সের! জীবনে খুঁজে পেলাম সুখেরঠিকানা, ভালোই কাটছিলো ছুটির দিনগুলো মনে হইছিল পৃথিবীতে আমি একজন সুখী মানুষ।
ছুটি শেষ করে আবার চলে আসলাম সিঙ্গাপুর.সিঙ্গাপুর এসে কোনো কিছু ভালো লাগতো না! রাতে ঘুম আসেনা! কাজে মন বসে না! বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করতো! মনে মনেভাবলাম ভাইবোনদের বিয়ে হয়ছে ভালো চাকরি হয়েছে ভাইদের, এখন আমার দায়িত্ব শেষ এইভেবে একেবারে বাড়ি চলে গেলাম।
আর এটাই ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল! এখন সেই ভুলের মাসুল দিতেছি.কিছু দিনযাওয়ার পর দেখালাম চেনা মানুষ গুলো অচেনা হয়ে গেলো! যে মা বাবা ভাই বোনদের জন্য এতকষ্ট করলাম! তারা যেন আমাকে চিনে না! কারণ আমি কেন একেবারে. চলে এলাম দেশে.আরবুঝতে পারলাম এতদিন ওরা আমাকে ভালোবাসেনি, ভালবাসতো আমার টাকাকে! আর মা বাবাআমার কথা শুনতোনা! ভাইদের কথা শুনতো! কারণ ওরা মা বাবাকে বেশি যত্ন করতো বলে.মাআর আমার বৌয়ের সাথে প্রতিদিন লেগে থাকতো জগড়া!
মা বলতো আমি বৌয়ের কথা শুনি! আর বউ বলতো মায়ের কথা“
এদিকে বৌয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো না!
বৌয়ের যেটা ভালো লাগে আবার আমার সেটা ভালো লাগেনা.
বৌয়ের কোনো দোষ নাই,আসলে ভাই জীবনে যৌবনের তরীটা যে সময় ভাসানো দরকার ছিল, সেই সময় ভাসাইনি,অসময়ে ভাসাইছি ঠিকই কিন্ত যৌবনের তরীটা আজ বাইতে পারি না! মাঝেমাঝে এত কষ্ট লাগে যাদের জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তারা কত সুখে, আর আমি একাই কতকষ্টে আছি!
আজ ভ্যাগের কঠিন আঘাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে আমার দেহ মন! ভ্যাগের কঠিন নিয়মেপরাজিত হয়ে দিক–বিদিক হারিয়ে ফেলেছি! যে না পাওয়াটার জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তাপেয়ে হারালাম!!! কিছু নিজের স্বার্থপর আপনজন কারণে! “অভাবের দিন যে কত বড় তা শুধুঅভাবে যারা থাকে তারা বুঝে“
আবার টাকা ঋণ করে সিঙ্গাপুর আসলাম, ঋণের তাড়নায় কোনো কিছু ভালো লাগে না.একদিনভাইকে ফোন দিয়েছিলাম বললাম আমাকে এক লক্ষ টাকা ধার দে.সে যে কথা বলছে আমিকোনো দিন ভুলতে পারব না.আমাকে বলল,এক বেলা না খেয়ে থাকলে এক বেলা খাওয়ানো যায়,বা ১শ টাকা 1হাজার টাকা ধার দেওয়া যায় .কারো ঋণ শোধ করা যায়না!!!
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো মরে যাই! কিন্ত আমার একটি ছেলে আছে তার কি হবে? মা বাবা ভাইবোন সবাই সুখে আছে হয়তো বউও চলে যাবে! কিন্ত আমার ছেলে কি হবে?ভাইদের অনাদরঅবহেলায় বড় হবে .তাই আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করলাম শেষ বয়সে………!!!
কথাগুলো বলতে বলতে দেশী ভাইটি কাঁদছিল.আমি ও তার কথা শুনতে শুনতে কখন যে কাঁদতেছিলাম আমি নিজে বুঝতে পারিনি! দেশী ভাই কে কি বলে সান্তনা দেবো আমার সব ভাষা হারিয়েফেলছিলাম.শুধু বললাম, আমরা প্রবাসীরা হলাম এমন এক যুদ্ধের সৈনিক. যে যুদ্ধের জয়েরউল্লাস আমরা করতে পারি না! দিয়ে দিতে হয় অন্যদের …হয়তো অন্যদের মাঝ থেকে জয়েরউল্লাস কেউ পায় আবার কেউ পায় না.অথচ, এই যুদ্ধে আমাদের দিতে হয় পরিশ্রম নামেজীবনের স্বাদ ইচ্ছা ভালো লাগার মুহূর্তগুলোকে বিসর্জন!!!
শুনবেন আমার প্রবাস জীবন?
দেখতে দেখতে হয়ে গেলো আমার প্রবাস জীবনের এক বছর গত ৩০ আগস্ট।কত কিছু বলবার আছে আমার,কত কিছু ! কত অভিজ্ঞতার গল্প, সংগ্রামের গল্প,সংগ্রাম দেখার গল্প,এই নিষ্ঠুর জীবনে মানুষের বেঁচে থাকার আশার গল্প,বেদনা আর আহত হবার গল্প কিংবা সুখ আর শান্তির গল্প .....খুব লিখতে ইচ্ছে করে।সে জন্য ল্যাপটপের সামনে প্রায়ই যাই।যতক্ষণ থাকা উচিত,ঠিক তার থেকে বেশী সময় ধরেই স্ক্রীনটার সামনে বসে থাকি। বসে থাকি,তো থাকিই,কিচ্ছু লেখা হয় না।আজ কিছুটা বলি আমার ভীনদেশে আসার গল্প ?
আমার প্রবাস-জীবন আর দশটা প্রবাস জীবনের থেকে খুব একটা কিছু আলাদা কিছু নয়। ডিসিশনটা একদমই হঠাৎ করে নেয়া ।হঠাৎ একদিন আমার এক মামা (আমার এক বন্ধু ) বললো যাবা নাকি লন্ডন,আমি বল্লাম ভাইয়াদের সাথে কখা বলে দেখি....
কিভাবে কিভাবে জানি সব ভাইয়াদের ম্যানেজ করে নিলাম ।তারপরে আমি দৌড়াই ঢাকার আর সিলেট ,সব কাগজ ম্যানেজ করে নিলাম ১০ দিনের মধ্যে,এইবার আমি ভিসার জন্য দৌড়াই ব্রীটিশ কাঊন্সিলে ...অবশেষে সব শেষ হয় ... সবুজ পাসপোর্টে একটা লাল চকচকে সীল নিয়ে সেই মামার আগেই আমি ঢাকা হতে বাড়ী আসি।শেষ কয়টা দিন কেমন জানি ঘোরের মাঝে কাটে গেল বাজার ,ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্টদের অফিসে দৌড়াদৌড়ি ... বাড়ীর ঝামেলা,বন্ধুদের টাইম দেয়া,আত্মীয়দের নিমন্ত্রণরক্ষা ।
গত বছর আগস্টের ৩০ তারিখ সকালে দেশ ছাড়লাম সেই মামা আর আমি তবে দুই বিমানে। বিদায় দিতে আসা একগাদা ফ্রেন্ড ,বাবা,ভাইরা সবাইকে রেখে ... বিশাল বিশাল লাগেজ আর একগাদা ঊপদেশ নিয়ে বিমানবন্দরের কাচের দরজাটা পার হয়ে গুডলাক বাংলাদেশ দিলাম ,আমি বিমানে বসে বসে চুপচাপ ভাবি কত কিছু করা হল না, ঢাকা টু দিল্লী... দিল্লী টু লন্ডন ....
দেশে থাকতে মনে করতাম প্রবাস জীবন কতো না সুখের। কিন্তু বিদেশের মাটিতে পা দেয়ার পরপরই শুরু হল অন্যরকম সংগ্রাম, প্রতিনিয়ত শরীর এবং মনের সাথে যুদ্ধ। কিন্তু সেই যুদ্ধে পিছিয়ে আসার উপায় নেই তাই এখনো করছি .......
যখন হিথ্রোর সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটা শুরু করলাম তখন নিজেকে প্রথমবার খুব একা মনে হল আমার পুরা বিমানযাত্রায় যে জিনিসটা নিয়ে খানিকটা টেনশনে ছিলাম সেটা হচ্ছে ইমিগ্রেশন অফিস আর স্টাডি পারমিট ,যদিও আমার সবুজ পাসপোর্টে চকচকা লাল একটা ভিসা আছে, তাও নাকি ইমিগ্রেশন আমার কাগজপত্র দেখে সন্তুষ্ট না হলে পারমিট না দিয়েই ভাগিয়ে দিতে পারে ... এবং এই টাইপ ঘটনা নাকি একেবারে রেয়ার না
,বাস্তব কিন্তু ভিন্ন ইমিগ্রেশনের মহিলা যথেষ্টর চেয়েও বেশি হেল্পফুল দুই এক কখা বলেই ঘ্যাচাঘ্যাচ সীল দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে “ওয়েলকাম টূ ইংল্যান্ড , গুড লাক উইথ ইওর স্টাডীজ”... আমি মুগ্ধ ...ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিশাল বিশাল লাগেজ নিয়ে প্রথম টের পেলাম যে আমি আর বাংলাদেশে নাই ,বের হওয়ার ঠিক সাথে সাথে দেখা হল ভাতীজার সাথে ,তার সাথে আগে থেকে ঠিক করে রাখা বাসাতে চল্লাম ট্রেনে করে..
জীবন থেকে নেয়া ছোট গল্প: পরবাসে দেশের জন্য মন কাঁদে
তোমার হৃদয়ের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মনের বিস্তৃত আঙ্গিনা পেরিয়ে ভালবাসার স্রোতে বির্বতনের ধারায় বিবতির্ত হয়ে তরী ভিড়িয়েছিলাম তোমার কুলে। শূন্য তরী ভড়িয়ে দিয়েছিলে ভালবাসায় কানায় কানায়, কোন কিছু দাবী না করতেই উজাড় করে দিয়েছিলে দু’হাত ভরে। ঋনী হবার সুযোগ না দিয়ে চির জীবনের জন্য ঋনী করে রাখলে হৃদয়ের বন্ধনে মনোমন্দিরে। মোমের আলোয় আলোকিত করে রেখেছো এখনও আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষণ।
ভালবাসায় কাছে না থাকায় অবস্থান করছো অযতেœ অবহেলায়। যতটুকু প্রাপ্য আছে আমার কাছে তাও অপূরণ রাখছি দীর্ঘদিন। আবেগ ভরা কন্ঠে প্রায়ই বলো কি পেলাম জীবনে? আর কি পাবার বাকী আছে ? জীবনের কঠিন বাস্তবতায় হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর কোনদিন দেয়া হবে না, মনের আবেগ লুকিয়ে কয়েক ফোটা চোখের জল ফেলা ছাড়া। সুখী করার অঙ্গীকার নিয়ে সত্যিকার ভালবাসায় জীবন অঙ্গিনা ভরিয়ে দিতে, সুখ স্বপ্নের বাসরসাঁজাতে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে মাতৃভূমি ছেড়েছিলাম কয়েক বছর আগে। মা এবং মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছি প্রবাসে।
সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে প্রবাস হলো দেয়ালহীন কারাগারসম। স্বপ্নরা প্রতিনিয়ত বাসাবাঁধে কিন্তু পূরণ হবার অবসর পায় না। সমস্ত স্বপ্ন এলোমেলো হয়ে যায়। রাত গভীর হলে আস্তে আস্তে স্বপ্নরা ভীড় করে মনের জানালায়, কাটে নির্ঘুম রাত অসংখ্য স্মৃতির ভীড়ে। মানুষের মন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় রহস্যময় মনের রহস্য ভেদ করা বড়ই কঠিন। প্রবাস জীবনের সমস্ত আদর আর অফুরান্ত ভালবাসা এই রহস্যে প্রতিনিয়তই ঘুরপাক খায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় ভালবাসার বরফগলা নদীতে আজ বড়ই সঙ্গীহীন,ভালবাসাহীন একা। রাত গভীর হলে আস্তে আস্তে দূশ্চিতা বাড়ে। মনের মাঝে দেশের ছোট ছোট স্মৃতি এসে ভীড় করে। জীবনের সমস্ত আদর,অফুরন্ত ভালোবাসার টানে মন ছুটে যায়,সোনারগাঁওয়ের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত ভিটিপাড়া গ্রামের পদ্মা বিধৌত জল-জোছনার কৈশোর প্রেমের তীর্থস্থান।
আজও আমার মন প্রাণকে নাড়া দেয়, ভাবনায় স্বপ্নে আজও বিচরণ করি সরিষার ক্ষেতের পাশঘেষা মেঠো পথে আমার ছোট সন্তান সৌরভকে নিয়ে বিকাল বেলা ঘুরে বেড়ানো। মা, মাটির টানে গ্রাম্য মেঠো পথ ধরে সোনালী ধান ক্ষেতের পাশে। যেখানে শীষে খেলা করে ভোরের শিশির বিন্দু। সূর্য্যরে আলো পড়ে এক অরূপ দৃশ্য সৃষ্টি করে। যতক্ষন জম্মভূমির চিন্তুা মাথায় থাকে ততক্ষনই ভালবাসার সংস্পর্শে থাকা যায়। দেশের কথা ভাবলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। প্রতিটি প্রবাসীই জম্মভূমি ছেড়ে প্রবাসে থাকলেও মনের অজান্তেই দেশকে প্রতিমুহুর্ত অনুভব করে।
একজন প্রবাসী সীমাহীন কষ্ট আর না পাওয়ার অতৃপ্তি নিয়ে প্রবাসী হয়। ভালবাসার কষ্টের সব সময় চোখের কোনে অশ্র“ হয়ে জমাট বাধার আগেই লুকিয়ে ফেলতে হয় দেশে অপেক্ষ্যমান প্রিয়জনদের কথা ভেবে। তাই প্রবাসীর দুঃখের অশ্র“ কেউ দেখে না। রুমালে মোছার আগেই মরুর তপ্তরোদে শুকিয়ে যায়। প্রতিটি রাত্রি ভোর হয় সঙ্গীহীন, ভালোবাসাহীন, মমতাহীন, একা। জীবনের দীর্ঘযাত্রায় অতীতের উৎসবের স্মৃতি বাংলার মাটি ও মানুষের মতো আমার অস্তিত্বে গভীর নোঙর বেধেঁ আছে আজও। বিদায় যে বড় কঠিন, বড় নির্মম সেদিন তা অনুভব করেছিলাম হাড়ে হাড়ে। দেশ প্রেম কি আত্মার সম্পর্ক কি সেদিন মন অনুভব করেছিল একান্ত করে। ১৩ই জানুয়ারী ২০১৪ই যখন আমি কুয়েত চলে আসি আমাকে বিদায় দিতে ঢাকা এয়ারপোর্ট সেদিন অনেকেই বোবা কান্নায় কেদেঁছিল।
সবচেয়ে বড় একা হয়ে গিয়েছিল আমার সন্তান আমার দ্বিতীয় আত্মা। সে আমার কোলে গলা ধরে সবার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে মাঝে মাঝে আমার গলায় চুমু দিচ্ছিল। আর আমি যেন অনেকটা বোবা পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন বিদায়ের বাঁশির সকরুণ সুর আজও আমাকে নীরবে কাঁদায়। একজন মানুষের শৈশব, কৈশোর, যৌবন, কর্মজীবন, এবং থাকে অবসর জীবনের বৃদ্ধকাল,জীবনের এই সময় গুলি যেন কোন সুষ্টিশীল মানুষের প্রবাসে না কাটে, সময় গুলি কাটে যেন মায়ের কাছাকাছি, মাটির কাছাকাছি, জম্মভূমির কোলে। প্রবাসী হয়ে বুঝলাম জীবনটা একটা একশন থ্রিলার মুভি। প্রতিমূহুর্তে নতুন নতুন দৃশ্যে হাজির হচ্ছি। স্বাভাবিক জীবনযাপন স্বাভাবিক মৃত্যু ভাবাই যায় না। প্রতিমুহুর্তে বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন মানুষের কর্মকান্ড চোখের সামনে ভেসে উঠে। ভাবি কি ভাবে আমার সোনার দেশের সোনর মানুষ গুলি রাজনৈতিক কল্যানের কথা মুখে বলে কাজ করে সম্পূর্ন উল্টো।
অতি সহজেই দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলে? ভাবি কিভাবে বিবেকবান মানুষ গুলি মনুষত্ব, মূল্যবোধ, বিবেকবুদ্ধিহীন হয়ে যায় নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। একজন প্রবাসীর শ্রমে ঘামের অর্থে অনেক পরিবার চলে। এমন অনেক প্রবাসী আছে একমাস দেশে টাকা না পাঠালে সেই পরিবারে অনেক কিছুই বন্ধথাকে। আজ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল কিন্তু, দেশের মানুষ কখনোই প্রবাসীদের দুঃখ কষ্টের কথা ভাবে না। মাস শেষ অর্থেও অপেক্ষায় থাকে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যারা প্রবাসী হয় তারা এক সময় টাকা কামানোর মেশিনে পরিনত হয়, তাদের আবেগ,অনুভূতি ধীরে ধীরে লোভ পেতে থাকে, দুঃখ কষ্টকে আর দুঃখ কষ্ট বলে মনে হয় না। বিবেক দয়া মায়া আবেগ একসময় ফুরেিয় যায়। আমার মতো করে আরো অনেক প্রবাসী শ্রমিকের জীবন রো-শোক থাকে কিন্তু সময়ের অভাবে কাউকে বলতে পারে না।
তাই দুঃখ নিয়ে বিলাসিতা করার সুযোগ প্রবাসীদের নেই। দুঃখ নিবারন করার ইচ্ছো নিয়ে মা মাটি ছেড়ে অজানা অচেনা দেশের মাটিতে আমরা আশার ঘর বেঁধেছি, সত্যি কথা বলতে কি প্রবাসীর কষ্ট প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বুঝে না। অনুমান করে সব কষ্ট বুঝা যায় না। স্বপ্নের প্রবাস বাস্তবে বিশাল আকারের এক দানব। প্রতি মূহুর্তে এ দানব নামক প্রবাস প্রতিটি প্রবাসীকে কুরে কুরে খায় গুন পোকার মতো। পৃথিবীর ওজন থেকে আরো বেশী ওজনের কষ্ট বুকে নিয়ে আমার মতো আরো অধিকাংশ প্রবাসী রাত্রি ভোর করে। দু’হাত ভরে যতদিন দেবার সামর্থ থাকবে ঠিক ততদিন পরিবারের সবার কাছে প্রিয়। আমাদেরকে সুখের মাইল ফলক হিসাবে দেখা হয়।
একাকীত্বের বেদনায় আমাদের নয়নে যখন জল ঝরে কেউ আদর করে কাছে ডেকে এই জল মুছে দেয় না। নয়নের জল নয়নেই শুকায়। প্রবাসী যান্ত্রিক জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আমরা প্রাণে বেঁচে থাকি তবে এই বাঁচাকে বেঁচে থাকা বলা যায় না। আমাদের এই যান্ত্রিক জীবন এক একটি মূহুর্ত অসম্ভ বেদনাদায়ক। মানুষের জীবন বিচিত্রময় একঅধ্যায়। জীবন চলার পথে কখনো-কখনো কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হয়,ঝড়াতে হয় সহস্র অশ্র“। আপনজনদের ভয়ে বেড়াতে হয় কষ্টের রেখা। খনিকের এ ছোট্র জীবনে অমরা সৃষ্টির সৃষ্ঠ মানব জাতি হয়ে খনিকের দুনিয়ায় কত না কি করে যাচ্ছি। আমি যখন টকবগে একজন যুবক ছোট একটা সংসার আমাদের। মা আছে বাবা নেই, সেই ছোট কালে আমাদের এতিম করে চলে গেছেন পরপারে। বাবার কথা মনে হলে আজোও দুচোখের অশ্র“তে বুক ভিজে যায়। লেখা পড়া পুরা পুরি শেষ করতে না পারলেও জীবন চলার পথে যতটুকু প্রয়োজন তা হয়তো করেছি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন ভাবে চলাটা আজকাল বড়ই কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।
অর্থ সম্পদের অভাবে কখনো-কখনো মানুষকে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন যন্ত্রনার আগুন। আর সে যন্ত্রনার আগুন নিয়ে ও মানুষ সামনের দিকে পথ চলতে থাকে স্বাপ্নীল জীবনটাকে সুন্দর সরে সাজাতে। মানুষের আয়ের উৎস না থাকলে দুঃখ,কষ্টে অভাবে দিন কাটাতে হয়। আর আয় করতে হলে চাই ব্যবসা বাণিজ্য চাকুরি। একটি চাকরির জন্য কত জায়গায় ধর্না দিলাম। বর্তমানে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে চাকুরীর ক্ষেত্রে। যে খানে একজন নিয়োগ দেওয়া হবে সেখানে প্রার্থী এসে ভীড় করছে শত-শত। না এতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই,এটাই বাস্তব। অনেক শিক্ষিত হয়েও বৎসরের পর বৎসর ঘুরেও চাকরী পাচ্ছেনা অনেক যুবক। দেশের জনসংখ্যা বিরাট অংশ বেকার। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলো, আজো স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি,ক্ষুধা, মঙ্গা ও দারিদ্রতা আমাদের দেশ থেকে দূর হয়নি একটি দেশ স্বাবলম্বী হতে ৪৩ বছর কি যথেষ্ট নয়?
দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে আরও কত বছর লাগবে এ প্রশ্নটা রইলো দেশের বিবেকবানদের কাছে। এ ৪৩ বছর আমরা কি পেলাম। দেখলাম দেশের সমস্ত সম্পদ লুন্ঠিত যৎসামান্য বিকৃত চেহারার রাজনীতিবিদ নামধারীদের,আমলা কামলাদের দ্বারা। এরাই যুব সমাজকে বিপদে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তাদের চরিত্র হনন করছে। বিপদগ্রস্থ যুব সমাজ দিশাহারা হয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কর্ম নেই, মা বাবা ভাই-বোনদের মুখে অন্ন তুলে দেবার ক্ষমতা নেই, তুচ্ছ তাচ্ছিলতার আগ্রাসনে যুব সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করে ৭১-এ যুব সমাজের দেশ প্রেমের অংশ গ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যারার সময় তার, কি করবে ভাবতে প্রতিদিন সন্ধ্যা হয়। ভাবনা শেষ হয় না। হবারও না, মা বাবার বকুনী ঘরে বিবাহযোগ্য বোন অথবা স্কুল কলেজগামী ভাইবোনের লেখা পড়া কাপড় চোপড় না দেবার বদৌলতে ব্যাকঠু হোম। সিদ্ধান্ত আসে বন্ধু মহল থেকে অতি গোপনে।
এটি বড় কষ্টের। বিদেশ চলে যাও। এদেশে তোমার আমার কিছু হবে না। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা তোমার আমার ঠিকানা। যমুনা ভাঙ্গনে বাড়ী ঘর গাছ পালা তলিয়ে গেছে। তাই ঠিকানাও নেই। বিদেশ যেতে হলে দৌড়-ঝাপ। ছুটাছুটি সন্ধান পেলেও সিকিভাগ সফলতা। বাকীটা ভিটে মাটি বিত্রি“ করে আত্মহত্যা অথবা বৈরাগ্য জীবন যাপনের জন্য রামগড়ের রাস্তা পরিস্কার।
চোখের দেখা অনেক গোবর গনেশ গ্রামের পাতি নেতা আবুবক্কর ছিদ্দিক রবিন ওরফে বিল্লাল মুন্সির ছেলে-বোয়া ট্রাভেল এজেন্সী ওয়ালারা শত-শত কয়েক কুড়ি বেকার যুবককে যুদ্ধ বিগ্রহের আগুনে ঢেলে দিয়ে এসেছে মালশিয়া যাওয়ার জন্য নৌ চোরা পথে। অসহায় যুবকগুলোর কোন হদিস নেই। স্বজনদের আহজারি আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। কেউ বলছে অনেকে মারা গিয়েছে নদী পথে শ্রমিক প্রেরণ কালে। সারাদেশের এমন আবুবক্কর ছিদ্দিক রবিন নামের পাতি দালালদের কোমরে রশি বেঁধে তাদের বিরুদ্ধে “ ছি-ছি” আন্দোলন শুরু হলে দৃর্নীতির একটা মূল তাগিদ সমাজ থেকে উৎপাটিত হবে।
জানিনা এমন হবে কিনা। দেশের বড়-বড় নেতা আজ নিজেদের পকেট ভারি করছে যুব সমাজের জন্য কিছুই না। দুভাগ্যবশত এই সুন্দর সবার মধ্যে জাগে নাই। ভাগ-বাটোয়ারা করে তুমিও খাও,আমিও খাই। নিম্ন থেতলিয়ে যাচ্ছে একেবারে আমের ছোবরার ন্যায়। খেতে না পারলে যুব সমাজ করবেটা কি, না যেতে তখনই তাদের বদনাম হয়। অথচ ৭১র আগে তাদের সমাদর অনেক ছিল। এরা “আল্লা মেঘ দে পানি দে”ছায়া দের আল্লা ধ্বনিতে আল্লাহর কাছে খরা থেকে পরিত্রান পেতে পানি চেয়েছে। এরা ৭১র উত্তাল দিন গুলোতে কোটি স্মরণার্থীর সাহয্যে এগিয়ে আসছে।
তাদের দৃঢ় মনে বলের কারণেই সুসজ্জিত এবং এশিয়ার সবচেয়ে ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাক বাহিনীকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়েছে। যুব সমাজের একটা আশা ছিল, এরা দেশের জন্য কিছু একটা করবে, দেশ উপকৃত হবে। ৪৩ বছর তা হয়নি, যুব সমাজ সবার আগে অবহেলিত। চাকুরী নেই তাতে কি হয়েছে। যুব সমাজ উন্নয়ন তথা কর্মসংস্থানের মত বাংলাদেশে প্রচুর সম্ভাবনা বিরাজমান। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা। দেশের প্রধান সমস্যা বেকার কর্মসংস্থান গ্রাম ওয়ারী প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যুব সমাজকে বিদেশের পথে পা বাড়াতে হবে না, প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিতে ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুও কোলে ঢলে পড়তে হবে না। বেকারের অভিশাপে নিজের জীবন বিপন্ন করার প্রতিযোগিতা চলছে মহাসমারোহে।
মরণব্যাধি নেশা পান করে যুব সমাজ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এমনও দেখছি মেধাবী ছাত্র বিশ্ববিদ্যায়ের পাঠ চুকিয়ে বেকার। শেষ অবধি নেশায় বুদ হয়ে নিজেকে লুকাতে ব্যর্থ চেষ্টা। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার হাজারো কিসসা কাহিনী। তেমনটা হয়েছিলো আমার জীবনে। অবশেষে সকল বাধা ছিন্ন করে পাড়িজমাই দুর পরবাসে। ১৫বছর আগে যখন প্রবাসের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে রওনা দিচ্ছি তখন সবে মাত্র টক বগে যুবক। তার পর দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে গিয়ে বিয়ের সিঁড়িতে বসি। সময় গড়িয়ে মাস,মাস গড়িয়ে বছর তার পর হয়ে গেলাম বাবা। ছোট ছেলেটা আমার কোলে তাকে আদর করছি আর ভাবছি আদরের সন্তান ছেলেটিকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো।
সন্তানের মুখের দিকে থাকিয়ে দুচোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না আমি পরাজিত সৈনিকের ন্যায় দেশ থেকে চলে আসছি। দেশে রেখে আসছি আমার পরিবার পরিজনদেরকে। এক দেড় বছর পর দেশে যাই অতিথি হয়ে আর নিজ ভূমি হয়ে গেলো পরবাস। আবার চলে আসি সেই কর্মক্ষেত্রে। রয়ে যায় আপনজনরা। মাসের পর টাকা পাঠানো, চিঠি লিখা অথবা ফোনে ভালমন্দ জেনে নেয়া। এই চলছে ভানুমতির খেলা। দীর্ঘ সময়ে দেশের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে, পাকা রাস্তা গৎ হয়েছে, ছোটরা বড় হয়েছে আরো কত কি এখান থেকে দেশের অনেক আলোচিত অনালোচিত খবর হাবুডাবু খাই। শুনতে পাচ্ছি নানা খবর। ঘটনা ঘটার মূর্হুতে ইথারে ভেসে আসছে খবর। ভালো খবরে পুলকিত হই। দুঃসংবাদে খবরে দুঃচিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাই। শেষ পযর্ন্ত বুঝেই নিলাম আমাদের প্রাণ প্রিয় বাংলাদেশ থেকে ভালো খবরের যে সম্ভাবনা আর নেই। অহরহ লেগে আছে বন্যা, খরা নদী ভাঙ্গন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধাপ্পারাজ, বোমা হামলা, গুম খুন মানুষের সারি-সারি লাশ, নদ নদী আর রাস্তার পাশে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। সামনে আরো যে ভোগান্তি আছে জনগনের।
তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষমতার বা ক্ষমতার বাইরে যারাই আছেন বাংলার সাধারণ শান্তি প্রিয় জনগন আপনাদের দিকেই চেয়ে আছে। ইতিহাস বলে যুগে যুগে জাতির দুরযোগের মুর্হুতে রাজনৈতিকবিদরাই বুক পেতে দিয়েছে, নিজেকে কিপ্পন করে জাতিকে সংগঠিত করেছে, পরিত্রাণ দিয়েছে। আজো কি তেমন কেউ বেরিয়ে আসবে না? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কোন চেতনা চলছে কোনটা চলবে।
নেকড়ে থেকে চিতার আবির্ভাব কিনা তাও ইদানিং ভাবিয়ে তুলছে আমাকে,আমার মত অনেককে। প্রবাস নামের অট্রালিকায় থেকেও নয়ন ঝরে বিরহে কাদেঁ স্বজনের টানে মা মাটির টানে “পরবাসে দেশের জন্য মন কাদে”ঁ।
একজনের ২৪ বছরের প্রবাসীর গল্প
এখন আর আমাকে নিয়ে আফসোস করি না.এখন আর পাওয়া না পাওয়ার হিসাব করি না.এখন আর হারানো যৌবনের জন্য ভাবি না.এখন আর মধ্যরাত্রি দূস্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেল একা একা কাঁদি না.এখন আর ২৪ বছরে ব্যর্থ প্রবাস জীবনের জন্য কাউকে দোষ দেই না.এখন আর ৪৫ডিগ্রী রোদের কাজ করার সময় একটু ছায়া খুঁজি না.জীবনের সমস্ত কষ্টগুলোকে আরবের মরুভুমিতে কবর দিয়েছি .তাই এখন আর আমার জীবনের কোন সুখের বা বেঁচে থাকার তাগিদা নেই.যতদিন বাঁচবে প্রবাসে বাঁচবে,যদি মরণ হয়ে যেন প্রবাসে হয়.এই জীবনটাই যাদের জন্য বিলিয়ে দিলাম প্রবাসে আজ তাঁরাই আমার সবচেয়ে বড় শত্রু.যাদের সুখের জন্য প্রবাসে কাটিয়ে দিলাম ২যুগ তাঁরাই বলছে যোগ্যতার নেই বলে আমি আজ দুখি.আজ থেকে অনেকদিন আগে বাবার সাথে যখন জমিতে ধান বুনতে বুনতে বাবাকে বলেছিলাম আমাকে বিদেশে পাঠান.
আমি বিদেশ গিয়ে আপনের কষ্ট দূর করে দেব.আর অভাবে সাথে যুদ্ধ করতে হবে না.আমি ছিলাম বাবার প্রথম সন্তান তাই বাবার সাথে সব কাজ করতে হত আমাকে.আমারা ছিলাম ৩ভাই ৩বোন.যখন স্কুলের সময় সবাই স্কুলে যেত আর আমি যেতাম ক্ষেতে কাজ করতে.তবে এখন আর সেইদিন নেই ছোট ২ভাই দেশে ভাল চাকরি করে.বউ সন্তান নিয়ে নিজের ফ্লাট নিয়ে শহরে থাকে.ছোট ৩বোন চাকরি করে আর শ্বশুর বাড়িতে স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক সুখে আছে.ওদের আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে হয় না.আমার প্রবাস জীবনের প্রথম ১৫বছরের সব টাকা ওদের পড়ালেখা জন্য খরচ করছি.কখনো ওদের আমার কষ্টগুলো বুঝতে দেইনি.যখন যা চাইছে দিয়েছি.আর এখন মনে হয় এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল.এই ভুল প্রতিটি প্রবাসী করে.
আমি প্রথম ১০বছর পর বাড়ি গিয়ে বিয়ে করলাম.আমাদের বাড়িটা খুব ছোট ও একটা ঘরছিল আমাদের.এতগুলো মানুষ একটা ঘর.যদি ও বাবা বলতে ঘর তুলার জন্য.আমি বলতাম ওদের পড়ালেখা শেষ হোক তারপর ঘর তুলবো.তাই আমি বাড়ি গিয়ে ছোট্ট একটা ঘর তুললাম দুচালে.বিয়ে কয়েক মাস অনেক সুখে কাটালাম.বউয়ের আদর সোহাগ পেয়ে ভুলে গেলাম ১০প্রবাস জীবনের কষ্ট গুলোকে.আসলে পুরুষের জীবনের সতি্যকারের স্বাদটা বিয়ে পরে আসে.সুখের দিন গুলো কখন যে ফুরিয়ে দেল বুঝতে পারলাম.৬মাসের ছুটির শেষে বাবা হবো খবর পেয়ে ও সাথে করে ৩লক্ষ টাকা ঋন করে আবার চলে আসলাম সৌদিতে.প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো ছুটি শেষে আবার প্রবাসে আসা.এই কষ্টটা শুধু প্রবাসীরাই বুঝতে পারে.প্রবাস জীবনের না পাওয়া ও হিসাব মিলাতে মিলাতে কেটে গেল অনেকগুলো বছর.
এখন আমার ২৪বছর প্রবাস জীবনে আর আমার বয়স ৫৬.এখন আমার সংসারে অনেক বড় হয়ে গেছে ৩মেয়ে ও ১ছেলে.ছেলেটা সবার ছোট.অনেকদিন ধরে ভাবছি দেশে চলে যাবো.এখন আমার কাছে ১০লক্ষ টাকা আছে .মেয়েগুলো বিয়ে সময় হয়ে যাচ্ছে.এই টাকাগুলো মেয়েদের বিয়ে দিতে খরচ হয়ে যাবে.তাহলে ছেলেটার ভবিষৎ কি? এই নিয়ে প্রতিদিন বউয়ের সাথে ঝগরা.অনেক ভেবে দেখলাম বউয়ের কথাগুলোই সতি্য ,যে টাকা আছে ভাল পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিতে গেল সব টাকা শেষ তাহলে ছেলের ভবিষৎ.আর এদিকে আমি ও বয়সের ভারে কালান্ত.আমাদের বাড়িটা ছিল ১৫শতাংশ,ও বিলে কিছু জয়গা আছে.২ভাইয়ের ৪ছেলে ও আমার এক ছেলে ভবিষৎ ঘর তুলার জয়গা থাকবে না,আবার বোনের অংশ আছে.বউ প্রায় বলতে আপনে তো ভাইবোনের জন্য অনেক কিছু করলেন ও তারা বাড়িতে থাকে না.
বাবাকে বলেন আমাদের ছেলে জন্য ৩বোনের জয়গার অংশ লিখে দিতে.বউ বললো আপনের ২ভাই ঢাকা বাসায় নিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে তো অনেক সুখে আছে ও আপনের বোনেরা নিজ সংসার নিয়ে অনেক সুখে আছে ওদের তো কোন কিছু অভাব নেই.আপনের কাছে কিছু টাকা আছে আর বিলের একটু জয়গা বেঁচে সেই টাকাগুলো দিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে ও একটা সিএনজি কিনে চালাবেন এত আমরা সুখে থাকতে পারবো হয়তো আপনের ভাইবোনদের মত বিলাসীতা থাকবে না.ছেলেটার জন্য বাড়িটা তো আছে.বউয়ের কথাগুলো এক মাস ভাবে দেখলাম সতি্য বলছে.একদিন বাবাকে বললাম বউয়ের সেই কথাগুলো .কথাগুলো শুনে বাবা রেগে গেলেন অনেক গালাগালি করলেন.
আর বললেন ওনি বেঁচে থাকতে কাউকে জায়গা দিবে না.ও বিক্রি করতে দেবে না.আর হাজারটা প্রশ্ন আমার এত বছরের টাকা কি করলাম সব টাকা নাকি শ্বশুরবাড়িতে দিয়েছি.বাবা একটা কথা অনেক কষ্ট পাইছি আমার ভাইবোনেরা তাদের যুগ্যতায় আজকে নাকি সফল ও সুখে আছে.আমি নাকি গন্ড মূর্খ তাই আমার কপালে এত কষ্ট.আর ওনার ছেলে মেয়েদের এক সুতা অংশ আমাকে টাকা বাদে দিবে না যদি টাকা দেই তাহলে ভাইবোনেরা দিবে.এই নিয়ে আমার বউয়ের সাথে প্রতিদিনই অনেক ঝগরা হয়.আমি বাবাকে বলেছিলাম আজ আমার ভাই বোনের সফল হত না যদি আমি টাকা না দিতাম.ওদের ক্ষেতে চাষ করে খেতে হত.এর পর বাবা বললো আমি জানি তোর কষ্ট .আমি তোর ভাইবোনদের জিজ্ঞাসা করবো যদি দেয় তাহলে তোকে লিখে দেবো নয়তো পারবো না.কারন তুই আমার সন্তান ওরা আমার সন্তান .যত থাকুক ওদের সম্পদ.
কিছুদিন পর বাবা বললো ওরা টাকা ছাড়া জায়গা দেবে না.আমি আর বাবাকে কিছু বলি নাই.আমি বাবাকে দোষ দেই না কারন তার কাঁছে সবাই সমান.তবে পরে জানতে পারছি বাবা নাকি আমাকে জায়গা দিতে চেয়ে ছিলো.ভাইবোনদের প্ররোচনার কারনে দিতে পারে নাই.বাবাকে বলছে আমি বিদেশ থাকি যদি আমার বউ দেখেশুনা না করে তখন বাবার নাকি কষ্ট হবে.যাহাহোক আর আমি ও জায়গা চাইতাম না যদি ভাইয়েরা গ্রামের বাড়ি থাকতো.তবে মা চেয়েছিলো আমি যেন জায়গাটা পাই.এরপর গ্রামের বিচার সালিশে জয়গার দাম ধরা হলো ১২লক্ষ টাকা.কি করবো অনেক ভেবে চিন্তা করে রাজি হলাম.ভাইবোনদের জন্য তো ১০বছর প্রবাসে কাটালাম এখন যদি নিজের সন্তানদের জন্য কিছু না করি ওপারে গিয়ে কি জবাব দেবে.
জীবনের বাকিটা সময় ছেলের জন্য না হয় কাটিয়ে দিলাম.ভাইবোনদের কাছে আজ আমি বেইমান ও খারাপ মানুষ এখন যদি নিজের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু না করি তাহলে তো যতদিন বাঁচবো নিজের সন্তানদের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে.মা বাবা ভাইবোন ও সমাজের সবাই জেনে ও আজ প্রশ্ন করে এতবছরের টাকা কি করলাম.যখন আমার ছেলেটি না দেখে প্রশ্ন করে করবে কি এত বছরের টাকা কি করলাম তখন কি জবাব দেবো ছেলেটির কাছে.তারপর কিছু টাকা ঋন করে বাড়ি ও বিলের জায়গা কিনে নিলাম.এখন আমি ৪লক্ষ টাকা ঋন নিয়ে বেঁচে আছি.ঋনের বোঝা এত ভারি যে কাউকে বুঝাতে পারবো না.বার বার শুধু মনে পরছে কেন আমি আমার জন্য কিছু করলাম না.আজ বেইমান স্বার্থপর হয়ে গেলাম যদি আজ থেকে ১৫ বছরের আগে বেঈমান ও স্বার্থপর হতাম তাহলে আজকে এই বুড়া বয়সে কেদে কেদে প্রবাসে কাটাতে হত না.এখন তো ভাইবোন বাবা সবাই সুখে আছে.এখন আমার পরিবারের কেউ ডাকও দেয় না.
তখন খুবই কষ্টে লাগে যখন শুনি ওদের ব্যবহারের কথা.যাহাহোক প্রবাস জীবনের গল্প কখনো শেষ হবে না কারন আমরা প্রবাসে কখনো কঠিন ও বেঈমান স্বার্থপর হতে পারবো না. যে সমস্ত প্রবাসী ভাইয়েরা গল্পটি পড়বেন তাদের কয়েকটা কথা বলি.নিজের জন্য কিছু টাকা জমাবেন.নয়তো প্রবাস জীবন কখনো শেষ হবে না.আমার হয়তো কপাল খারাপ ভাইবোনদের বুঝাতে পারিনি.এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয় স্বার্থ ছারা.আজ যদি আমার ভাইবোন আমাকে একটু সহয়তা করতে তাহলে এখন বাড়ি যে কোন রকম খেয়ে কাটিয়ে দিতাম.তবে সবার ভাগ্য এক নয়.আপনের ভাই হয়তো অনেক ভালো আপনের ভাল চাইবে কিন্তু ভাইয়ের বউ কখনো চাইবে না.তেমনি বোন চাইলে বোনের স্বামী চাইবে না.
এই পৃথিবীতে নিজের সন্তান চেয়ে কেউ আপন হয় না.আমি যেমন বাবার কাছে আপন ,তেমনি আবার ভাইয়ের কাছে ভাইয়ের সন্তান.আবার আমার কাছে আমার সন্তান.এখন ভাইয়েরা আমার চেয়ে নিজের সন্তানকে নিয়ে ভাববে ও সন্তানের ভবিষৎ চিন্তা করবে এটা আমাদের সমাজের নিয়ম.
এক হৃদয়ভাঙ্গা গল্প
পড়ুন এক টাকার মেশিনের গল্প , জিনি আত্মহত্যার আগে লিখে গেলেন নিজের জীবনের কাহিনী , যাদের সন্তান বা স্বামী বিদেশে থাকেন তারা অবশ্যই দেখবেন কত কষ্ট করে আপনাদের জন্য মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান কে একটু ভাল ভাবে রাখার জন্য, ফ্যামিলি মানুষ গুলোর একটু সুখের জন্য সব মায়া ত্যাগ করে প্রবাসে আসছিল। জানিনাহ, এবার কার সুখের আসায় দুনিয়ার মায়াও ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে গেছেন।
বাড়ি ছিলো রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে।উনার সম্পর্কে যতোটুকু জেনেছি, মানুষ টা অনেক সহজ-সরল টাইপের ছিলেন,সবসময়ই সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করতেন,নিজের মনের কথাটা ঠিকমতো প্রকাশ করতেও পারতেন না, সিগারেট কিংবা কোন বাজে অভ্যাসও ছিলোনা। নয় মাস আগেই ছুটিতে দেশে গিয়ে বিয়ে করে এসেছিলেন। বাড়িতে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী নিয়ে ই উনার যৌথ ফ্যামিলি ছিলো।
উনার রুমমেট দের কাছ থেকে জানলাম, কিছুদিন থেকেই নাকি উনি বেশ উদাস আর মন খারাপ করে থাকত।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করত না, রাতে সবাই ঘুমাইত ওনি বেডে শুয়ে কেঁদে বালিশ ভিজাইতো।
সুইসাইড করার কারণ টা আর শেষ ইচ্ছে টা মরার আগে চিরকুটে লিখে গেছিলেন.. “মাস দুয়েক আগে উনার ভিসা নিয়ে একটু প্রবলেম হয়েছিল, দুইমাস ধরে বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারেনি; সেলারীর সব টাকাই ভিসার ঝামেলা মিটাইতে শেষ হয়ে গেছিলো।
ফ্যামিলির সবাই ভাবছিল, ওনি টাকা টা বৌয়ের পারসোনাল একাউন্টে পাঠাচ্ছে, বাড়িতে ফোন দিলে সবাই উনার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলত, কল কেঁটে ফোন বন্ধ করে রাখত, শেষ পনেরদিন মা উনার সাথে কথা বলেনি। বৌ ভাবছে টাকা বাজে পথে খরচ করতেছে, বৌও এসব নিয়ে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে গেছিলো। উনার সমস্যা টা কাউকে বুঝাতে পারেনি, কিংবা কষ্ট টা কেউ বুঝেনি, ঘরের বৌ এমন কি গর্ভধারিনী মা ও না।। ফ্যামিলির কাছ থেকে পাওয়া আঘাত টা সহ্য করতে না পেরেই পৃথিবীর মায়াও ত্যাগ করে নিজ রুমে ফাঁসি দিছিলেন।
চিরকুটে লেখা শেষ ইচ্ছে টা ছিলো, “লাশ টা যাতে দেশে না পাঠানো হয়, এখানেই দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হয়।” …শেষ ইচ্ছে টা হয়ত পূরণ করা সম্ভব হবেনা,কোম্পানি থেকে লাশ টা দেশে পাঠিয়ে দিবে। তবে কি পরিমাণ আঘাত আর কতোটুকু কষ্ট পাইলে একটা মানুষ মরার আগে এরকম আবদার করতে পারে??
ভাই সিরিয়াসলি একটা কথা বলি, প্রবাসী রা ভোগ- বিলাসিতা কিংবা নিজেদের সুখের জন্য বিদেশ আসেনি, ফ্যামিলির কথা চিন্তা করেই এসেছে।
দেশে যারা আছে তারা মনে করে প্রবাসী রা অনেক সুখে আছি, টাকার পাহাড়ে কিংবা টাকার গাছ নিয়ে বসে আছে, ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুধু টাকা পাঠাবো। কিন্তু আমরাতো বুঝি মাস শেষে টাকা পাঠানোর জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয়।
আপনার ভাই, ছেলে, স্বামী, বাবার প্রবাস লাইফের একদিনের কষ্ট যদি কখনো দেখতেন, সাথে সাথে বলতেন বাড়ি তে চলে আসতে প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব, তবুও প্রবাসে থাকতে হবেনা।
প্রবাসীদের কষ্ট বুঝতে বেশি কিছু করতে হবেনা, “ভোররাত চার টায় ঘুম থেকে উঠে 45° সেলসিয়াস তাপমাত্রার সারাদিন রৌদে পুঁড়ে 15/16 ঘন্টা ডিউটি করে রাত নয় টায় রুমে গিয়ে কিচেনে গরম পাতিলের ছ্যাঁকা খেয়ে রান্না করার কষ্ট টা একটু আন্দাজ করুন।
অবশ্যই, দেশে থেকে আপনারা কি করে বুঝবেন/ দেখবেন আর বলবেন। আপনারা তো প্রবাসীদের রক্তশুষে ভালোই মৌজে আছেন। আমরা যারাই প্রবাসে আছি, আমরা তো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী, হাজারো কষ্ট বুকে নিয়েও বলি অনেক ভাল আছি। কোন দিন বুঝতে দেইনি আপনার সুখের জন্য আমাদের জীবনের মূল্যবান দিন গুলোকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছি।
দেশের মানুষ গুলোর কাছে একটাই অনুরোধ, বিদেশে আপনার ফ্যামিলির যেই থাকুন বাবা, ভাই, স্বামী, বন্ধু, অন্যকোন সম্পর্কের আত্মীয় হোক তাদের সাথে একটু ভাল ব্যবহার করেন, তাদেরকে একটু ফোনে সময় দেন, একটু ভালো ভাবে কথৃ বলুন; তারা আপনাদের কাছে এরচেয়ে বেশি কিছু আশাও করেনা।কোনরকম মেন্টালি পেইন দিবেন না, কাছের মানুষের ছোট একটা কথাও ধনুকের তীরের মতো বুকে বিঁধে।সেসব ব্যথায় মেন্টালি সার্পোট কিংবা সান্ত্বনা দেওয়ার মতো এখানে ওনাদের কেউ নাই, সবরকম পেইন একাই নিতে হয়।
প্রবাসী ভাই-বন্ধু, দেশ থেকে যে যাই বলুক না কেন, মনে কিছু নিবেন না। সামর্থ্য যতটুকু আছে ফ্যামিলির জন্য ততটুকুই করবেন।কোনরকম আঘাতে ভেঙ্গে পড়বেন না,আর কোন রেমিটেন্স যোদ্ধ/ সহযোদ্ধা কে এভাবে হারাতে চাই না।
প্রবাসী গৃহবধূর অন্ধকার জীবনের গল্প
ভাসুর ও জাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করেছিলেন। সে দায়েই এখন কারাগারে বন্দি আছেন কানাডা প্রবাসী সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী। তবে চাঁদাবাজি নয় মুনতাহা চৌধুরী এখন আলোচনায় তার উদ্দাম ও বেপরোয়া জীবনাচারের কারণে। পুলিশের খাঁচায় বন্দি হওয়ার পর একে একে বেরিয়ে আসছে তার অন্ধকার জীবনের ‘ফুল স্টোরি’। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গল্পের বাইরেও আরও অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।
সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী। ডাক নাম ফুলি। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কাদিমল্লিক গ্রামের মইজ উদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে। পড়ালেখা করেছেন সিলেটের ব্লু বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার আগেই ২০০৭ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পরিবারের পছন্দে মায়ের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে কানাডাপ্রবাসী মাহবুব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মাহবুব চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কানাডায় চলে যান ফুলি। প্রথম প্রথম ভালই চলছিল। প্রবাসের রঙিন জীবন রঙ ধরায় ফুলির মনেও। একটু একটু করে আলো-আঁধারির ছায়া পড়ে তার মাঝে। ফুলি বেপরোয়া হতে থাকেন পোশাকে-আশাকে, চলনে-বলনে। খরচ বেড়ে যায় তার। স্বামীর কাছে আবদার কেবল বাড়তে থাকে। হিসাব মেলাতে হিমশিম খান কানাডার ‘মণিমহল’ রেস্টুরেন্টে কর্মরত মাহবুব চৌধুরী।
কিছুই বুঝতে চান না ফুলি। বিলাসী জীবনের খরচ মেটাতে তার শুধু টাকা চাই। টাকার জন্য বেপরোয়া ফুলি জালিয়াতির আশ্রয় নেন। স্বামীর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৮০ হাজার ডলার আত্মসাৎ করেন। তার স্বামী যে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন সেই মণিমহলের মালিক দেওয়ান শাহীনেরও ৬০০০ ডলার কবজায় নেন চেক জালিয়াতি করে। স্ত্রীকে নিয়ে যেন আর পারছিলেন না মাহবুব চৌধুরী। একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে সিলেট নগরীর উপশহরস্থ ফ্ল্যাট বিক্রির ‘দায়িত্ব’ দিয়ে দেশে পাঠান স্ত্রীকে। তবে মাহবুব চৌধুরী ভাবতে পারেননি দেশে এসে আরও ভয়াবহ ‘কীর্তিগাথা’র জন্ম দেবেন ফুলি।
৫ বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ফুলি দেশে আসেন গত ১৫ই মার্চ। সেদিন ছিল মাহবুব চৌধুরীর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। দেশে ফিরে ফুলি ওঠেন নগরীর ফাজিল চিশতে তার পিতার বাসায়। কানাডা থেকে মনে যে রঙ লাগিয়ে এসেছিলেন তার প্রলেপ থেকে যায় দেশে আসার পরও। দেশে ফিরেও বেপরোয়া চালেই চলতে থাকেন। বাইরে বাইরেই সময় কাটতো বেশি। কেউ কৈফিয়ৎ চাইলে বলতেন ‘ফ্ল্যাট বিক্রি’র চেষ্টার জন্যই বাইরে থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিনই বাসা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বের হতেন। হাতের টাকা শেষ করে তবেই ফিরতেন বাসায়।
ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া, আনন্দফুর্তি ফুলির জীবন যেন এমনই। কেনাকাটার সূত্রে পরিচয় হয় অলঙ্কার প্রতিষ্ঠান জেমস গ্যালারির নয়া সড়ক শাখায় কর্মরত দিলদার হোসেন ওরফে নাজমুলের সঙ্গে। বিনিময় হয় দু’জনের মোবাইল ফোন নাম্বার। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রেহানউল্লার ছেলে নাজমুলের কাছে ফুলি পরিচিত হন ‘খুশি’ নামে। পরিচয়ের পরদিনই মেন্দিবাগের একটি হোটেলে লাঞ্চ করেন তারা। ফুলি প্রথম দিকে নিজের বিবাহিত পরিচয়টি আড়াল করেন নাজমুলের কাছে। তবে এক সময় নাজমুল জানতে পারেন বিষয়টি। ফুলি বিষয়টি স্বীকার করেন, তবে আংশিক। বলেন, এক বছর আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে ‘আগের স্বামী’র সঙ্গে। আগের বৃত্তান্ত জানাজানির পরও সম্পর্কে ভাটা পড়েনি এতটুকু। বরং আরও গভীর হতে থাকে সে সম্পর্ক। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
ডিভোর্সের কাগজ ছাড়া কাজী বিয়ে পড়াতে রাজি না হলে ২৫শে জুন মৌলভী ডেকে একে অপরকে ‘কবুল’ করেন তারা। ফুলির বেপরোয়া জীবন আরও গতি পায়। পার্টি, মদ, ড্যান্স সব কিছুরই স্বাদ নিতে থাকেন তারা। নাজমুলের মাধ্যমে ফুলির পরিচয় হয় জুবায়ের, লিজা, উজ্জ্বল, কুটি, রিপন আলীর সঙ্গে। এদের সবার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন ফুলি। ফুলির নেতৃত্বে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এ বাহিনী। এমনকি ফুলিকে কেন্দ্র করে সাগরদীঘির পারের জনৈক ফাহাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে নাজমুল বাহিনী। এই ফাহাদের বাসাতেই ভাড়া থাকতেন ফুলি-নাজমুল।
ফুলির বিলাসী জীবন টানতে কেবলই টাকার প্রয়োজন। তাই নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে তারা। ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে নগরীর সুবিদবাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। চাঁদা চেয়ে ফোন করে সুবিদবাজারেরই আরও এক ব্যবসায়ীর কাছে। এতেও মন ভরছিল না ফুলির। মোটা একটা ‘দান’ মারতে নাজমুলের হাতে নিজের ভাসুর বেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও জা মাহবুবা নোমান চৌধুরীর ফোন নাম্বার তুলে দেন। তবে সাহস করতে পারছিলেন না নাজমুল। নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেন ফুলিকে। কিন্তু কিছুতেই তাকে বোঝানো যাচ্ছিল না। উল্টো আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে ফুলিই চাপে ফেলেন নাজমুলকে।
২৮শে আগস্ট ২০১৪। সেদিন ছিল দিলদার হোসেন নাজমুলের জন্মদিন। ফুলি নাজমুলের বন্ধুদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে নগরীর নয়া সড়কস্থ সিলভার প্যালেস রেস্টুরেন্টে একটি পার্টির আয়োজন করেন। পার্টি শেষে সন্ধ্যায় সবাই মিলে রোজভিউ হোটেলে নেশার আসরে যোগ দেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাজমুল উল্লেখ করেন, নেশার ফাঁকে বারবার ফুলি তার ভাসুর বেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও জা মাহবুবা নোমান চৌধুরীর কাছে চাঁদা চেয়ে ফোন দিতে চাপ দেন। দু’জনের মাঝে এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে চাঁদা চেয়ে ফোন দেন নাজমুল। মাহবুবা নোমানের কাছে ফোন করে দাবি করেন ১০ লাখ টাকা। হুমকি দেন টাকা না দিলে অপহরণ করে হত্যা করা হবে তাকে ও তার ছেলেকে। ফোনে টাকা দাবি না করলে হয়তো জানা হতো না ফুলির পেছনের গল্পগুলো।
ফোন পেয়ে আতঙ্ক ভর করে মাহবুবা নোমানের মনে। নিজের চেয়ে ছেলের জন্য বেশি ভয় তার। হুমকি অব্যাহত থাকায় বন্ধ করে দেন ছেলের স্কুল যাওয়া। শুধু মাহবুবা নোমানের কাছে নয়, ফোন যায় কানাডায় তার স্বামী বেলাল চৌধুরীর কাছেও। হুমকি দেয়া হয় দেশে এলে তাকেও হত্যা করা হবে। চাঁদা দাবি করা হয় একই অঙ্ক ১০ লাখ টাকা। আতঙ্কিত মাহবুবা নোমান চৌধুরী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কোতোয়ালি থানায় দু’টো সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রথমটি ২৮শে আগস্ট (নং ১৬৯১)। এক মাস অপেক্ষা করে ফল না পেয়ে দ্বিতীয় সাধারণ ডায়েরিটি করেন ২৬শে সেপ্টেম্বর (নং ২১০৩)। প্রতিকার মেলেনি এর পরও। ফোনে হুমকি অব্যাহতই থাকে। নিরুপায় হয়ে শরণাপন্ন হন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের। ইতিমধ্যে বিষয়টি জানান কানাডা দূতাবাসে, উদ্বিগ্ন হয় দূতাবাসও।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে কনসুলার অফিসার ডুরেন রহমান নিরাপত্তা চেয়ে যোগাযোগ করেন পুলিশের সঙ্গে। এক পর্যায়ে তদন্তে নামেন গোয়েন্দারা। খুঁজে বের করেন পেছনের হোতাদের। বেরিয়ে আসে এমন গল্প যা কারও ধারণাতেই ছিল না। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ফুলি শুধু নাজমুলের সঙ্গেই নয় সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন আরও অনেকের সঙ্গে।
নাজমুলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই নাজমুলের বন্ধু রিপনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন ফুলি। এ নিয়ে নাজমুলের সঙ্গে তার টানাপড়েনও তৈরি হয়। ফুলির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় নাজমুলের। রিপন আরও কাছে আসেন ফুলির। গত ১৩ই নভেম্বর মালাবদল করেন ফুলি ও রিপন। সে বৃত্তান্তও সবার কাছে অজানা থাকে। হঠাৎ একদিন মেয়ের ব্যাগ খুললে এ বিয়ের কাবিন দেখতে পান ফুলির মা রতœা খানম চৌধুরী। চমকে ওঠেন, মেয়ে যে বখে যাচ্ছে তা টের পেয়েছিলেন। তবে এতটা যে ঘটে গেছে কল্পনাতেও ছিল না। ফোন দেন রিপনের কাছে। রিপন দৃঢ় কণ্ঠে স্বীকার করেন ফুলি তার স্ত্রী। আদালতে নাজমুল যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে জানা যায়, ২০১৩ সালে আরিফ নামে ঢাকার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গেও বিয়ে হয়েছে ফুলির।
বল্গাহীন জীবনাচারের কুশীলবরা এখন পুলিশের খাঁচায়। লাল দালানে বন্দি রঙিন জীবনের নায়ক-নায়িকারা। সিলেট মেট্রো পুলিশের গোয়েন্দা জালেই শেষমেষ ধরা পড়ে তারা।
একজন জীবন-যোদ্ধার গল্প
শিক্ষা জীবনের শুরুতে বিভিন্ন স্তরে সীমিত মেধাতালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করালেও, আমি মেধাবী কিংবা পাঠনিবেশী কখনোই ছিলাম না। আমার কাছে নিউটন কিংবা প্যাসকেল দের কঠিন কঠিন কথার চেয়ে – খেলোয়াড় শেন ওয়ার্ন এর গুগলি কিংবা অভিনেত্রী জুডি ফস্টারের অভিনয়শৈলী অথবা তারকাশঙ্করের নিতাই কবিয়াল আর বসন-এর প্রেম অনেক বেশী ভালো লাগতো। এগুলোর পাশাপাশি পড়াশুনা , সেটা কি আর এমন কঠিন?? ভুল ছিলাম – এস এস সি, এইচ এস সি পত্রিকায় ছবি, কিন্তু হোঁচট টা খেঁয়ে বাস্তবতার হাঁটু রক্তাক্ত হলো বুয়েটে এসে ।হ্যা, এখানে অনেক নিয়ম, পি এল এর আগে পড়তে হয়, পূর্ব পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে হয়, কোথাকার জল কোথায় গড়ায় জানতে হয়।কিন্তু, আমি কি নিয়মের বেড়াজালের প্রভুত্ব কে স্বীকার করি?? ফলাফল সাদা কাগজে সি জি পি এ এর ঘড়ির হৃদয় ৩ এর নীচের ঘরগুলোকে বড় ভালোবেসে ফেললো। মুখে দাঁড়ি চলে এলো, আশে পাশে এত ভালো ভালো ফলাফল- সবসময় শুনতাম ঘাড়ের কাছে কারো ফিসফাস ধ্বনি ‘তোকে দিয়ে হবে না’।
বন্ধুরা বললো এত উদাস কেনো ?? লজ্জায় কিছু বলতাম না। শিক্ষক ক্লাশরুমে বলেই দিলো তোমাদের মধ্যে কিছু ছেলেই ইঞ্জিনিয়ার হবে- বাকীরা তো!! হ্যা আমি ধ্বংস হচ্ছিলাম , চাইনি- কিন্তু হচ্ছিলাম- কারন আমি দৌড়ুতে ভুল করছিলাম, ভয় পাচ্ছিলাম নিয়মটাই জানি না বলে- বার বার । কোনো শিক্ষক , কোনো বন্ধু , কোনো অগ্রজ আসেনি সেদিন একটি কথা বলতে –‘ আমি তোমাকে সাহায্য করবো, এভাবে করলেই তুমি ভালো করবে’। অনেক বন্ধুরা তো হাসাহাসি –ই শুরু করলো- যখন উদাস হয়ে মাঝে মাঝে চুপ থাকতাম, আমার নাম দিয়ে দিয়েছিলো ‘জি পি এ ধীমান’ ।একবার এক বন্ধু এগিয়ে এলো , বললো, ধুত! জি পি এ নিয়ে চিন্তা করিস না। চাকরী পেতে জি পি এ লাগে না। পাশ করে বের হবার পর দেখলাম ভালো সি জি পি এ এর বন্ধুরা সবাই ভালো চাকুরী পেলো, সেই বন্ধুর কাছে গেলাম – বললো চাকুরী পাওয়া কি এতো সহজ? একটু সি জি পি এ টা তিন এর উপর রাখতি!!!
চাকুরী অবশেষে পেয়েছিলাম –বেতন টা ছিলো আমাদের বাড়ির ড্রাইভারের সমান আর কাজের সময় ছিলো সকাল ৮ থেকে রাত ৮ টা। আমার বাবা ছেলের প্রথম চাকুরি উপলক্ষ্যে নতুন ২ টা শার্ট আর মাপ দিয়ে প্যান্ট কিনে আনলো –সাথে একটা টাই। বাসা থেকে টাই টা পরেই বের হতাম , কিন্তু অফিসে গিয়ে খুলে ফেলতাম। কাজ ছিল মাঠে ঘাটে পাইলিং আর ফাউন্ডেশনের । বড় বড় রিগ যখন মাটি ফুঁড়ে নামতো তখন ভাবতাম সেই বিজ্ঞাপনের কথা –চাকুরীপ্রাপ্ত সুদর্শন ছেলে তার সদ্য বিবাহিত বধূকে বলছে ‘স্বপ্ন টা এবার সত্যি হবে – দক্ষিণের জানালা-‘ সেই বন্ধুর সাথে দেখা ,টেলি কমুনিকেশনে টাওয়ারের রক্ষনাবেক্ষন প্রকৌশলী – বেতন আমার সাড়ে তিন গুন। আমার কথা শুনেই বললো –লেগে থাক । বেতন বেড়ে যাবে । আমি লেগে থাকলাম। বন্ধুর কথা সত্যিও হলো , বেতন বেড়ে গেলো – দেড় বছরে ১ হাজার টাকা। তাতেও তিনটা শুন্য এর আগে ২ তা অঙ্ক যুক্ত হলো না। প্রমাদ গুনলাম, হিসেব করে দেখলাম এভাবে বাড়লে ২০ বছর পরে হয়ত দুইবেলা ভালোভাবে থাকার আর খাবার টাকা হবে। ২০ বছর একটা লম্বা সময়।
বন্ধুকে বললাম , দোস্ত বাড়লো তো না , আমাকে কি একটা চাকুরীর রেফেরাল দিবি তোর কোম্পানিতে? তুই তো বেশ ভালোই আছিস। কয়েকদিন পর তার ই-মেইল জবাব বন্ধ হলো , তার ফোনে ক্রমাগত রিং এর ধ্বনি তে আমি প্রতিউত্তরে কোনো কিছুই শুনতে পেলাম না। আমি আমার বুয়েটের এডভাইজারের সাথে দেখা করলাম- তিনি বললেন, বি সি এস দাও।
বললাম এই তো সামনেই দেব। বি সি এস দিলাম , প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের যখন অপেক্ষা করছি তখন বাবা একদিন বললেন তুমি বিদেশে কেন শিক্ষা নিচ্ছ না-আমার এই আশা টা কি পূরণ হবে না? অস্ট্রেলিয়া আসলাম মাস্টার্স করতে , প্রথম সেমিস্টারের টাকা বাবার কাছ থেকে নিয়ে আসলাম ৫০০০ ডলার । এই আমার বাবার কাছ থেকে শেষ টাকা নেওয়া । বাকী ১৫০০০ ডলার , থাকা খাওয়া খরচ সব নিজে উপার্জন করলাম । সি জি পি এ কম , মেধাহীন কেউ নিশ্চয় স্কলারশিপ ফান্ড পাবে না কিংবা টিচার্স এসিস্ট্যান্ট হবে না। এই উপার্জনের জন্য অস্ট্রেলিয়ান এক রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করলাম।
রেস্টুরেন্টে কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম, আমি কতটা শারীরিক পরিশ্রম করতে সক্ষম। ৪০ পাউন্ড মাসেল এর ভারী ড্রাম গুলো নিমিষেই নামিয়ে ফেলতাম। গরম জলে কাজ করতে করতে এত অভ্যস্ত হয়েছিলাম যেঝে ফুটন্ত পানিতে হাত ডুবালে ও টের পেতাম না মাঝে মাঝে। একদিন ১৪ ঘন্টা কাজ করে বের হয়ে দেখি ঐ দিনের শেষ রাতের নির্ধারিত বাস আসবে না। পরের বাস ভোরবেলা ।দূরত্ব ৭ মাইলের মত । অপেক্ষা করব, কিন্তু পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা । ট্যাক্সি নেব, ২০ ডলার চলে যাবে। ২০ ডলার অনেক টাকা। তাই হাঁটা ধরলাম। ৭ মেইল হেঁটে যখন বাসায় পৌছালাম রাত ৩ টা । আমার ফ্ল্যাট-মেট ভুলে হয়ত ভাত অবশিষ্ট রাখেনি। ভাত বসালাম সাথে আলু সিদ্ধ । ৪ টা বাজে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে মনে পরলো পরের দিন ১১ টায় একটা এসাইন্টমেন্ট জমা দিতে হবে। এলার্মটা ৭ টায় দিলাম । পরেরদিন এসাইন্টমেন্ট জমা দেবার সময় শিক্ষিকা কে সাথে বোনাস একটা হাসি উপহার দিলাম।
না এইরকম কষ্ট কখনো করব- ভাবিনি । আমি কখনো জল ও খেতে চাইলে মা দৌড়ে এসে রান্নাঘর থেকে জল নিয়ে আসতো। মা বাবার বড় আদর করা বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার টার হাত এখন প্রায়ই পুড়ে যায় , পিঠে-কাঁধে ব্যাথা করে। এর মাঝে একদিন শুনলাম আমি বি সি এ স লিখিত পরীক্ষায় ও উত্তীর্ণ। মৌখিক পরীক্ষার চিঠি পাঠানো হয়েছে ঢাকা বাসায়। বাবা আমাকে বললেন –আসিস না, তুই পারবি না এদের সাথে মিশতে, পারবি না অসৎ হতে । আমি গেলাম না।
আমি বাবার কাছ থেকে পুরো টাকাটাই নিতে পারতাম। কিন্তু নেই নি। আমি নিজের ইচ্ছেতেই সংগ্রামটা কে বেছে নিয়েছিলাম। যেদিন ৩ তা ডিস্টিঙ্কশন নিয়ে পাশ করা মাস্টর্স এর রেজাল্ট টা আমার রেস্টুরেন্ট এর মালিক কে দেখাই , বার টুলে বসে থাকা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে উঠে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো। এখানেই সুন্দর ইতি হতে পারতো কিন্তু হয়নি- অস্ট্রেলিয়ায় সেই সাদা কলারের চাকুরী আর পাওয়া হলো না। এক পর্যায়ে আমেরিকান নাগরিক বউ এর হাত ধরে আমেরিকা। আমেরিকায় কখনো কেরাণী কখনো দপ্তরী কখনো সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ এবং অবশেষে রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার।
আমার আর্জেন্টিয়ান বস ইন্টারভিউ তে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
তোমার ব্যাক গ্রাউন্ডে ইঞ্জিনিয়ারীং কাজ খুব কম। আমেরিকায় তো একেবারেই নেই –ই। কেন তোমায় নেব?
বলেছিলাম, জীবনের ৬ বছর ব্যাচেলার , ২ বছর মাস্টার্স যা পড়তে ব্যয় করলাম –তার উপর ভিত্তি করে প্রথম কাজ করার সুয়োগ পাওয়া হচ্ছে জীবন বাজী রাখা। তুমি অনেক অভিজ্ঞ মানুষ রাখতে পারো , কিন্তু জীবন বাজী রেখে আমার মত কাজ করবে না। কিন্তু আমি করব কারণ এটি আমার এত এত বছর পর প্রথম সুযোগ।
আমাকে ৩৪ জন ইঞ্জিনিয়ার এর মাঝ থেকে আমাকে নেয়। বলা বাহুল্য , আমি ছিলাম সর্ব কনিষ্ঠ।
জীবনে জয় –পরাজয় নিয়ে কখনো ভাবিনি। জীবন টা ছিল- রোদ এলে মাঠ, বৃষ্টি এলে ভিজে যাওয়া। কিছু সময় জয় পেয়েছি, বেশীরভাগ –ই পরাজয়ের কাহিনী। তবে নক্ষত্র বীথির নব্য হতে যাওয়া তারকার মাঝে যেই অত্যন্ত অল্প সংখ্যক এর সাথে আমার জীবন কিছুটা মিলবে তাদের জন্য বলবো ‘ হেরে যাও যদি- নক্ষত্রবীথি চ্যুত হও যদি- তারা ভরা আকাশটা দেখো আর ভেবো তুমি অসীমের সাথে মিতালী পেতেছো- আধার আলোকের উর্ধে সেই তুমি’
আর যাদের এমনটা ভাবার অবকাশ নেই, সেই সকল শিক্ষক, বন্ধু কে বলছি…বাসার উঠোনে উর্বর মাটিতে খুড়োখুড়ি করে সাজানো ফুলের বাগান তো সবাই ই পারেন হয়ত, একটি বার মরুর ধূসর উষর বুকে একটা গোলাপ এ ফুটিয়ে দেখার চেষ্টা করুন না! সি জি পি এ ৩ এর নীচে হওয়ায় সেশেন্যাল ভাইবা না নিতে চাওয়া বুয়েটের সেই স্যার কে জানাতে চাই- মাত্র কিছু বছরেই আমার ২ টা ড্রয়িং নিউইয়র্ক শহরের সরকারী ডিজাইনের তালিকায়।
ইন্দোনেশিয়ার এক যৌনদাসীর গল্প
'মানুষ আমাকে মনে করে আমি খুব শক্ত মেয়ে৷ কিন্তু মানুষ জানে না ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছি৷ আমি গোপনে অশ্রু ফেলি, কিন্তু কাউকে আমি আমার কান্না দেখাতে চাই না'৷ কথাগুলো বললেন সুনারশি৷ ইন্দোনেশিয়ার এক নারী৷
এটা অবশ্য তার আসল নাম নয়৷
১৫ বছর আগে৷ সুনারশির বয়স তখন ১৭৷ খুব গরিব ঘরের মেয়ে৷ স্কুলের ফি দেয়ার মত কোন টাকা না থাকায় এক সময় স্কুলের গন্ডি আর পেরুতে পারলেন না৷ সেই সময় তার চিন্তা এলো বিদেশে যাবার৷ অভিবাসী শ্রমিকদের নানা সাফল্যের কথা শুনে তিনিও সিদ্ধান্ত নিলেন এই কাজ করবেন৷ চলে গেলেন একটি প্রশিক্ষণ কোম্পানিতে৷ সেখানে গিয়ে গৃহকর্মের প্রশিক্ষণ নিলেন৷ সংগ্রহ করলেন পাসপোর্ট৷
একদিন ঐ কোম্পানি জানালো এক আরব তার বাসার কাজের জন্য এমন একজনকে খুঁজছেন যে হবে একজন কুমারী, বাদামী বর্ণের গায়ের রং, লম্বা৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুনারশি বললেন: ‘আমি অন্য আরও অনেকের সঙ্গে এই চাকুরির জন্য তালিকাভুক্ত হলাম৷ তারপর আমাদের নেয়া হলো ইন্টারভ্যু৷ একশ মেয়ের মধ্যে আমাকে পছন্দ করা হলো৷ আমার বন্ধুরা আমার নির্বাচিত হওয়ায় ঈর্ষান্বিত হল! নির্বাচিত হবার দুই সপ্তাহ পর আমাকে এক আরব নিয়ে গেলেন, তার বাড়িতে, সৌদি আরবে৷
এখান থেকেই শুরু হলো দু:স্বপ্নের৷ আমাকে যে ব্যক্তি তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন, সে আমার আসল নিয়োগকর্তা নয়৷ আসল নিয়োগকর্তা তার পক্ষাঘাতগ্রন্থ বাবা৷ তার শরীরের নিম্নাংশ অবশ৷ সেই বৃদ্ধ আমাকে বললো ভাইব্রেটরের সাহায্যে তার পুরুষাঙ্গে মালিশ করতে৷ আমি বললাম, না৷ আমি পারবো না৷' ক্ষেপে গেলো ঐ ব্যক্তি৷ নানা ভয়ভীতি দেখালো৷ তাকে ঐ বাড়িতেই বন্দি করে রাখা হলো৷
কেবল ঐ ব্যক্তিই নয়, তার নয় পুত্রও পালাক্রমে তাকে দিয়ে মালিশ করাতো৷ করতো নানা যৌন অত্যাচার৷ এর পাশাপাশি তাকে রান্নাও করতে হতো৷ একদিন সুযোগ পাওয়া গেলো সেই বাড়ি থেকে পালানোর৷ ঘরের দরজার তালা লাগানো ছিল না৷ বাড়ির পিছনে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই ধরা পড়ে গেলো সে৷ আসলে এটা ছিল একটি ফাঁদ৷ তাকে এবার বিক্রি করে দেয়া হলো ১৩০০ ডলারে৷
‘আমি এবার কুমিরের মুখ থেকে পড়ে গেলাম সিংহের মুখের সামনে৷ নতুন এই ব্যক্তি আসলে একজন দালাল৷ যখন কোন খদ্দেরের মেয়ে প্রয়োজন হতো আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হতো৷ আমি হলাম এক যৌনদাসী৷ এক বছরেরও বেশি সময় আমার উপর যৌন অত্যাচার চালানো হয়৷ আমার সঙ্গে পশুপাখির মতো ব্যবহার করা হতো৷ কিন্তু আমার জন্য প্রচুর অর্থ নিতো সেই দালাল,'' বলেন সুনারশি৷
এক সময় সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে৷ ছয় মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান সুনারশি৷ তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নিজ দেশে৷ এখন সেই সুনারশির বয়স চল্লিশ৷ তিনি জানেন না তাঁর ভবিষ্যৎ! ইউনিসেফের হিসাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাচার হওয়া ১ লাখ নারী শিশু এখন যৌনদাসীর জীবন কাটাচ্ছে৷
একজন প্রবাসীর কথা: প্রবাস জীবন
আমরা যারা প্রবাসী তাদের কেউ টাকার জন্য, কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য। উদ্দেশ্য যেটাই হোক কথা একটাই সেটা আমরা প্রবাসী। নিজের দেশ, নিজের জন্মভূমী, নিজের দেশের মাটি আর প্রবাস জীবনের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। প্রবাস জীবনে যদি কেউ রাস্তায় হাটেন বা কোথাও বেড়াতে যান কিংবা অফিসে কাজ করেন সব জায়গাতে আপনি যে প্রবাসী তা অন্য সবাই প্রমান করে দেবে। না হয় বেশি খাতির করে, না হয় নাক উচিয়ে বলে দেবে আপনি প্রবাসী, আপনি অন্য জাতি, আপনি অন্য মানুষ। হা কথাটা সত্য কিন্তু আমরাও চাই স্বাভাবিক হতে, সবার সাথে এক সাথে চলতে, কথা বলতে। এর মধ্যে কয়েকটি জিনিস বাধা হয়ে দাড়ায়।
এর মধ্যে সবার আগে বাধা দেয় কথা। আর কথার জন্য চাই ঐ ভাষায় পূর্ণ দক্ষতা যা অর্জন করা একজন পূর্ণ বয়ষ্কের জন্য খুবই কষ্টকর। একজন ততটুকু শিক্ষতে পারে যতটুকু তার নিজের চলার জন্য প্রয়োজন। এজন্য ভাষাগত একটা বড় ব্যবধান থেকে যায়। এর পাশাপাশি আরেকটি সমস্যা খাবার। আমরা বাঙ্গালীরা ভাত, ডাল, মাছ আর মায়ের হাতের মমতা দিয়ে রান্না কারা বাংলার টাটকা স্বতেজ সব্জি, ভাজি খেতে অভ্যস্ত। এর বদলে যেকনো দেশের যত ভাল খাবারই হোক না কেন কিছু দিন পর তা বিদ্রহ করে। বিদেশে ঐ দেশের প্রচলিত খাবারের সাথে মানিয়ে নিতে প্রত্যেকে রীতিমত মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।
চলাফেরা বা বন্ধু বান্ধব সে তো আর এক অবস্থা। বন্ধু বলতে আমরা বাঙ্গালীরা যা বুঝি, যা জানি, যে ছবি মনের মাঝে ভাসে, সেটা থেকে আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য সব দেশের বন্ধুর সংঙ্গা ভিন্ন। আমরা বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাব, আড্ডা মারবো, ঘুরবো, সন্ধায় কোন এক চায়ের দোকান অথবা খেলার মাঠে অথবা বাজারে অথবা পছন্দের কোন জায়গায় বাসা, হাসি তামাসা করা, গল্প (যার কোন লাইন থাকে না) করতে করতে বাসায় ফেরার সময় পার হয়ে যাবে। কারন সময়ের কথা কারও মনে থাকে না।
এত কিছুর পরও প্রবাসীরা হাসিমুখে সব মেনে নেয় কারন প্রবাসী সবাই একটা স্বপ্ন নিয়ে প্রবাস জীবন বেছে নেয়। এরপর পরিবারের মানুষও যখন কথা বলে বা চিঠি লেখে তখন কেমন আছিস, কোন চিন্তা করিস না, আমরা ভালো আছি, বাড়ির কোন সমস্যা অথবা সমস্যার সমাধান, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত হচ্ছে কিনা এই বিষয়গুলই বলে। কেউ কেউ অনেক সময় ঝগড়া করে, তর্ক করে, নালিস করে।
আমার মনে হয় কোন প্রবাসীকে দেশ থেকে (অন্তত যাদের প্রবাস জীবনের অভিঙ্গতা নাই) একজন প্রবাসীর মনের অবস্থা, তার একাকিত্ত্ব, তার আবেগ, তার কষ্ট, তার উদাসীনতা, তার নিরব কান্না এগুলো বুঝতে পারে না। এটা সত্য যে এই অনুভূতী গুলো অনুভব করাও তাদের পক্ষে সম্ভব না। প্রবাসী জীবনে প্রবাসীরাই এই গুলো বেশি অনুভব করেন।
প্রবাস জীবনে কেউ দুঃখ পায় না, কারন দুঃখ পেতে আপনজন প্রয়জন হয়। আপনজন ব্যতীত অন্য কেউ দুঃখ দিতে পারে না। প্রবাস জীবন এমনই যে এই জীবনে দুঃখ পাওয়া যায় না। তবে প্রবাস জীবনের সঙ্গী হয় কষ্ট এবং এমন ভাবে লেগে থাকে যে পিছুই ছাড়তে চাই না। দুঃখ এবং কষ্টের মাঝে যে বিশাল ব্যবধান তা প্রবাসীদের মতো অন্য কেউ অনুভব করতে পারে না। প্রবাসে প্রবাসীরা যা অর্জন করেন সেটা অর্থ কিংবা শিক্ষা যায় হোক না কেন সেটা তার অতুলনীয় কষ্টের ফসল ছাড়া কিছুই না।
আপনাদের কাছে অনুরোধ, যারা দেশে আছেন আর বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-সজন অথবা পুত্র-কন্যা কিংবা স্বামী-স্ত্রী যেই প্রবাসী হোক না কেন সব কিছুর মধ্য দিয়ে প্রবাসীদের সেই কষ্ট, অনভূতি, বেদনা, নিরব কান্না একটু বোঝার চেষ্টা করবেন। তাদেরকে যতখানি সম্ভব একাকিত্ত থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করবেন, তাদেরকে যত খানি সম্ভব নিজেদের কাছে রাখার চেষ্টা করবেন। অপনি কল্পনাও করতে পারবেন না আপনার বিশেষ এই অনুভূতি একজন প্রবাসীর জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলবে। তার প্রবাস জীবন কতখানি আনন্দময় হয়ে উঠবে।
প্রবাসীদের ঈদ মানে কষ্ট
ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ। এই কথা সবাই মানলেও প্রবাসীদের জীবনে এই কথার বাস্তবতা খুজে পাওয়া মুশকিল। প্রবাসীদের ঈদটা একটু অন্য রকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটা অত্যান্ত কষ্টের। মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ।
এই ঈদকে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন আশা আকাংখা আর প্রস্তুতির কমতি থাকেনা। ঈদ আসে ঈদ যায় কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্ট এতটুকুও কমেনা। ফজরের আযানের পর দল বেধে ছুটা-ছুটি,দলবেধে পুকুরে ঘোসল শেষ করে সামান্য মিষ্টি মুখ করে নতুন জামা কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ঢাক দিয়ে বলেনা সেমাই খেয়ে যাও।
এখন আর নতুন জামা পরে সালাম করলে কেউ নতুন টাকার নোটগুলো হাতে উঠিয়ে দেয়না। এসবের একটাই কারন আর তা হলো আমি এখন বাংলাদেশ থেকে অনেক অনেক দুরে। সৌদি আরবের মরু প্রান্তরে। এখানে ঈদ মানে শুন্যতা, ঈদ মানে না পাওয়ার কষ্ট। পবিবার পরিজন ছাড়া ঈদ যে কত কষ্ট তা একমাত্র প্রবাসীরাই বুঝে। সকাল হলেই ঈদ এখনো আছি ডিউটিতে।
শেষ রাতে ঘোসল সেরে সন্ধ্যা রাতের বাশী বাত এর বাশি তরকারী খেয়ে ঈদের নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি। পুর্বাকাশে সুর্য মামার দেখা পাওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় ঈদের নামাজ । এর মাঝে আসতে শুরু করবে দেশ থেকে আপনজনদের মিসকল আর খুদে বার্তা।
ঈদের প্রস্তুতি জানার জন্য ফোন করেছিলাম শারমিন কে। ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতেই পাশ থেকে আমার দুই বছরের ছোট মেয়েটি কি যেন বলতে চাইছে । তার মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সে বুঝাতে চেয়েছে গতকাল বাজার থেকে আমার জন্য লাল টকটকে জামা আর বাঁশিওয়ালা জুতা এনেদিয়েছে। আর সেটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। ছোট্র মেয়েটার অস্পষ্ট কথাগুলো শুনে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো ।
মা-মেয়ে দুজনের কথা শুনছিলাম আর চোখের পানি মুছতেছিলাম টিস্যু দিয়ে ।সবকিছু খুলামেলা না বললেও এতুকুটু বুঝতে পেরেছি ঈদে খরচ করার জন্য যে টাকা পাঠিয়েছি তা বর্তমান সময়ের জন্য যথেষ্ট নয়। বললাম আজকালের মধ্যেই আরো কিছু টাকা পাঠিয়ে দিবো টেশন করবেন না। জানলাম সবার জন্য কেনাকাটা শেষ। এখন শুধু অপেক্ষা ঈদের দিনটীর জন্য।
এতূকু জেনে ভালো লাগলো আমাদেরর কষ্টের উপার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের পরিবার সুখে -শান্তিতে ঈদ করতে পারছে। এটুকুই প্রবাসীদের স্বার্থকতা। ঈদের নামাজ আর দেশে ফোন করার পর কষ্টের তীর্বতাটাকে আরো ভারী করে ঘুমানোর প্রস্তুতি। বুকফাটা কষ্ট আর যন্ত্রনাটাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা যেন কষ্টের ভারটা একটু কমে।
আর তাতেই দুপুর ঘনিয়ে পুর্বের সুর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে সামান্য কিছু মুখে দিয়ে দু'এক জন বন্ধুকে সাথে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের কষ্টের দিনটি।
কাতার প্রবাসীর আত্মহত্যা গল্প
মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের সুখের জন্য, সব মায়া ত্যাগ করে প্রবাসে এসেছিলো। জানিনা এবার কার সুখের আসায় দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে গেলো। বাড়ি ছিলো রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে। উনার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, মানুষ টা অনেক সহজ-সরল টাইপের ছিলেন, সবসময়ই সোজা সাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করতেন। নিজের মনের কথাটা ঠিকমতো প্রকাশ করতেও পারতেন না, সিগারেট কিংবা কোন বাজে অভ্যাসও ছিলোনা। নয় মাস আগেই ছুটিতে দেশে গিয়ে বিয়ে করে এসেছিলেন। বাড়িতে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী নিয়ে ই উনার যৌথ ফ্যামিলি ছিলো।
উনার রুমমেটদের মাধ্যমে জানা গেছে, কিছুদিন থেকেই নাকি উনি বেশ উদাস আর মন খারাপ করে থাকত। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করত না, রাতে সবাই ঘুমাইত ওনি বেডে শুয়ে কেঁদে বালিশ ভিজাইতো। সুইসাইড করার কারণ টা আর শেষ ইচ্ছে টা মরার আগে চিরকুটে লিখে গেছিলেন.. “মাস দুয়েক আগে উনার ভিসা নিয়ে একটু প্রবলেম হয়েছিল, দুইমাস ধরে বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারেনি। সেলারীর সব টাকাই ভিসার ঝামেলা মিটাইতে শেষ হয়ে গেছিলো। ফ্যামিলির সবাই ভাবছিল, ওনি টাকা টা বৌয়ের পারসোনাল একাউন্টে পাঠাচ্ছে, বাড়িতে ফোন দিলে সবাই উনার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলত, কল কেঁটে ফোন বন্ধ করে রাখত। শেষ পনেরদিন মা উনার সাথে কথা বলেনি। বৌ ভাবছে টাকা বাজে পথে খরচ করতেছে, বৌও এসব নিয়ে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে গেছিলো। উনার সমস্যা টা কাউকে বুঝাতে পারেনি, কিংবা কষ্ট টা কেউ বুঝেনি, ঘরের বৌ এমন কি গর্ভধারিনী মা ও না।। ফ্যামিলির কাছ থেকে পাওয়া আঘাত টা সহ্য করতে না পেরেই পৃথিবীর মায়াও ত্যাগ করে নিজ রুমে ফাঁসি দিয়েছেন।
চিরকুটে লেখা শেষ ইচ্ছে টা ছিলো, “লাশ টা যাতে দেশে না পাঠানো হয়, এখানেই দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হয়।” …শেষ ইচ্ছে টা হয়ত পূরণ করা সম্ভব হবেনা কারণ কোম্পানি থেকে লাশ টা দেশে পাঠিয়ে দিবে। তবে কি পরিমাণ আঘাত আর কতোটুকু কষ্ট পাইলে একটা মানুষ মরার আগে এরকম আবদার করতে পারে ??? ভাই সিরিয়াসলি একটা কথা বলি, প্রবাসীরা ভোগ- বিলাসিতা কিংবা নিজেদের সুখের জন্য বিদেশ আসেনি, ফ্যামিলির কথা চিন্তা করেই এসেছে।
দেশে যারা আছে তারা মনে করে প্রবাসী রা অনেক সুখে আছি, টাকার পাহাড়ে কিংবা টাকার গাছ নিয়ে বসে আছে, ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুধু টাকা পাঠাবো। কিন্তু আমরাতো বুঝি মাস শেষে টাকা পাঠানোর জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয়। আপনার ভাই, ছেলে, স্বামী, বাবার প্রবাস লাইফের একদিনের কষ্ট যদি কখনো দেখতেন, সাথে সাথে বলতেন বাড়িতে চলে আসতে প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব তবুও প্রবাসে থাকতে হবেনা।
প্রবাসীদের কষ্ট বুঝতে বেশি কিছু করতে হবেনা, “ভোররাত চার টায় ঘুম থেকে উঠে 45° সেলসিয়াস তাপমাত্রার সারাদিন রৌদে পুঁড়ে 15/16 ঘন্টা ডিউটি করে রাত নয় টায় রুমে গিয়ে কিচেনে গরম পাতিলের ছ্যাঁকা খেয়ে রান্না করার কষ্ট টা একটু আন্দাজ করুন। অবশ্যই, দেশে থেকে আপনারা কি করে বুঝবেন/ দেখবেন আর বলবেন। আপনারা তো প্রবাসীদের রক্তশুষে ভালোই মৌজে আছেন। আমরা যারাই প্রবাসে আছি, আমরা তো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী, হাজারো কষ্ট বুকে নিয়েও বলি অনেক ভাল আছি। কোন দিন বুঝতে দেইনি আপনার সুখের জন্য আমাদের জীবনের মূল্যবান দিন গুলোকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছি।
দেশের মানুষ গুলোর কাছে একটাই অনুরোধ, বিদেশে আপনার ফ্যামিলির যেই থাকুক বাবা, ভাই, স্বামী, বন্ধু, অন্যকোন সম্পর্কের আত্মীয় হোক তাদের সাথে একটু ভাল ব্যবহার করেন, তাদেরকে একটু ফোনে সময় দেন, একটু ভালো ভাবে কথা বলুন। তারা আপনাদের কাছে এরচেয়ে বেশি কিছু আশাও করেনা।কোনরকম মেন্টালি পেইন দিবেন না, কাছের মানুষের ছোট একটা কথাও ধনুকের তীরের মতো বুকে বিঁধে। সেসব ব্যথায় মেন্টালি সার্পোট কিংবা সান্ত্বনা দেওয়ার মতো এখানে ওনাদের কেউ নাই, সবরকম পেইন একাই নিতে হয়। প্রবাসী ভাই-বন্ধু, দেশ থেকে যে যাই বলুক না কেন, মনে কিছু নিবেন না। সামর্থ্য যতটুকু আছে ফ্যামিলির জন্য ততটুকুই করবেন।কোন রকম আঘাতে ভেঙ্গে পড়বেন না। আর কোন রেমিটেন্স যোদ্ধা / সহযোদ্ধা কে এভাবে আমরা হারাতে চাই না।
প্রবাসীর অসহ্য যন্ত্রনা প্রবাসী ছাড়া কেউ বুঝে না
একজন প্রবাসী আরো একজন প্রবাসীর সাথে যেভাবে জীবনের দুঃখ যন্ত্রনাভাগাভাগি করে আপন পরিবার পরিজনের সাথে
এই ভাবে প্রান খোলে কথা বলতে পারেনা। কারন মাত্র একটা “পিছনে রেখে আসা মানুষ গুলো সুখে থাকুক আমাদের কষ্টযেন ওদেরকে স্পর্শ করতে না পারে”
দেশের মানুষ শুধুই আমাদের সুন্দর সাস্থ্যআর হাসি মাখা মুখটাই দেখে, তাই আসল সত্যটা হাসি আর চোখে দেখা সুখের আবরনে ঢাকাপড়ে যায়।
আর এক ধরনের ভূ্ল ধারনা বদ্ধমূ্ল হয়। প্রবাসের বাস্তব চিত্র আমিযেভাবে দেখেছি তার সাথে দেশের মানুষের অনেক দ্বিমত থাকতে পারে, তবে যাদেখেছি তা কাগজ কলমের
সাহায্যে আপনাদের কাছে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো।তির্থের কাকের মত আশায় চেয়ে থাকা প্রবাসী জীবনের এক একটি দিন যা কাউকে সহজেবুঝাতে পারি না।
প্রবাসে টাকা আছে তবে সুখ যে নেই তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সবার ধারনা প্রবাসমানেই হলো সুখ আর সুখ। বাস্তব সত্য হলো আমরা নামে মাত্র শুধু
বেঁচে থাকিতবে বেঁচে থাকার স্বাদ আমাদের ভাগ্যে নেই। ভালোবাসাহীন জীবন নিয়ে বুক ভরাকষ্টের পাহাড় নিয়ে সুখের আশে পাশেও যাবার ভাগ্য হয় না আমাদের।
মাঝে মাঝেমনে হয় আমরা বেঁচে নেই যাকে বলে জিন্দা লাশ। আমরা প্রবাসীরাও এক একটাজিন্দা লাশ। যে সুখের আশায় রক্ত বাঁধনের মানুষ গুলোকে
পিছনে রেখে একদূর পথপাড়ী দিলাম কিন্তু সুখের মুখ দেখা হলো না।
বুক ভরা শুন্যতার শুন্যস্থান সঠিক ভাবে পুর্ণ হলোনা। কষ্ট আর হাহাকারবুকে নিয়ে সুখের আশায় বৃথা এই দৌড় ঝাঁপ দিতে দিতেই আমাদের জীবনে প্রদীপনিভে যায়।
(প্রবাসে কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের মত অসুখী নয়, তাদের টাকাপয়সা সবই আছে তবে ওরা সংখ্যায় খুবই কম ওদের কথা আলাদা।
আবার এই সুখীমানুষের অসুখের কাহিনীরও শেষ নেই) টাকা পয়সা সব সময় অসুখীর মূল বষ্য নয়।জীবনে টাকার প্রয়োজন তা আমি অস্বীকার করবো না
জীবনে টাকার প্রয়োজন আছে, জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজাতে হলে টাকা অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। টাকা যেআবার সব সমস্যার সমাধান তাও স্বীকার করবো না।
যেখানে মানুষের প্রয়োজনসেখানে টাকা একেবারে অর্থহীন হয়ে যায়। জীবনে সুখী হবার জন্য হিসাবের কিছুবিষয় আছে আমাদের জ়ীবনে প্রতিফলিত না হলে আমরা সুখের মুখ দেখতে পাই না।প্রবাসীরা কোন সময় পরিপূর্ন সুখী হবার স্বপ্ন দেখে না।
আমাদের চাহিদা একেবারে সিমীত, পরিবার পরিজন নিয়ে এক চিলতে হাসি ভাগাভাগিকরে একই ছাদের নিচে হাতে হাত ধরে বসবাস করা।
সুখে দুঃখে ভালোবাসার মানুষেরবুকে মাথা রেখে আগামীদিনের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসআজ আমরা প্রবাসী, হিসাবের সুখটুকু আমাদের ভাগে আর পড়ে না।
কাংগালের মতমানুষের সুখ দেখে দেখেই বেঁচে থাকতে হয়, চোখের জলে বুক ভাসাতে হয় দিনের পরদিন রাতের পর রাত।
অনিশ্চয়্তার মাঝে কেটে যায় আমাদের জীবনের এক একটি দিন রাত বড়ো অবহেলায়বড় অনাদরে। বুকের মাঝে সমাহীত কষ্ট গুলো বুকের মাঝেই কেঁদে কেঁদে মরে।
আমাদের চারপাশে শান্তনা দেবার কেউ নেই, আমাদের মা নেই ভাই বোন কেউ নেই যারসাথে এক দুঃখ কষ্টের কথা বলবো। সারাদিন কাজ শেষে বাসায়
ফিরে যখন শুন্য চারদেয়ালের মধ্যে রাত পোহাতে হয় তখন শুরু হয় কাংখীত জীবনের চুলছেড়া হিসাবকিতাব।
যোগ বিয়োগের হিসাব আর মিলে না, বড় ধরনের গড়মিল দেখা দেয়, হাহাকারভরা অশান্ত মন হু হু করে কেঁদে উঠে গন্ড বেয়ে যন্ত্রনার বিষাক্ত জল ঝরতেথাকে।
যন্ত্রনা ভূ্লে থাকার এই সহজ উপায় প্রতিটি প্রবাসী ভাই বোন বেশ ভালোকরে রপ্ত করেছেন যা অনেকেই জানে না ।
ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রেখে হাসির মুখোস পড়ে বলতে হয় ভালো আছি মা, তোমরাও ভালো থেকো।
চোখে কান্না অবৈধ প্রবাস জীবনের ‘গল্প’
মেয়ের বয়স ২০ বছর হলেও তাকে কখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি মাহতাব মিয়ার (ছদ্মনাম)। উভয়পক্ষে শুধু ছবি দেখেই বাবা-মেয়ের পরিচয়-সম্পর্ক।একদিন মুখে দিগন্ত ছড়ানো হাসি নিয়ে সেই মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা পাঠাতে ব্যাংকে আসেন মাহতাব।আমি তখন মালয়েশিয়ার অগ্রণী রেমিটেন্স হাউজে পার্ট টাইম চাকরি করি পড়াশোনার ফাঁকে। প্রতিদিন বাংলাদেশি শ্রমিক, চাকরিজীবীদের টাকা পাঠাই দেশে আত্মীয়দের কাছে।অনেক গল্প, অনেক কষ্ট, অনেক আনন্দের কথা টাকাগুলোর সঙ্গে আসে-যায়। এর মধ্যে এমন দুই-একটা গল্প যেন গেঁথে যায় আমাদের মনে।
মাহতাব মিয়া ২০ বছর আগে মালয়েশিয়া এসেছিলেন অবৈধ পথে। দেশ ছাড়ার সময় সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে আসেন তিনি।
এরপর মেয়ে জন্মেছে, বড় হয়েছে, স্কুলে পড়াশোনাও করেছে। একসময় ভাল একটা সম্বন্ধ এসে বিয়েও ঠিক হয়েছে।
যে বাবার প্রবাসের রোজগারে এই সব সম্ভব হচ্ছে সেই বাবাকে মেয়ে কোনও দিন সামনাসামনি দেখেনি।
টাকা দিতে এসে মাহতাব বলেন, মেয়ের বিয়ের খবরে তিনি যে আনন্দ অনুভব করছেন তাতে নিজের এতদিনের কষ্ট যেন ভুলে গেছেন।
এই ঘটনার প্রায় বছরখানেক পর বৈধ কাগজ হাতে পেয়ে দেশে ফেরেন মাহতাব, যখন তার মেয়ে ছিলেন সন্তানসম্ভবা।
ঠাণ্ডু মিয়ার বয়স চল্লিশের কোঠায়। ১৮ বছর আগে এসেছিলেন মালয়েশিয়ায় অবৈধপথে। পরের আঠারোটা বছর মুখ বুজে কাজ করে গিয়েছেন।
জেলে যাওয়ার ভয় আর কষ্টের কাজ মাথায় নিয়ে মাসে মাসে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন।
নিজের জীবনের স্বর্ণ সময় পার হয়ে যাওয়ার পর একদিন বৈধ কাগজ হাতে আসে। কাছের বন্ধুরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে ঠাণ্ডুকে দেশে পাঠান বিয়ে করাতে।
এর কিছু দিন পর আবার তার বন্ধুরা ব্যাংকে আসেন। ঠাণ্ডু বিয়ে করছে; সবাই মিলে টাকা তুলে পাঠান বিয়ের উপহার হিসাবে।
দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা। মালয়েশিয়াতে কর্মরত প্রবাসীরাও তার অংশীদার।
বৈধপথে এখানে কাজ করতে আসার নিয়ম ও সুযোগ- সুবিধার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা না
থাকায় অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমান বিদেশে, যার পরিণতিতে অমানবিক জীবনযাপন করতে হয় অনেককে।
প্রবাস জীবনের সুখ-দু:খ
যারা নিজ দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমায় তাদের প্রত্যেকের পিছনে থাকে একটা গল্প, অবশ্যই সব যে দুঃখের গল্প তা নয়।
প্রবাসীদের নিয়ে আছে অনেক কল্পনা/জল্পনা। বাংলাদেশে যখন ছিলাম, বলাই বাহুল্য নিজেরও সীমাহীন ভুল ধারণা ছিল উন্নত বিশ্বে থাকা প্রবাসীদের নিয়ে (অন্তত টাকা-পয়সা নিয়ে)।
নিজে এই বিভুঁইয়ে নেমে বিভিন্ন সময় প্রচণ্ড বৈরী সময়ের মুখোমুখি হয়েছি, ধীরে ধীরে জেনেছি জীবনের আরো অনেক কঠিনতম সত্য।
জেনেছি মধ্যবিত্ত সংসারের টানাপোড়েনে থাকা যে ছেলেটিকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত মা-বাবা আগলে রেখেছে পারিবারিক আবহে, মা-বড় বোন আদর করে
হয়তো কোনদিন এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে দেয়নি, ঘুমুতে যাওয়ার আগে টানাতে হয়নি কোনদিন মশারীটাও..
সেই ছেলেটিকে কাজ করে পড়ালেখা করতে হয়, নিজের খাবার নিজেকেই জোগাড় করতে হয়।
যে ছেলেটি অল্প কিছু টাকা নিয়ে চলে আসে এই পরবাসে সেই ছেলেটির অনেক সময় কাজের অভাবে হয়তো না খেয়েও থাকতে হয় দুই/এক বেলা।
কারো কারো হয়তো সময় মত একটা কাজও জোগাড় করা হয়ে উঠে না, সে যে এই কথা স্বদেশে নিজের পরিবারকে জানাবে তারও উপায় থাকে না অনেক সময়।
যে মেয়েটিকে পরিবার তেমন কোন কাজই শেখায়নি, সেই মেয়ে বাইরে এসে শুধু কাজের প্রয়োজনে যখন কোন ক্লিনিং জব করে স্বাভাবিকভাবেই তার
উপর যে মানসিক চাপ যায় শুধু একটা বাংলাদেশী মেয়ে হিসেবে, সেটা হয়তো তার পরিবারের কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব হবে না বা সেই মেয়েটির পক্ষে প্রকাশ করাও হয়ে উঠে না কোনদিন।
এটা একটা কাজ, এই উপলব্ধি হতে কারো কারো লেগে যায় অর্ধ যুগ।
এখানে ভালো লাগা বলতে কঠোর পরিশ্রমের দিন শেষে ”রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা স্বস্তিময় আরাম আয়েশ” ”’জীবন থেকে কোনো সময় অযথাই নষ্ট না হয়ে যাওয়া
” ”সপ্তাহান্তে প্রবাসী বন্ধুদের সাথে খাওয়া-দাওয়া-আড্ডা-ধুম” ”জোর করে আনন্দ, অনেকটা ফুল ছাড়াই বসন্ত এমন করে ভাবার চেষ্টা”!!!
তবে ব্যক্তি বিশেষে প্রবাসীদের না বলা কষ্টের তালিকাটা একটু বেশীই লম্বা, অনেক বেশী পরিশ্রম, সময়ের সাথে ছুটে চলতে চলতে ক্লান্তি
দেশে থাকা পরিবারের কাছে প্রতি বছর যেতে না পারা, সময় মত টাকা না পাঠাতে পারা, গাড়ি হলে বাড়ির চিন্তা
বাড়ি হলে ঘুরাঘুরির চিন্তা, একের পর এক লোন পরিশোধের চাপ, খুব কষ্টের কোন মুহূর্তেও কাছের কোন প্রিয় মুখ কাছে না থাকা, দেশে সময় মতো ফোন করতে না পারা,
কখনও খুব কাছের মানুষ হারানোর খবর পেয়েও কিছু করতে না পারা, চারপাশে থাকা অনেকেই পছন্দ না হলেও চেপে যাওয়া
সময়ে খুব কোমল অনুভুতিগুলোই ভোঁতা হয়ে যাওয়া বা এর মাঝেই হয়তো হঠাৎ আবিষ্কার করা কাছের মানুষেরা ভুল বুঝে বসে আছে দেশে!
ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করতে চাই খুব প্রিয় আর কাছের মানুষেরা যোগাযোগ নিয়মিত না হলেও ভুল বুঝবে না হয়তো
ঠিক বুঝে নেবে আপনার আমার সীমাবদ্ধতাগুলো। তবে বাংলাদেশে যাদের জীবন অনেকটাই কাঙ্খিত, যেসব ছেলেরা মা-বাবাকে এক
সংসারে রাখার মত অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছেন, তারা যদি সবটুকু আবেগ মায়া-মমতা আর যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তাদের বয়স্ক মা-বাবাদের জীবনকে একটু স্বস্তি বা সুখ দিতে
পারেন, সেটাই হয়ত দূরে থাকা অন্য দুর্ভাগা ভাই-বোনের জন্যে এক টুকরো সুখের সংজ্ঞা হতে পারে।
বাংলাদেশের মেয়েদের তো বাস্তবতা মা-বাবাকে ছেড়ে অন্য অপরিচিত কিছু মানুষকে ঘিরেই নুতন ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তোলা।
সেই মেয়েরা যদি নতুন সংসারের নতুন মা-বাবা’র প্রতি সবটুকু সদয় থাকার ব্যাপারে সবটুকু আন্তরিক হয়ে থাকার চেষ্টা করে
তাহলেও হয়তো জীবনের শেষ সময়ে থাকা বাংলাদেশের সব মা-বাবা’রা ভালো থাকতো, আর জীবনের প্রয়োজনে দেশের বাইরে থাকা জীবনের ঘূর্ণিপাকে পর্যুদস্ত কিছু
মানুষ একটু ভরসা নিয়ে একটু ভালো থাকতে পারতো; আরো একটু বেশি উৎসাহ নিয়ে আরো একটু বেশী কষ্ট করে হলেও দেশে
থাকা পরিবারের জন্যে অন্তত আর্থিক সচ্ছলতার জন্যে কাজ করতে পারে নির্ভার হয়ে।
বাংলাদেশে থাকা সবাইকে অনুরোধ, কাছে থাকা মা-বাবা’কে যেভাবেই হোক কিভাবে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়
সজীব আর সুন্দর করে ভাবতে হয়, জীবনকে শুধু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দেখতে হয় এবং ভিতর থেকে সব পরিস্থিতিতে শক্ত থেকে নিজের
পায়ে চলতে পারার মত জীবনের আশির্বাদ’টা ধরে রাখা উচিত, সেটা একটু ধৈর্য্যের সাথে বুঝিয়ে দিন তাঁদেরকে, এটাই তাঁদের জন্যে অনেক বড় একটা পাওয়া হবে।
(দূরে থাকা মা-বাবা’র জন্যে ভীষণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে আজ হৃদয়ে, কিচ্ছু করতে পারলাম না তাদের জন্যে, কিচ্ছু না.. সেই রক্ত দিয়েই এই লেখা)!!!
সংগ্রামী জীবন প্রবাসীদের
দেশে বেকারত্বের কারনে ৭৮ লাখের ও বেশী বাংলাদেশী আজ প্রবাসে কাজ করছে। তাদের বেশীর ভাগ অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছে।
তাদেরকে অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমরা প্রবাস জীবন সংগ্রামে কঠিন পরিণতির শিকার হয়ে জীবিকার প্রয়োজনে
একটুকরো সোনালী স্বপ্নের প্রত্যাশায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মাতৃভূমি সোনার বাংলা থেকে প্রবাসে পাড়ি
জমায়,আত্ম-প্রত্যয়ের দৃঢ়তায় সুস্থ ও সুন্দর জীবন গড়ার সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
এভাবেই সোনালী স্বপ্নের ঘোড়ায় সোয়ার হয়ে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী আজ মা, বাবা, ভাই, বোন স্ত্রী, কন্যা, পুত্র, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলকে ছেড়ে প্রবাসী জীবন বেছে নিয়েছে।
বহির্বিশ্বের যে যে এলাকায় বাংলাদেশীরা পাড়ি জমাচ্ছে, তন্মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কবে কখন বাংলাদেশীরা লুহিত
সাগর ডিঙ্গিয়ে এ ধুসর মরুদ্যানে পাড়ি দিয়েছিল তার সঠিক তথ্য যদিও আমার নিকট নেই, তবু এতটুকু বলা চলে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের ভীড় দিন দিন কমতে শুরু করছে।
প্রবাসীরাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, শরিরের রক্ত পানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অবদান রাখছে।
কিন্তু এ অবদান রাখার বিনিময়ে প্রবাসীরা না পরিবার পরিজন থেকে আস্থা অর্জন করতে পারছে, না সরকার থেকে উল্লেখ করার মত কোন সহযোহিতা-সহানুভূতি পাচ্ছে, না প্রবাসে ইজ্জত মান
সম্ভ্রম নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার অর্জন করতে পেরেছে। এসব কিছুর বিনিময়ে খুজে আনতে চায় শান্তি ও
স্বচ্ছলতা নামক সোনার হরিণকে। বছরের পর বছর অনায়াসে কাটিয়ে দেন প্রবাসী হিসেবে।
বাংলাদেশিরা অপরাদ করার কারন হচ্ছে। অধিক রিক্রোটমেন্ট চার্জকে আমি অন্যতম কারন বলে মনে করি...যেখানে ভারত থেকে একজন
শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য আসতে মাত্র ৩৫,০০০ থেকে সবোর্চ্চ ৫৫,০০০ রুপি লাগে সেখানে বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক আসতে বর্তমান প্রায় ৫-৭ লক্ষ টাকা লাগতেছে...এখন একজন
শ্রমিক ধার দেনা করে কিংবা ভিটা-মাটি বিক্রি করে এখানে এসে যখন কাঙ্খিত মাত্রায় উপার্জন করতে না
পারে তখন অপরাধ করতে অনুপ্রানিত হয় । যেটা নিন্দনীয় মনে হচ্ছে।অনেকেই এরকম আছেন যারা মনে করে –
এত টাকা খরচ করে বিদেশে এসেছি, টাকা রোজগার করার জন্য। সুতরাং যে কোন উপায়ে টাকা নিজের পকেটে আসলেই হলো। তা কার টাকা, কিভাবে কোথ্থেকে আসল
বৈধ না অবৈধ, এটার জন্য কোন জবাদিহি করা লাগবে কি না – এসব যেন কোন দেখার’ই বিষয় না।
অবশ্য এটা আমাদের একটি প্রধানতম জাতীয় ব্যাধিও বটে, যা সংক্রমনের মাধ্যমে কম বেশী সবার মধ্যেই দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার নাম দুর্নীতি। দেশে জাতীয় পর্যায়ে যেমন লুটেপুটে খাওয়ার একটা মহোৎসব চলে আসছে
প্রবাসে এসেও তাদের বংশবদরা যেন সেই এক’ই ধারা বজায় রাখার মহড়ায় নেমেছে। এধরণের দুর্নীতি থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তবে প্রত্যেক বাংলাদেশী যে যেখানেই থাকুক না কেন, তাদেরকে সে দেশের নিয়ম নীতি, আইন শৃঙ্খলা এবং আদব কায়দা সম্পর্কে প্রথমে
ভাল ভাবে জেনে নিতে হবে এবং অতি গুরুত্বের সহিত সব বিষয়গুলি পালন করতে হবে। হযরত আলী (রাঃ) নিজ পুত্র হুসাইন (রাঃ) কে নসীহত করতে গিয়ে বলেছেনঃ " হুসাইন!
যদি তুমি কোন অপরিচিত শহরে যাও, তাহলে সেই শহরবাসীর আদব কায়দা সম্পর্কে সতর্ক থাকবে।
" এভাবেই যদি সবাই চলে তাহলে প্রবাসীদের দ্বারা দেশের মান ক্ষুন্ন হওয়ার কোন কারন থাকবেনা।
সরকারকে বলব আমাদের সব প্রবাসী শ্রমজীবি ভাইদের কষ্ট জড়ানো ঘামের মূল্যায়ন যাতে কষ্টের আড়ালে হারিয়ে না যায় সেজন্য সময় থাকতেই সবাইকে সচেতন হতে হবে।
পদক্ষেপ নিতে হবে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের ভূমিকা সঠিক ভাবে তুলে ধরতে হবে।
প্রবাস জীবনের কিছু বাস্তব কথা
• জীবন এত ক্ষণস্থায়ী বলেই মাঝে মাঝে সবকিছু এমন সুন্দর মনে হয়।
• বেশি দিন ভালবাসতে পারে না বলেই ভালবাসার জন্য মানুষের এত হাহাকার।
• তুমি যদি কাউকে হাসাতে পার, সে তোমাকে বিশ্বাস করবে। সে তোমাকে পছন্দও করতে শুরু করবে।
• হৃদয়ের গভীরে যার বসবাস, তাকে সবকিছু বলতে হয় না। অল্প বললেই সে বুঝে নেয়।
• মানবহৃদয় আয়নার মত। সে আয়নায় ভালবাসার আলো পড়লে তা ফিরে আসবেই।
• কাগজে-কলমে কোন সৌন্দর্যের যথার্থতা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সৌন্দর্যের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াতে হয়।
• সুখী হওয়ার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে মানুষের। এ জগতে সবচেয়ে সুখী হচ্ছে সে, যে কিছুই জানে না। জগতের প্যাঁচ বেশি বুঝলেই জীবন জটিল হয়ে যায়।
• সব শখ মিটে গেলে বেঁচে থাকার প্রেরণা নষ্ট হয়ে যায়। যেসব মানুষের শখ মিটে গেছে তারা অসুখী।
• যার কাছে ঘুম আনন্দময় সে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। অতি সামান্য জিনিসও মানুষকে অভিভূত করে ফেলতে পারে।
• খুব বেশি সুন্দর কোন কিছু দীর্ঘস্থায়ী হয় না। খুব ভাল মানুষরাও বেশি দিন বাঁচে না। স্বল্পায়ু নিয়ে তারা পৃথিবীতে প্রবেশ করে।
• যখন কেউ কারো প্রতি মমতা বোধ করে, তখনই সে লজিক থেকে সরে আসতে শুরু করে। মায়া-মমতা-ভালবাসা এসব যুক্তির বাইরের ব্যাপার।
• বেশি নৈকট্য দূরত্বের সৃষ্টি করে। প্রিয়জনদের থেকে তাই দূরে থাকাই ভাল। সম্পর্ক স্থির নয়, পরিবর্তনশীল।
• অতি দ্রুত যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, উষ্ণতা কমে যেতেও তার সময় লাগে না।
• স্মৃতি সুখ বা দুঃখের যাই হোক, সবসময়ই কষ্টের। দুঃখ-কষ্ট-বেদনা ছড়াতে হয় না।
ছড়িয়ে দিতে হয় আনন্দ। দুঃখ ভুলে যাওয়া কঠিন। তবে সুখস্মৃতি মনে রাখা তার চেয়েও একটু বেশি কঠিন।
• মোহের কাছে পরাজিত হওয়া ঠিক নয়। কিন্তু খুব কম মানুষই মোহযুদ্ধে অপরাজিত থাকে।
• সুন্দর স্বপ্ন আফসোসেরও কারণ। বাস্তবতা যতই মধুরই হোক, স্বপ্নের মত হয় না।
স্বপ্ন পূরণ হতেই হবে সেটা কিন্তু সত্যি নয়। স্বপ্ন দেখতে হয় আর সেটার জন্য কাজ করতে হয় - এটা হচ্ছে সত্যি।
• প্রতিজ্ঞা করার আগে তাই একটু হলেও ভাবা উচিত। মিথ্যা দিয়ে হাসানোর চেয়ে সত্য বলে কাঁদানোই শ্রেয়।
• চোখের জলের মত পবিত্র কিছু নেই। এই জলের স্পর্শে সব গ্লানি-মালিন্য কেটে যায়।
• কিছু কথা শুধু নিজের ভেতর রাখো। দ্বিতীয় কেউ জানবে না। কোনভাবেই না। দুই জন জানলে বিষয়টা গোপন থাকে।
তিনজন জানলে নাও থাকতে পারে। আর চারজন জানা মানে সবাই এক সময় জেনে যাবে।
• রহস্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। কৌতূহলেরও জন্ম দেয়।
• বলার আগে শুনে নাও, প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে চিন্তা কর, সমালোচনার আগে ধৈর্য্য ধর, প্রার্থনার আগে ক্ষমা চাও, ছেড়ে দেয়ার আগে চেষ্টা কর।
• না চাইতেই যা পাওয়া যায়, তা সবসময় মূল্যহীন।
• পায়ের আলতা খুব সুন্দর জিনিস। কিন্তু আলতাকে সবসময় গোড়ালীর নিচে পড়ে থাকতে হয়, এর উপরে সে উঠতে পারেনা।
• অতিরিক্ত যেকোন কিছু পতন নিয়ে আসে। সবকিছু তাই নির্দিষ্ট সীমায় রাখাই শ্রেয়।
• চুপ থাকা খুব সহজ একটা কাজ। পারস্পরিক বহু সমস্যার সমাধান শুধু চুপ থাকলেই হয়ে যায়।
কিন্তু মানুষের সবচেয়ে বড় অযোগ্যাতা হচ্ছে সে মুখ বন্ধই রাখতে পারে না, অপ্রয়োজনে অনর্গল বকে যায়।
• দুর্নামকারীরা সাধারণত আড়ালপ্রিয়। সামনে ভাল মানুষ সেজে বসে থাকে।
• বুদ্ধিহীনরা তর্কবাজ হয়। নিজের বুদ্ধির অভাব তর্ক দিয়ে ঢাকতে চায়।
• বিচার যখন থাকে না, সমস্যার সমাধানও হয় না। সব সমস্যা বরং পুঞ্জীভূত হয় আরও। আমাদেরও তাই হচ্ছে।
• পরিস্থিতিই মানুষকে তৈরি করে। পরিস্থিতি যখন বদলে যায়, মানুষও তখন পাল্টে যায়। মানুষ আসলে জলের মত। পাত্রের সঙ্গে সঙ্গে সে তার আকার বদলায়।
• এই পৃথিবীর প্রতিটি দিনই সম্ভাবনার। সম্ভাবনাময়ী এখানে আসলে আমাদের প্রতিটি মুহুর্তই।
• মানবজাতি ধীরে ধীরে সব সুযোগকেই উপলদ্ধি করবে। অবশ্যই সব সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিবে।
• উপকার করার পর 'করেছি' বলার চেয়ে সাহায্য না করাই শ্রেয়।
• জীবনের জটিল ও মূল বিষয়গুলো মানবজাতির কাছে রহস্যাবৃত হয়ে থাকে। এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে?
• চলতে শুরু না করলে পথ হারাবার ভয় থাকে না। কিন্তু তাতে গন্তব্যে পৌছানোর আশাও ফুরিয়ে যায়। মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ কারও কাছ থেকে বিদায় নেয় না।
মায়া নামক ভ্রান্তি তাকে ত্যাগ করে। গ্রাস করে তখন ভয় নামক অনুভূতি। মৃত্যু ভয়াবহ নয়, কুৎসিতও নয়। এর সৌন্দর্য জন্মের চেয়ে আসলে কোন অংশে কম নয়। এই অংশের সাথে পরিচিত নই বলেই আমরা একে এত ভয় পাই।
• ভয়াবহ বিপদ কিংবা দুর্যোগের সামনে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। একে অন্যের কাছে আশ্রয় খোজেঁ, আশ্রয় খোঁজে প্রকৃতির কাছে। সবাই দাঁড়িয়ে যায় একই কাতারে।
বৈষম্য ও অনাচার বেষ্টিত এই আবাসভূমি হয়ে যায় সাম্যবাদের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। বড় ধরণের বিপদ-আপদের প্রয়োজন তাই পৃথিবীতে এখনও আছে।প্রতিটি বিপদের দুটি অংশ থাকে। বিপরীত অংশটি হল জীবন।
• নগদ টাকা আলাদীনের চেরাগের মত। হাতে থাকলে পৃথিবী নিজের হয়ে যায়।
• পথ কখনও শেষ হয় না। দীর্ঘ ভ্রমণের পর গন্তব্যে পৌছেও কেউ স্থির থাকে না। ছুটতে শুরু করে অন্য কাজে, অন্য পথে, অন্য আরেক লক্ষ্যস্থলে।
• এক একটি দিন শেষ করে আমরা এগুতে থাকি চুড়ান্ত যাত্রার পথে। মানবমৃত্যুই পথের সমাপ্তি। নিরন্তর ছুটে চলা মানুষের শেষ গন্তব্য। সবাই মারা যায়। কিন্তু সবাই চলে যায় না।
• নিঃস্বার্থ কর্মী মানুষরা মৃত্যুর পরও থেকে যায়, কর্মপূণ্যে থেকে যায় মানুষের মনে - যুগের পর যুগ ধরে।
• সৎ থাকো। অবশ্যই সুখী হবে।
প্রবাস জীবনের দু:খের নানাকাহিনী
মানুষ আমাকে মনে করে আমি খুব শক্ত মেয়ে৷ কিন্তু মানুষ জানে না ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছি৷
আমি গোপনে অশ্রু ফেলি, কিন্তু কাউকে আমি আমার কান্না দেখাতে চাই না'৷ কথাগুলো বললেন সুনারশি৷ ইন্দোনেশিয়ার এক নারী৷
এটা অবশ্য তার আসল নাম নয়৷
১৫ বছর আগে৷ সুনারশির বয়স তখন ১৭৷ খুব গরিব ঘরের মেয়ে৷ স্কুলের ফি দেয়ার মত কোন টাকা না থাকায় এক সময় স্কুলের গন্ডি আর পেরুতে পারলেন না৷ সেই সময় তার চিন্তা এলো বিদেশে যাবার৷
অভিবাসী শ্রমিকদের নানা সাফল্যের কথা শুনে তিনিও সিদ্ধান্ত নিলেন এই কাজ করবেন৷ চলে গেলেন একটি প্রশিক্ষণ কোম্পানিতে৷ সেখানে গিয়ে গৃহকর্মের প্রশিক্ষণ নিলেন৷ সংগ্রহ করলেন পাসপোর্ট৷
একদিন ঐ কোম্পানি জানালো এক আরব তার বাসার কাজের জন্য এমন একজনকে খুঁজছেন যে হবে একজন কুমারী, বাদামী বর্ণের গায়ের রং, লম্বা৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুনারশি বললেন:
‘আমি অন্য আরও অনেকের সঙ্গে এই চাকুরির জন্য তালিকাভুক্ত হলাম৷ তারপর আমাদের নেয়া হলো ইন্টারভ্যু৷
একশ মেয়ের মধ্যে আমাকে পছন্দ করা হলো৷ আমার বন্ধুরা আমার নির্বাচিত হওয়ায় ঈর্ষান্বিত হল!
নির্বাচিত হবার দুই সপ্তাহ পর আমাকে এক আরব নিয়ে গেলেন, তার বাড়িতে, সৌদি আরবে৷
এখান থেকেই শুরু হলো দু:স্বপ্নের৷ আমাকে যে ব্যক্তি তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন, সে আমার আসল নিয়োগকর্তা নয়৷ আসল নিয়োগকর্তা তার পক্ষাঘাতগ্রন্থ বাবা৷
তার শরীরের নিম্নাংশ অবশ৷ সেই বৃদ্ধ আমাকে বললো ভাইব্রেটরের সাহায্যে তার পুরুষাঙ্গে মালিশ করতে৷ আমি বললাম, না৷ আমি পারবো না৷'
ক্ষেপে গেলো ঐ ব্যক্তি৷ নানা ভয়ভীতি দেখালো৷ তাকে ঐ বাড়িতেই বন্দি করে রাখা হলো৷
কেবল ঐ ব্যক্তিই নয়, তার নয় পুত্রও পালাক্রমে তাকে দিয়ে মালিশ করাতো৷ করতো নানা যৌন অত্যাচার৷ এর পাশাপাশি তাকে রান্নাও করতে হতো৷
একদিন সুযোগ পাওয়া গেলো সেই বাড়ি থেকে পালানোর৷ ঘরের দরজার তালা লাগানো ছিল না৷ বাড়ির পিছনে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই ধরা পড়ে গেলো সে৷
আসলে এটা ছিল একটি ফাঁদ৷ তাকে এবার বিক্রি করে দেয়া হলো ১৩০০ ডলারে৷
‘আমি এবার কুমিরের মুখ থেকে পড়ে গেলাম সিংহের মুখের সামনে৷ নতুন এই ব্যক্তি আসলে একজন দালাল৷ যখন কোন খদ্দেরের মেয়ে প্রয়োজন হতো আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হতো৷
আমি হলাম এক যৌনদাসী৷ এক বছরেরও বেশি সময় আমার উপর যৌন অত্যাচার চালানো হয়৷ আমার সঙ্গে পশুপাখির মতো ব্যবহার করা হতো৷ কিন্তু আমার জন্য প্রচুর অর্থ নিতো সেই দালাল,'' বলেন সুনারশি৷
এক সময় সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে৷ ছয় মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান সুনারশি৷ তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নিজ দেশে৷ এখন সেই সুনারশির বয়স চল্লিশ৷ তিনি জানেন না তাঁর ভবিষ্যৎ!
ইউনিসেফের হিসাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাচার হওয়া ১ লাখ নারী শিশু এখন যৌনদাসীর জীবন কাটাচ্ছে৷
Comments
Post a Comment